২০১৯ সালের ১৩ মার্চ। রাত প্রায় ১১টা। নিঝুম রাতে হঠাৎ বেজে ওঠে আথেন্স-ক্লার্ক কাউন্টি পুলিশ দফতরের একটি ফোন। ওয়াকিটকিতে নিয়মিত কথা আদানপ্রদান হলেও আমেরিকার জর্জিয়ার ছোট শহর আথেন্সের পুলিশ দফতরে এত রাতে ফোন আসা খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না।
দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরেন কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিক। উল্টো দিক থেকে শোনা যায় এক পুরুষকন্ঠ। তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন জিমি ঝং নামে।
স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়ে জিমি জানান, তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক হাজার ডলারের ক্রিপ্টোমুদ্রা চুরি হয়ে গিয়েছে। এমন অভিযোগ শুনে চমকে যান ওই পুলিশ আধিকারিক।
আথেন্সে চুরি, ছিনতাই, মারামারির মতো ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু ক্রিপ্টো জালিয়াতির অভিযোগ আথেন্স-ক্লার্ক কাউন্টি পুলিশ দফতরের কাছে নতুন ছিল।
ক্রিপ্টোর ঔজ্জ্বল্যের সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও কালো ছায়ায় থাকা অপরাধ জগতের থেকে অপরিচিত ছিল আথেন্স-ক্লার্ক কাউন্টি পুলিশ দফতর। ক্রিপ্টো সংক্রান্ত কোনও মামলারই তদন্ত তার আগে করেনি তারা।
কিন্তু কে ছিলেন এই জিমি? জিমির জন্ম চিনের সাংহাই শহরে। ছোটবেলাতেই আমেরিকায় আগমন হয় তাঁর। বেড়ে ওঠা জর্জিয়ায়।
ক্রিপ্টোর ব্লকচেন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে ‘ইন্টারনেট অফ সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (আইওএসটি) নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন জিমি। দীর্ঘ দিন ধরে ব্লকচেন নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্যই তিনি ওই সংস্থা শুরু করেছিলেন।
সংস্থা চালু করার পর ‘ইনিশিয়াল কয়েন অফারিং (আইসিও)’ পদ্ধতিতে তিন কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগও সংগ্রহ করেছিলেন জিমি। আইসিও হল বিনিয়োগকারীদের কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সির টোকেন বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করার একটি পন্থা।
আর সেই যুবা উদ্যোক্তা জিমিই পুলিশে ফোন করে সংস্থা থেকে হাজার হাজার ডলারের ক্রিপ্টোমুদ্রা চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানান। তদন্তে নামে পুলিশ।
তবে তদন্ত শুরু হতে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে কেউটে। জানা যায়, জিমির সংস্থার অন্দরেই বসে রয়েছে চোর।
তদন্ত আরও গড়াতে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সেই চোর আর কেউ নন, স্বয়ং জিমি।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, আইনি এবং আর্থিক জালিয়াতির একটি চক্রের কেন্দ্রে রয়েছেন জিমি।
পুলিশ এ-ও জানতে পারে নিজের সংস্থারই ওয়েবসাইট হ্যাক করেছিলেন জিমি। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৫১,৬৮০টি বিটকয়েন চুরি করেছিলেন।
পুলিশ হিসাব কষে দেখে, জিমি যে পরিমাণ বিটকয়েন চুরি করেছিলেন, তার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি ডলার।
জিমি সহজে ধরা পড়তেন না। কিন্তু একটি ছোট ভুল করে ফেলেন তিনি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সামান্য বিটকয়েন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠিয়েছিলেন জিমি। তদন্তকারীরা দেখেন, জিমি যে ক্রিপ্টো চুরির গল্প ফেঁদেছিলেন, ওই বিটকয়েন তারই অংশ।
ব্লকচেন ফরেন্সিক সংস্থা চেনএলিসিস পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার আগে জিমির সেই চুরি অধরা ছিল। চুরি প্রকাশ্যে আসতে গ্রেফতার হন জিমি।
ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিটকয়েন এবং হ্যাকিংয়ের অন্ধকার জগতেও আলোকপাত করেন তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, এক সময় পর্যন্ত জিমির করা চুরিই ছিল আমেরিকার ক্রিপ্টোকারেন্সির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাপের চুরি।