বিবাহবিচ্ছেদের বছর দুয়েকের মধ্যে আবার অশান্তির ঝড় আয়েশা মুখোপাধ্যায়ের জীবনে। এ বার ‘ঘরোয়া’ ঝামেলা পৌঁছে গিয়েছে আদালতের চৌহদ্দিতে।
আয়েশার প্রাক্তন স্বামী শিখর ধাওয়ান তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লির পটীয়ালা হাউস কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তার পর থেকেই নতুন করে আয়েশার জীবনে উঁকিঝুকি শুরু করেছে সংবাদমাধ্যম।
আদালতে শিখরের অভিযোগ, তাঁর কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন প্রাক্তন স্ত্রী আয়েশা। আইপিএলে তাঁর দল দিল্লি ক্যাপিটালসের মালিক ধীরজ মলহোত্রকে তাঁর নামে কুৎসা করে মেসেজ করছেন। প্রাক্তনের এ হেন আচরণে তাঁর ক্রিকেট জীবন খাদে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
আয়েশার বিরুদ্ধে শিখরের আদালতযাত্রার খবরে ছয়লাপ সংবাদমাধ্যম। আদালতের রায়ে শিখরের আপাতস্বস্তি মিললেও সংবাদমাধ্যমের নজর ঘুরেছে আয়েশার দিকে। তাঁর ব্যক্তিজীবনের খুঁটিনাটিতে আতশকাচের নজর পড়েছে।
আয়েশার সঙ্গে শিখরের আলাপ কী ভাবে হল? কবে বিয়ে করলেন তাঁরা? বিচ্ছেদই বা কবে? আয়েশাকে নিয়ে এই মুহূর্তে কৌতূহল কম নয় সমাজমাধ্যমে।
শিখর এবং আয়েশার দাম্পত্যজীবন শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। সে বছরের ৩০ অক্টোবরে বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়ের আগে তাঁদের আলাপ জমেছিল ফেসবুকে। টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অফস্পিনার হরভজন সিংহ ছিলেন ফেসবুকে দু’জনের ‘কমন ফ্রেন্ড’। শিখরের সঙ্গে আয়েশার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন হরভজনই।
শিখরের সঙ্গে আয়েশার মিলমিশ হওয়ার নেপথ্যে বোধহয় ক্রিকেট আর ট্যাটুর বড়সড় ভূমিকা রয়েছে। কিকবক্সিং এবং ক্রিকেটপ্রেমী আয়েশার মন কেড়েছিলেন শিখর। দু’জনেই ট্যাটু করাতে পছন্দ করেন। নিজের ডান বাইসেপে ‘ওঁম’ আঁকা ট্যাটু রয়েছে আয়েশার। বাঁ হাতেও করিয়েছেন বড়সড় ট্যাটু। গোটা দেহে আবার সন্তানদের নামেও রয়েছে ট্যাটু। নিয়মিত জিম করা আয়েশা নিজের ফিটনেস নিয়েও সচেতন।
তারকা ক্রিকেটার হওয়ায় শিখরের সম্পর্কে খুঁটিনাটি খবর সহজেই পাওয়া যায়। তবে প্রচলিত অর্থে তারকা না হওয়ায় আয়েশাকে নিয়ে খুব বেশি তথ্য মেলে না।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, তাঁর জন্ম ২৭ অগস্ট ১৯৭৫ সালে। বাবা বাঙালি হলেও মা ব্রিটিশ। তবে ছোটবেলা থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস। সেখানেই পড়াশোনা।
কলেজস্তরে পড়াশোনা আর ক্রিকেটপ্রেমের পাশাপাশি কিকবক্সিংয়েও মনোযোগ দিয়েছিলেন ৪৮ বছরের আয়েশা। অপেশাদার হিসাবে দেশীয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রতিযোগিতায় যোগ দিতেন বলে সংবাদমাধ্যমের দাবি।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে থাকাকালীন শিখরের সঙ্গে আয়েশার প্রেম জমে ওঠে। আলাপ থেকে প্রেমের পথে মসৃণ সফর শুরু হয়েছিলেন দু’জনের। বয়সে ১২ বছরের ছোট শিখরের সঙ্গে ঘর বাঁধার আগে অবশ্য এক বার সংসার পেতেছিলেন তিনি। প্রথম স্বামী ছিলেন এক অস্ট্রেলীয় ব্যবসায়ী। সে দাম্পত্যে আয়েশার দু’টি মেয়ে রয়েছে।
শিখর-আয়েশার বিয়ের পথে কম বাধা আসেনি। ২০০৯ সালে বাগ্দান হয়েছিল তাঁদের। গোড়ায় এ সম্পর্কে সম্মতি আদায় করতে নাকি বেগ পেতে হয়েছিল শিখরকে। তাঁর বাবা মহেন্দ্রপাল ধাওয়ানের নাকি প্রথম দিকে এ বিয়েতে মত ছিল না।
শিখরের মা সুনয়না ধাওয়ানের কাছে দরবার করার পরেই নাকি আয়েশার সঙ্গে তাঁর বিয়ের পথ সুগম হয়েছিল। শিখ সম্প্রদায়ভুক্তদের চিরাচরিত রীতিনীতি মেনেই তাঁদের চারহাত এক হয় ২০১২ সালের অক্টোবরে। বিয়ের ধুমধামে হাজির ছিলেন খ্যাতনামী থেকে টিম ইন্ডিয়ার অনেকে।
ঘটনাচক্রে, বিয়ের পর থেকে নয়া উচ্চতায় পৌঁছয় শিখরের কেরিয়ার। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে জয়ী ভারতীয় দলে অন্যতম সফল ব্যাটার ছিলেন শিখর। ওই টুর্নামেন্টের সেরা নির্বাচিত হন তিনি। সে বছর ২৮টি এক দিনের ম্যাচে ৫টি শতরান ছিল শিখরের।
শিখরের সঙ্গে সংসারে ছিল আয়েশার আগের পক্ষের মেয়ে আলিয়া এবং রিয়া। এর পর তাঁদের পরিবারে এসেছিল দম্পতির প্রথম ছেলে জোরাবর। তবে ৮ বছর পর তাঁদের দাম্পত্যে ছেদ পড়ে। ২০২১ সালে বিচ্ছেদ হয় সংসারে।
বিবাহবিচ্ছেদের কারণ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেননি শিখর। বিশেষ কিছু জানাননি আয়েশাও। তবে ইনস্টাগ্রামে দীর্ঘ পোস্টে অনেক কিছুই লিখেছিলেন তিনি। তার মধ্যে একটি লাইন ছিল, ‘‘দু’বার বিবাহবিচ্ছিন্না হওয়ার আগে পর্যন্ত আমি ভাবতাম, বিবাহবিচ্ছেদ মানে নোংরা শব্দ।’’
শিখরের থেকে বিচ্ছেদ নিয়ে আয়েশার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে চিঁড়ে ভেজেনি। অর্থের লোভেই তিনি শিখরকে বিয়ে করেছেন বলে কটূক্তি করেছিলেন সমাজমাধ্যমের অনেকে।
সংবাদমাধ্যমে এক বার আয়েশা বলেছিলেন, ‘‘মনে হয়েছিল, সকলের আশাভরসায় জল ঢেলে দিয়েছি। এক সময় তো নিজেকে স্বার্থপরও ভাবতাম। আমার মা-বাবা, সন্তানদের এমনকি ঈশ্বরের কাছেও প্রত্যাশা মেটাতে পারিনি বলে মনে হত। বিবাহবিচ্ছেদ কথাটা কি নোংরা শব্দ!’’