পৃথিবীর দিকে আবার ধেয়ে আসছে পেল্লাই আকারের এক গ্রহাণু। সুইমিং পুলের আকারের এই গ্রহাণুটির আগামী ২৩ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
প্রাথমিক ভাবে নাসা জানিয়েছে, চলতি বছরে খোঁজ পাওয়া গ্রহাণুটির ২০৪৬ সালে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
নাসার তরফে গ্রহাণুটির নাম দেওয়া হয়েছে ২০২৩ডিডব্লু। নাসার অনুমান ২০৪৬ সালের প্রেমদিবসের দিন অর্থাৎ, ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রহাণুটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়়তে পারে।
নাসা বলছে, ২০২৩ডিডব্লু গ্রহাণুটির আকার একটি সুইমিং পুলের আকারের। পৃথিবী থেকে গ্রহাণুটির দূরত্ব প্রায় ১৮ লক্ষ কিলোমিটার।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ ডিডব্লু গ্রহাণুর ব্যাস ৪৯.২৯ মিটার। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় ০.১২ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (এইউ)।
নাসার বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখনও এই গ্রহাণুটি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহাণুটির ধাক্কা না-ও লাগতে পারে।
নাসা জানিয়েছে, ২০২৩ডিডব্লু গ্রহাণুটির পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা ৫৬০ ভাগের এক ভাগ। যদিও বর্তমানে পৃথিবীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহাণুর তালিকা বা ‘টরিনো ইমপ্যাক্ট হ্যাজার্ড স্কেল’-এ এটি পয়লা নম্বরে রয়েছে।
‘টরিনো ইমপ্যাক্ট হ্যাজার্ড স্কেল’-এ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহাণুগুলিকে শূন্য থেকে দশের মধ্যে নম্বর দেওয়া হয়। নম্বর শূন্য হলে পৃথিবীর জন্য সেই গ্রহাণু একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
নাসার ‘জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)’ বলছে, র্যাঙ্ক-১ এর অর্থ হল পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহাণুর সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও তা খুবই কম। পাশাপাশি, জনসাধারণের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলেও জেপিএল জানিয়েছে।
নাসা জানিয়েছে, যদি ২০২৩ডিডব্লু পৃথিবীর বুকে আছড়েও পড়ে, তা হলেও এর প্রভাব ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া গ্রহাণুর মতো হবে না।
তবে ২০২৩ডিডব্লু গ্রহাণুটিকে ‘সিটি কিলার’ হিসাবে দেখছে নাসা। অর্থাৎ, এটি একটি ছোটখাটো শহরকে সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
২০২৩ডিডব্লু-এর অর্ধেকেরও কম আকারের একটি উল্কা ১০ বছর আগে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কের বুকে ধেয়ে এসেছিল। যার অভিঘাতে ৫১৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা বাড়িগুলির জানালার কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন।
কোনও গ্রহাণুর পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে তা প্রতিরোধ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
গত অক্টোবরে নাসা নিশ্চিত করেছে যে, মহাকাশ সংস্থার তরফে এমন মহাকাশযান তৈরি করা হয়েছে, যা গ্রহাণুগুলির গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
আছড়ে পড়ুক না পড়ুক, নাসা গ্রহাণুটির উপর ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে। কোনও রকম আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তারও প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।