Saayoni Ghosh

নীতির সঙ্গে পোশাকেও মমতার অনুগামী! যুবর পরে যাদবপুরেও দিদির ভরসা সায়নী, কারণ কী?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচক ছিলেন এককালে। পরে তাঁর হাত ধরেই রাজনীতিতে পা। তৃণমূলের একাংশের মত, অভিনয় জগৎ থেকে আসা সায়নীর শুধু পোশাকেই বদল আসেনি। গত তিন বছরে তাঁর চলাফেরা, কথাবার্তায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ১৭:৩৫
Share:
০১ ২০
A tale of Saayoni Ghosh, TMC candidate of Jadavpur and her relation with Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচক ছিলেন এককালে। পরে তাঁর হাত ধরেই রাজনীতিতে পা। গত তিন বছরে ধীরে ধীরে সেই মমতাকেই অনুসরণ করা শুরু করেছেন যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ!

০২ ২০
A tale of Saayoni Ghosh, TMC candidate of Jadavpur and her relation with Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

সাদা শাড়িই মমতার চেনা সাজ। সাদা খোল, সরু একরঙা পাড়, এমন শাড়িতেই সাধারণত দেখা যায় তাঁকে। নীল তাঁর প্রিয় রং। ফলে শাড়ির পাড়ের রং অধিকাংশ সময়েই নীল। কখনও আবার সবুজ। কদাচিৎ মাটি বা অন্য রং। ইদানীং প্রায় একই সাজে দেখা যায় সায়নীকেও। তা দলীয় বৈঠকই হোক বা জনসভা। তৃণমূলের ‘জনগর্জন’ সভাতেও অভিনেত্রীর পরনে ছিল লাল, সবুজ পাড়ের সাদা সুতির শাড়ি। তার সঙ্গে মাথায় উঁচু করে খোঁপা, কপালে কালো টিপ।

Advertisement
০৩ ২০
A tale of Saayoni Ghosh, TMC candidate of Jadavpur and her relation with Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

তৃণমূলের একাংশের মত, অভিনয় জগৎ থেকে আসা সায়নীর শুধু পোশাকেই বদল আসেনি। গত তিন বছরে তাঁর চলাফেরা, কথাবার্তায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর দলে তাঁর সাংগঠনিক দায়দায়িত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধীরে ধীরে পুরোদস্তুর রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন সায়নী। তা নজরে রেখেই লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

০৪ ২০

রাজনীতির ময়দানে শিল্পীদের আনাগোনা কোনও নতুন ঘটনা নয়। তাপস পাল, দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বছরের পর বছর ধরে রাজনীতি করেছেন। তাঁদের পর রাজনীতিতে পা রেখেছেন দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, সোহম চক্রবর্তীর মতো নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। তৃণমূলে কিছু দিন থেকে পরে পদ্মশিবিরে চলে যেতেও দেখা গিয়েছে রুদ্রনীল ঘোষ এবং হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের।

০৫ ২০

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে জুন মালিয়া , রাজ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, মানালি দে, সুদেষ্ণা রায়, ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি ও ফুটবলার সৌমিক দে-র সঙ্গে সায়নীও তৃণমূলে যোগ দেন। শাসকদলের একাংশের বক্তব্য, সেই সময় যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের তুলনায় অনেক কম সময়ের মধ্যেই দলে গুরুত্ব বাড়ে সায়নীর। তাঁর উত্থানকাহিনিও নজরকাড়া।

০৬ ২০

তৃণমূলে যোগদানের আগে ঘনিষ্ঠ মহলে ‘বামঘেঁষা’ বলেই পরিচিত ছিলেন সায়নী। সমাজমাধ্যমে তাঁর বিভিন্ন মন্তব্যেও বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। পরিচালক অনীক দত্তের রাজনৈতিক ব্যঙ্গধর্মী ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর হল না-পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তাঁকে পথে নামতে দেখা গিয়েছিল।

০৭ ২০

এমনকি, চলচ্চিত্র উৎসবে ছবির পোস্টারের বদলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কেন থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছিল টলিপাড়ায় ‘ঠোঁটকাটা’ বলে পরিচিত সায়নীকে।

০৮ ২০

সমাজমাধ্যমে এক বার ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের বিরোধিতা করায় বিজেপির রোষে পড়েছিলেন সায়নী। সেই সময় অভিনেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। তৃণমূলের একাংশ মনে করেন, ওই ঘটনার পর থেকেই ধীরে ধীরে দলের সঙ্গে নৈকট্য বাড়ে তাঁর।

০৯ ২০

‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধে সায়নীর পোস্ট করা একটি পুরনো টুইট তুলে এনেছিলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা তথাগত রায়। যেখানে শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরানো এক মহিলাকে ‘বুলাদি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সায়নী হিন্দু ধর্মের অপমান করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তথাগত।

১০ ২০

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত পৌঁছয়। সেই সময় সায়নীর সমর্থনে মাঠে নেমেছিলেন মমতা। সমাজমাধ্যমে সায়নীকে হুমকি দেওয়ার তীব্র সমালোচনা তো করেনই, বিজেপিকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে সায়নীর গায়ে কেউ হাত দিয়ে দেখাক।’’ তার পর থেকেই সায়নী এবং তৃণমূলের ‘পরিবর্তিত রসায়ন’ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সায়নীর তৃণমূলে যোগদানের পর সেই জল্পনায় সিলমোহর পড়ে।

১১ ২০

গত বিধানসভা নির্বাচনে সায়নীকে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থীও করেছিলেন মমতা। যদিও সায়নী হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের কাছে।

১২ ২০

ভোটে হারলেও তৃণমূল এবং আসানসোলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেননি সায়নী। বরং, করোনা এবং কার্যত লকডাউনের পরিস্থিতিতে বার বারই গিয়েছেন আসানসোল। ত্রাণ বিলি করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নানা সমস্যায় তিনি পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন।

১৩ ২০

এর পরেই সায়নীকে দলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যুব তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে সায়নী বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। দায়িত্ব যখন পেয়েছি, এই মুহূর্ত থেকে কাজ শুরু করতে চাই।’’

১৪ ২০

সায়নী যে দায়িত্ব পেয়েছিলেন, সেই দায়িত্বে আগে ছিলেন সঞ্জয় বক্সী, মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারী (বর্তমানে তিনি বিজেপিতে এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা), সৌমিত্র খাঁ (তিনিও এখন বিজেপিতে)। সায়নীর আগে ওই পদে অভিষেক ছিলেন। ফলে হিসাব মতো, অভিষেকের জুতোয় পা গলিয়েছিলেন তিনি। আর অভিষেককে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, যুবর দায়িত্ব পাওয়ার পরেই অভিনেত্রী থেকে ধীরে ধীরে নেত্রী হয়ে ওঠা শুরু হয় সায়নীর।

১৫ ২০

বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের পর ত্রিপুরাতে সায়নীকে পাঠিয়েছিল দল। পড়শি রাজ্যে গ্রেফতারও হয়েছিলেন সায়নী। সেখানে বেশ কয়েক দিন জেলেও ছিলেন।

১৬ ২০

পুরোদমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও অভিনয় জগৎ ছেড়ে কখনওই বেরোননি অভিনেত্রী। অভিনয় এবং রাজনীতি হাত ধরাধরি করেই চলেছে। দু’একটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করার পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ়েও কাজ করেছেন।

১৭ ২০

রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর বিতর্কেও জড়িয়েছেন সায়নী। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের তদন্তে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থার তলবে সাড়া দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি দফতর থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “আমাকে যদি একশো বার তলব করা হয়, আমি একশো বারই আসব। আজ ওঁরা কিছু নথি নিয়ে আসতে বলেছিলেন। আমি সে সব জমা দিয়েছি। আরও কিছু নথি চাওয়া হয়েছে।”

১৮ ২০

এ বারের লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্রে সায়নীকে প্রার্থী করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তাঁর প্রতিপক্ষ বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য এবং বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়।

১৯ ২০

প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই পুরোদমে প্রচারে নেমে গিয়েছিলেন সায়নী। প্রবল গরমেও হুডখোলা গাড়িতে করে প্রচার করেছেন। এক বার অসুস্থও হয়েছিলেন প্রচারে বেরিয়ে।

২০ ২০

যাদবপুরে ভোট আগামী ১ জুন। বিধায়ক হতে পারেননি, সাংসদ হয়ে দিল্লির রাজনীতিতে পা রাখতে পারবেন কি সায়নী? উত্তর মিলবে আগামী ৪ জুন।

সব ছবি: ফেসবুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement