মৃত্যু হল বিশ্বের ‘সবচেয়ে দানবীয়’ বডিবিল্ডার হিসাবে পরিচিত ইলিয়া ‘গোলেম’ ইয়েফিমচিকের। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি।
গত ৬ সেপ্টেম্বর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন বেলারুশের বডিবিল্ডার ইলিয়া। হঠাৎই বুক চেপে মাটিতে বসে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী অ্যানা। অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করেন তিনি।
অ্যাম্বুল্যান্স আসার আগে পর্যন্ত ইলিয়ার বুকে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন স্ত্রী অ্যানা। পরে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ইলিয়া কোমায় চলে যান। গত বুধবার মৃত্যু হয় তাঁর।
বেলারুশের স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে অ্যানা বলেন, ‘‘আমি সব সময় প্রার্থনা করে গিয়েছি, আশা করেছি ইলিয়া সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি প্রতি দিন ওর পাশে ছিলাম। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। চিকিৎসক আমাকে জানান যে, ওর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে।’’
অ্যানা আরও বলেন, “এই কঠিন সময়ে যাঁরা আমার পাশে ছিলেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। এটা উপলব্ধি করলাম যে আমি এই পৃথিবীতে একা নই। অনেক মানুষ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’’
ইলিয়ার মৃত্যুতে পরিবার-পরিজনের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছেন তাঁর তামাম ভক্তকুল। উল্লেখ্য, বলিবিল্ডার হওয়া সত্ত্বেও কখনও কোনও পেশাদার প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি ইলিয়া।
বডিবিল্ডার হিসাবে ইলিয়ার পরিচিতি গড়ে ওঠে মূলত সমাজমাধ্যমে। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং শরীর নিয়ে কেরামতির ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতেন তিনি। আয়ও করতেন দেদার। অবিশ্বাস্য ক্ষমতার কারণে ইলিয়ার অনুরাগীরা তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য মিউট্যান্ট’।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীর চাঙ্গা রাখতে দিনে সাত বার খাবার খেতেন ইলিয়া। ১৬,৫০০ ক্যালোরি খাবার খেতেই হত তাঁকে।
ইলিয়ার খাদ্যতালিকায় প্রতি দিন থাকত আড়াই কিলোগ্রাম মাংস এবং ১০৮টি সুশি।
ইলিয়ার উচ্চতা ছিল ৬ ফুট ১ ইঞ্চি। ওজন ১৫০ কিলোরও বেশি। ছাতির মাপ ছিল ৬১ ইঞ্চি, হাতের গুলি ২৫ ইঞ্চি।
তবে ছোটবেলা থেকেই মোটেও হৃষ্টপুষ্ট ছিলেন না ইলিয়া। ১৫৪ কেজির ইলিয়ার এক সময় ওজন ছিল মাত্র ৭০ কেজি। ডাম্বেল তোলা বা ভারী ভারী মুগুর ভাঁজা তো দূর অস্ত্, ঠিক মতো পুশ-আপও করতে পারতেন না তিনি।
পরবর্তী কালে অভিনেতা তথা বডিবিল্ডার আর্নল্ড সোয়ার্ৎজ়েনেগার এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। মন দেন শরীরচর্চায়।
শরীরচর্চা নিয়ে ইলিয়া এতটাই মেতে ছিলেন যে, ২০০-২৫০ কিলো ওজন নিয়ে ‘বেঞ্চ প্রেস’ বা ৩০০ কেজির ওজন নিয়ে ‘ডেডলিফ্ট’ তাঁর কাছে জলভাত ছিল।
এক বার ইলিয়া বলেছিলেন, ‘‘আমার এই পরিবর্তন কয়েক বছরের কঠোর প্রশিক্ষণ এবং শৃঙ্খলার ফল। শরীরচর্চার সঙ্গে পুষ্টির দিকে নজর রাখাও সমান ভাবে জরুরি। আমার লক্ষ্য মানুষের মধ্যে নৈতিকতা জাগানো যাতে সকলে নিজেদের ভয়কে জয় করতে পারেন।’’
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েক জন খ্যাতনামী যুবা বডিবিল্ডারের মৃত্যু দেখেছে বিশ্ব। এর মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ বডিবিল্ডার নিল ক্যারি (৩৪) এবং ব্রাজ়িলের বডিবিল্ডার আন্তোনিও সুজা (২৬)।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঘর থেকে ক্যারির দেহ উদ্ধার হয়। দীর্ঘ দিন স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন তাঁর বাবা-মা। অন্য দিকে, একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কয়েক দিন পরেই গত ৩ অগস্ট হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুজার।
বেলারুশের বাসিন্দা হলেও বেশির ভাগ সময়ই চেক প্রজাতন্ত্র, দুবাই এবং আমেরিকায় থাকতেন ইলিয়া।