স্কুলের ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেল করে দিনের পর দিন গণধর্ষণ। মুখ বন্ধ করতে অশালীন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল। ৩০ বছর আগের এই ঘটনায় নড়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। ১০০ জনেরও বেশি কিশোরীকে এ ভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল।
ঘটনাস্থল রাজস্থানের অজমেঢ়। ১৯৯২ সালে সে শহরের বুকে ধারাবাহিক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। তার পর যত তদন্ত এগিয়েছে, ততই উঠে এসেছে একের পর এক নতুন তথ্য। ঠিক কী ঘটেছিল?
ফারুখ এবং নাফিস— এই দুই যুবক সেই সময় হয়ে উঠেছিল অজমেঢ়ের ত্রাস। শহরের কুখ্যাত মস্তান ছিল তারা। প্রভাব-প্রতিপত্তি কম ছিল না! পাশাপাশি তারা যুক্ত ছিল রাজনীতির সঙ্গেও।
যুব কংগ্রেসের নেতা ছিল ওই ২ যুবক। এলাকায় তাদের একটা গ্যাং ছিল। অজমেঢ়ে ধারাবাহিক গণধর্ষণের ঘটনায় ফারুখ এবং নাফিসই ছিল মূল অপরাধী।
১৯৯২ সালের ২১ এপ্রিল। স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতা দেখে সে দিন সকালে শিহরিত হয়েছিলেন সকলে।
এলাকার গুন্ডাদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে স্কুলের মেয়েরা— এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল ওই সংবাদপত্রে। খবরের পাশাপাশি কিছু আপত্তিকর ছবিও প্রকাশ করা হয়েছিল। সে সব দেখে হইচই পড়ে গিয়েছিল।
সংবাদপত্রে এই খবর দেখে টনক নড়ে পুলিশ-প্রশাসনের। শুরু হয় তদন্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, অজমেঢ়ে মেয়েদের স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করত ফারুখ। তার পর প্রলোভন দিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করত। গণধর্ষণ করা হত। ধর্ষণের সময়কার ছবিও তোলা হত।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছিল, ছবি দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করা হত। ব্ল্যাকমেল করে নির্যাতিতা ছাত্রীকে বলা হত সে যেন তার বান্ধবীদেরও ফারুখ এবং নাফিসের কাছে পাঠায়।
এ ভাবেই ওই স্কুলের একাধিক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। ফারুখদের শিকার হয়েছিল অজমেঢ়ে আরও একটি স্কুলের ছাত্রীরা।
সেই সময় ওই এলাকায় ফারুখ এবং নাফিসের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। রাজনৈতিক প্রতাপ, প্রতিপত্তিতে ভর করে এলাকা রাজ করত তারা। আর সেই কারণেই নির্যাতিতা এবং তাদের পরিবার সব জেনেও মুখে টুঁ শব্দটি করত না।
ফারুখ এবং নাফিসদের হাতে নির্যাতিতাদের ‘আইএএস-আইপিএসের মেয়ে’ বলে অভিহিত করেছিল স্থানীয় সংবাদপত্র। তবে তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কোনও কোনও কিশোরীর বাবা সরকারি কর্মীও ছিলেন।
এই ঘটনার পর বহু নির্যাতিতার পরিবারই অজমেঢ় ছেড়েছিল। কেউই প্রকাশ্যে এ নিয়ে সরব হননি। বহু দিন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে ঘুরেছে অভিযুক্তরা।
অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল অভিযুক্তদের। তাদের সাজাও হয়। ২০০৭ সালে ফারুখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
২০১৩ সালে ফারুখকে মুক্তির নির্দেশ দেয় রাজস্থান হাই কোর্ট। বর্তমানে অজমেঢ়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছে সে।
ফারুখ গ্রেফতার হলেও পলাতক ছিল নাফিস। ২০০৩ সালে দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। পরে অবশ্য জামিন পায়। ফারুখের মতোই এলাকায় রয়েছে নাফিস। অন্য অভিযুক্তরাও জামিনে মুক্ত।
এই ঘটনায় মোট ৬টি চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। তাতে নাম ছিল ১৮ জন অভিযুক্তের। ১৪৫ জনেরও বেশি সাক্ষীর নাম ছিল। মাত্র ১৭ জন নির্যাতিতা তাদের বয়ান রেকর্ড করিয়েছিল।
অজমেঢ় পুলিশের সন্দেহ, ১০০ জনেরও বেশি কিশোরী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে অধিকাংশই তদন্তের মুখোমুখি হয়নি। এখনও ৩০ বছর আগের সেই ঘটনার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে অজমেঢ়।