Akshata Krishnamurthy

‘তুই পারবি না’র বাধা টপকে ‘তুই-ই পারবি’! লালগ্রহে রোভার চালিয়ে ইতিহাস ভারতীয় তরুণীর

ছোটবেলা থেকেই রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন অক্ষতা কৃষ্ণমূর্তি। ১৩ বছর আগে সেই স্বপ্ন বুকে নিয়েই আমেরিকা আসেন অক্ষতা। আজ নাসায় বসে মঙ্গলের মাটিতে রোভার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩৪
Share:
০১ ১৬
Akshata Krishnamurthy becomes first Indian to operate a rover on Mars

এ যেন নিজেকে বিশ্বাস করার চির চেনা কাহিনি। ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসা স্বপ্নকে সত্যি করারও বটে। সেই সঙ্গে স্বপ্নের পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়ানোর উপাখ্যান বললেও কি ভুল বলা যায়? নাসার উচ্চপদস্থ আধিকারিক ‘রকেট সায়েন্টিস্ট’ অক্ষতা কৃষ্ণমূর্তির এগিয়ে চলার গল্প রূপকথাকেও হার মানাবে। ভারতীয় এই তরুণী নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন দেখান। স্বপ্নকে সত্যি করে দেখানোর হিম্মত ভরে দেন চুপসে যাওয়া বুকে।

০২ ১৬
Akshata Krishnamurthy becomes first Indian to operate a rover on Mars

এমন কত মানুষই আছেন, যাঁরা বিশ্বমঞ্চে নাম করেছেন। কিন্তু তাঁদের কোনও ভিত্তি ছিল না। সাজানো বাগানে পুষ্পদর্শন তাঁদের করা হয়নি। বরং আগাগোড়া লড়াই করতে হয়েছে এক ইঞ্চি এগোতেও। কখনও কখনও এগোনোর লক্ষ্যে দু’পা গিয়েও আবার তিন পা পিছিয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু দৌড় ছাড়েননি। ঘুরে দাঁড়িয়ে জগৎ জেতার যুদ্ধে দিনের শেষে তাঁরাই ‘সিকন্দর’। অক্ষতাও তেমনই। হাজার বাধা উপেক্ষা করে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার কাহিনিও সেই সিকন্দরের কথাই বলে।

Advertisement
০৩ ১৬
Akshata Krishnamurthy becomes first Indian to operate a rover on Mars

খুব ছোটবেলা থেকেই আকাশের দিকে চেয়ে মুগ্ধ হতেন অক্ষতা। স্বপ্ন ছিল, এক দিন আকাশের চরিত্রদের নিয়ে কাজ করবেন। নাসায় চাকরি করবেন। কিন্তু ছেলেবেলা স্বপ্ন দেখা আর বড় হয়ে সেই স্বপ্নকে সত্যি করা— এর মধ্যে ফারাক কয়েক আলোকবর্ষের। ছোট্ট অক্ষতা তা বুঝতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু বড় হওয়ার পথ তাঁকে বলে দিয়েছিল, সে লড়াই কতটা কঠিন হতে চলেছে।

০৪ ১৬

কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী নন অক্ষতা। জীবনের প্রথম দিন থেকে যে স্বপ্নকে সর্বস্ব দিয়ে লালনপালন করে এসেছেন, সেই স্বপ্নকেই অক্ষত অবস্থায় বাস্তবের রূপদানেও চূড়ান্ত সফল তিনি। আজ তিনি নাসার স্থায়ী চাকুরে। এহ বাহ্য, মঙ্গলের বুকে নাসার যে রোভার গড়গড়িয়ে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে, তার চাবিকাঠি এই ভারতীয় বৈজ্ঞানিকের হাতে।

০৫ ১৬

শুধু কি মঙ্গল? অক্ষতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছেন নাসার আরও একাধিক মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত ‘হাই ভোল্টেজ’ প্রকল্পের রূপায়ণে। আর তা করতে গিয়ে অক্ষতা হয়ে উঠেছেন প্রথম ভারতীয় নারী, যিনি নাসার ড্যাশবোর্ডে বসে মঙ্গলগ্রহে রোভারের পরিচালনা করলেন সফল ভাবে। যা এত দিন ছিল অভূতপূর্ব।

০৬ ১৬

নাসার উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলের মাটিতে রোভার নামিয়ে সরেজমিনে লালগ্রহের মাটির চরিত্র খুঁটিয়ে দেখা। প্রয়োজনে সংগ্রহ করা নমুনা। যে নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে বসে থাকা অক্ষতারা পরীক্ষানিরীক্ষা সারেন। সেই লক্ষ্যেই নাসার প্রয়োজন ছিল এমন একজন বৈজ্ঞানিক, যিনি দুনিয়ায় বসে মঙ্গলগ্রহে রোভার চালাতে পারবেন। এ অসাধ্যসাধন হল ভারতের তরুণী বৈজ্ঞানিকের মাধ্যমে।

০৭ ১৬

আজ থেকে ১৩ বছর আগে নাসায় প্রথম চাকরিতে ঢোকেন অক্ষতা। তার পরেই যে সাফল্য পাওয়ার শুরু, তাঁর কাহিনি মোটেই এতটা সহজ, সরল নয়। লড়াইয়ের পরিমাণ যেন বেড়ে যায় আরও। কিন্তু হাল ছাড়েননি ইতিহাস তৈরি করা অক্ষতা। সেই হাল না ছা়ড়ার কাহিনিই অক্ষতা তুলে ধরেছেন সমাজমাধ্যমে।

০৮ ১৬

যেখানে তিনি এই অবিশ্বাস্য উত্তরণকে মোট ১১টি ধাপে ভেঙে তা জানিয়েছেন মানুষকে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘আজ থেকে ১৩ বছর আগে আমেরিকার নাসা এসেছিলাম কাজ করতে। মঙ্গলগ্রহে বিজ্ঞান এবং রোবোটিক্স অপারেশনের অংশ হব, এই স্বপ্ন ছাড়া আরও কোনও কিছুই তখন আমার মাথায় ছিল না। যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, আমার কথা শুনে প্রত্যেকেই বলেছিলেন, এই কাজ আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি যেন নিজের ‘ফিল্ড’ বদল করে নিই।’’

০৯ ১৬

কিন্তু অক্ষতাকে ভয় পাওয়ানো যায়নি। নিজের রাস্তা থেকে একচুলও সরেননি নাসার রকেট বিজ্ঞানী। কারও কথা না শুনে, তিনি নিজের কাজে আরও মনোনিবেশ করেন। লড়াইটা যেন এক ধাক্কায় আরও খানিকটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল অক্ষতার কাছে।

১০ ১৬

অক্ষতার মতে, ‘‘বাইরের লোকের কথা না শুনে স্রেফ নিজের কাজটা মন দিয়ে করে যেতে হবে। একমাত্র তা হলেই দিনের শেষে আপনার সমালোচকদের আপনি ভুল প্রমাণ করার জায়গায় পৌঁছতে পারবেন।’’

১১ ১৬

তার উপর ছিল, সুদূর ভারত থেকে নাসার মতো জায়গায় নিজের স্থান করে নেওয়ার মতো প্রশ্নও। সাধারণত, যে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয়েরা সবচেয়ে বেশি ভাবিত থাকেন। তারও দাওয়াই রয়েছে অক্ষতার উত্তরণের পথে যাত্রা। তিনি মুখের উপর ভুল প্রমাণ করেছেন সেই লোকেদের, যাঁরা ভাবেন, ভারতীয়েরা নাসায় কাজ করবেন কী করে!

১২ ১৬

অক্ষতা জানিয়েছেন, বার বার তাঁর মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলত। মাঝে মাঝে তাতে মন খারাপও হত তাঁর। কিন্তু জানতেন, যে রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছেন, তাঁর আগে কেউ হাঁটেননি সেই পথে। আগামিদিনেও যে কেউ হাঁটবেন, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, অক্ষতা হাঁটছেন সেই সরণিতে যেখানে হাঁটার কথা ভাবতে পারেন কেবল আসল ‘চ্যাম্পিয়নরা’ই।

১৩ ১৬

অক্ষতা তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ (এমআইটি) থেকে। তার পর ক্রমশ নাসায় স্থায়ী রকেট বিজ্ঞানী হিসাবে জায়গা করে নেন। এমআইটি থেকে নাসায় যাত্রা— অক্ষতার কাছে মোটেও সহজ ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় শত শত দরজার কড়া নেড়েছি।’’

১৪ ১৬

অনেকেই আছেন, যাঁরা ছোটবেলায় দেখা স্বপ্নকে তাড়া করা থামিয়ে দেন স্রেফ নাছোড় মনোভাব না থাকার কারণে। অকালেই মহাশূন্যে হারিয়ে যায় কত কত স্বপ্ন। অক্ষতার অসামান্য কাহিনি সেই স্বপ্নগুলিকেই পাখনা মেলে উড়তে দেওয়ার কথা বলে। যেখানে অন্যের টিপ্পনীর ভয়ে স্বপ্নকে ত্যাগ করতে হয় না। বরং, স্বপ্নকে সফল করতে ত্যাগ করা যায় বাকি সমস্ত কিছু।

১৫ ১৬

১৩ বছর আগে যে তরুণী বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় পা রেখেছিলেন, আজ তাঁর স্বপ্ন সফল। তাঁর অনন্য সাফল্য আগামিদিনে পাথেয় হয়ে উঠবে কত কত অক্ষতার। সমাজমাধ্যমে সেই বার্তাই দিয়েছেন নাসার রকেট বিজ্ঞানী। নাছোড় লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালানো যাবে না, এ কথাই তো বলছেন অক্ষতা।

১৬ ১৬

অক্ষতার সমাজমাধ্যমে দেওয়া বয়ান থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার। তা হল, ছোটবেলা থেকে যে স্বপ্নকে লালনপালন করে এসেছেন, পথ কঠিন ভেবে সেই স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যেতে হবে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় স্বপ্ন পূরণের পথ যতই কঠিন হোক না কেন, সাফল্য আসবেই।

সব ছবি: নাসা, রয়টার্স, এএফপি, ইনস্টাগ্রাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement