সোমবার অযোধ্যার মন্দিরে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হয়েছে রামলালার। রামলালাকে কাজলদান করেছেন প্রধান যজমান নরেন্দ্র মোদী। সেই বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন দেশবাসী। এ বার রামলালার আর এক বিশেষ ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়ে হয়েছে চাঞ্চল্য।
কেউ সরাসরি, কেউ আবার গোটা অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার দেখেছেন টিভির পর্দায়। কষ্টিপাথরে তৈরি হয়েছে রামলালার ৫১ ইঞ্চির বিগ্রহ। সেই বিগ্রহের দর্শন পাওয়ার পর দেশবাসী আপ্লুত। দেশ জুড়ে উৎসবের আমেজ। রামলালাকে ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে।
প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন রামলালার পরনে ছিল হলুদ রঙের বেনারসি ধুতি। গায়ে ছিল লাল পট্টবস্ত্র। এই পট্টবস্ত্রে সোনার জরি দিয়ে কারুকাজ করা হয়েছে।
শঙ্খ, চক্র, পদ্ম, ময়ূর ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পট্টবস্ত্রে। বিগ্রহের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোনা, হিরে, চুনি, পান্নার গয়না। বিগ্রহের কপালে রয়েছে হিরে, চুনি-খচিত তিলক।
বিগ্রহের গায়ে কী কী গয়না পরানো হবে, তা নিয়ে চলেছে গবেষণা। বাল্মিকী রামায়ণ ছাড়াও বিবিধ অধ্যাত্ম ব্যাখ্যাযুক্ত রামায়ণ, তুলসীদাসের রামচরিত মানস, ভারতের সাধক যমুনাচার্যের আলভান্দর স্তোত্র পড়ে তার পরেই গয়নার নকশা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিগ্রহের মাথায় রয়েছে মুকুট। সোনার তৈরি মুকুটে বসানো রয়েছে হিরে, চুনি, পান্না। মুকুটের ঠিক মাঝে রয়েছে সূর্যের ছবি। উত্তর ভারতীয় শৈলী অনুযায়ী তৈরি হয়েছে মুকুটের নকশা।
মুকুটের সঙ্গে মানানসই কুণ্ডল (দুল) রয়েছে রামলালার কানে। সোনার তৈরি দুলে বসানো রয়েছে হিরে, চুনি, পান্না। ময়ূরের নকশা ফোটানো হয়েছে তাতে।
বিগ্রহের গলায় রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকৃতি কণ্ঠহার। ফুলের নকশা রয়েছে তাতে। মাঝে সূর্য। অসংখ্য হিরে, চুনি, পান্না খোদাই করা রয়েছে। নীচে ঝুলছে পান্না। বিগ্রহের যেখানে হৃদয়, সেখানে ঝুলছে কৌস্তুভ মণি। বড় চুনি এবং হিরে দিয়ে তৈরি।
কণ্ঠ এবং নাভির মাঝে ঝুলছে পাঁচনরি হার। তাতে বসানো রয়েছে অসংখ্য হিরে, পান্না। নীচে ঝুলছে লকেট।
সব থেকে লম্বা যে হার বিগ্রহের গলায় ঝুলছে, তার নাম ‘বৈজয়ন্তী’ বা ‘বিজয়মালা’। বিজয়ের প্রতীক। এতে খোদাই করা রয়েছে অসংখ্য হিরে, পান্না। বৈষ্ণব রীতি মনে এতে খোদাই করা রয়েছে শঙ্খ, সুদর্শন চক্র, পদ্ম, মঙ্গল কলস।
রামলালার দুই বাহুতে রয়েছে বাজুবন্ধ। সোনার তৈরি বাজুতে বসানো রয়েছে হিরে, চুনি, পান্না। দুই হাতে রয়েছে বালা। সোনার সেই বালাতেও বসানো রয়েছে দামি পাথর।
মূর্তির দুই হাতের আঙুলেই রয়েছে বিশাল আংটি। তা থেকে ঝুলছে বড় মুক্তো। পায়ে রয়েছে সোনার তৈরি পায়েল বা পঞ্জনিয়া। তাতেও সোনা, চুনি বসানো রয়েছে।
বাঁ হাতে রয়েছে সোনার ধনুক। তাতে রয়েছে মুক্তো, চুনি, পান্না। ডান হাতে রয়েছে সোনার তির। পায়ে রয়েছে সোনার পদ্ম।
রামলালা শিশু। তাই তার সামনে রাখা রয়েছে রুপোর খেলনা। যেমন রুপোর ঝুনঝুনি, হাতি, উট, ঘোড়া, গাড়ি, লাট্টু। নেপথ্যে রয়েছে সোনার ছাতা।
সোমবার সারা দিন রামলালাকে ঘিরে উৎসব হয়েছে দেশ জুড়ে। এরই মাঝে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে রামলালার এক ভিডিয়ো।
ভিডিয়োয় চোখের ‘পলক ফেলছেন’ রামলালা, তাঁর মুখে যেন লেগে রয়েছে মিষ্টি হাসি। রামলালার এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়া মাত্র হইচই পড়ে গিয়েছে চারদিকে।
কী ভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ল এই চমৎকার দৃশ্যটি? প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। না, এই ভিডিয়ো আসল নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে এই ভিডিয়োটি তৈরি করা হয়েছে।
রামলালার এই ভিডিয়ো দেখে অনেকেই বাক্রুদ্ধ হয়েছেন। সমাজমাধ্যমে এক জন লিখেছেন, ‘‘রামজিকে এই রূপে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, কথা হারিয়ে ফেলেছি।’’
আর এক জন লিখেছেন, ‘‘এই মূর্তি দেখে মন ভরে গিয়েছে, আমাদের রামলালার স্নিগ্ধ এই রূপ দেখে চোখে জল চলে এল।’’
ইতিমধ্যে হাড়কাঁপানো ঠান্ডাও দমিয়ে রাখতে পারেনি রামভক্তদের উন্মাদনাকে। ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হলেও সোমবার মন্দিরে সাধারণের প্রবেশাধিকারে ছিল নিষেধাজ্ঞা।
কিন্তু মঙ্গলবার থেকেই ঢুকতে পারবে সর্বসাধারণ, আগেই জানিয়েছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। আর তাই রামলালার দর্শন পেতে মধ্যরাত থেকেই মন্দিরের বাইরে দেখা গেল বিপুল ভক্তের ভিড়।
সারা দিন ধরেই মন্দিরে উপচে পড়ছে পুণ্যার্থীদের ভিড়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টাও হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামলাতে শেষমেশ মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেন রামমন্দির কর্তৃপক্ষ।