গত শনিবার রাতে মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপি গোষ্ঠীর নেতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে। মৃত্যুর সময় বাবার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। এই খুনের ঘটনায় দুই আততায়ী এবং এক চক্রীকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। রবিবারই তাঁদের মুম্বইয়ের এসপ্ল্যানেড আদালতে পেশ করা হয়।
১৯৫৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিহারের গোপালগঞ্জে জন্ম সিদ্দিকির। পরে মহারাষ্ট্রে চলে আসেন তিনি।
বাবা সিদ্দিকির আসল নাম জিয়াউদ্দিন সিদ্দিকি। তবে বাবা সিদ্দিকি নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে, ১৯৭৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন বাবা।
খুব অল্প বয়সেই ছাত্র এবং যুব কংগ্রেসের অন্যতম মুখ হিসাবে জনপ্রিয়তা পান বাবা। বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে পড়ে যান। এর পর থেকেই তরতরিয়ে উত্থান বাবার। তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ‘প্রভাবশালী’ হিসাবে পরিচিত বাবা পরিচিত ছিলেন বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং তারকাখচিত পার্টির আয়োজন করার জন্যও।
২০১৩ সালে তাঁর পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় বলি তারকা শাহরুখ খান এবং সলমন খানের। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তাঁর সেই ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, অধুনা খুন হওয়া অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপি নেতার মোট সম্পত্তি, রাজনৈতিক কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী মোট ৭৬ কোটি টাকার মালিক ছিলেন বাবা। তবে জনশ্রুতি রয়েছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ এর থেকে অনেক বেশি।
২০১৮ সালে কেন্ত্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বাবার সঙ্গে যোগ থাকা ৪৬২ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। এর মধ্যে ছিল মুম্বইয়ের বুকে ৩৩টি অ্যাপার্টমেন্ট। বাবার বিরুদ্ধে বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগও উঠেছিল।
বাবা সিদ্দিকির হলফনামায় নগদ অর্থ, ব্যাঙ্কে জমা টাকা এবং একাধিক সংস্থায় বিনিয়োগ-সহ বিভিন্ন অস্থাবর সম্পত্তির উল্লেখ রয়েছে।
মার্সিডিজ় বেন্জ়ের মতো বিলাসবহুল গাড়ির প্রতি বিশেষ প্রেম ছিল বাবার। তাঁর গ্যারাজে ছিল বিভিন্ন নামীদামি গাড়ির সম্ভার।
সোনা এবং হিরের গয়নার প্রতিও আসক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর সংগ্রহে মোট ৩০ কোটির বহুমূল্য গয়না ছিল বলে অনুমান করা হয়।
১৯৭৭ সালে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক জীবন শুরু বাবার। প্রথমে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এবং পরে যুব কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯২ সালে তিনি মুম্বইয়ের পুর কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত হন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পদের ভারও বাড়তে থাকে। ১৯৯৯ সালে বান্দ্রা পশ্চিম বিধানসভার বিধায়ক হন বাবা। ২০০৪ এবং ২০০৯ সালেও ওই আসন থেকে জেতেন। তৎকালীন মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রীও হন।
পরে কংগ্রেসের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন।
বাবার স্ত্রীর নাম শেহজিন সিদ্দিকি। দম্পতির দুই সন্তান— কন্যা আরশিয়া সিদ্দিকি এবং পুত্র জিশান সিদ্দিকি। জিশান নিজে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং একজন বিধায়ক।