কম্পিউটারে বাড়তি জায়গার প্রয়োজন ছিল তরুণের। তাই দোকান থেকে একটি হার্ড ড্রাইভ কিনে এনেছিলেন। নিজের কম্পিউটারের সঙ্গে সেই হার্ড ড্রাইভটি সংযোগ করে ফাইলগুলি বদলি করার চেষ্টা করতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। যখন তিনি এটি তাঁর কম্পিউটারে সংযোগ করেন তখন অবাক হয়ে দেখেন যে ড্রাইভটি খালি ছিল না।
নতুন কেনা হার্ড ড্রাইভটি খালি তো ছিলই না, উল্টে তার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে ছিল বেশ কিছু ফাইল। প্রযুক্তি-সচেতন ব্যবহারকারীর মতো, তিনিও এসএসডিটি ফরম্যাট করার আগে এর বিষয়বস্তু পরীক্ষা করার কথা ভেবেছিলেন। আর তাতেই ধরা পড়ে মস্ত গোলমাল।
অনলাইনে কেনা সেই হার্ড ড্রাইভটি ছিল সফ্টঅয়্যারের ‘সোনার খনি’। এক টেরাবাইটের হার্ড ড্রাইভটিতে প্রায় ৮০০ জিবির (গিগাবাইট) ফাইল রাখা ছিল। তাতেই হকচকিয়ে যান ওই তরুণ।
তথাকথিত নতুন ড্রাইভে থাকা এই ফাইলগুলি অবাঞ্ছিত বা অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। তাই তিনি বিষয়টি রেডিটে উত্থাপন করেন। তাঁর পোস্ট দেখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত রেডিট ব্যবহারকারীরা দ্রুত বুঝতে পারেন যে ড্রাইভে থাকা ফাইলগুলি যথেষ্ট মূল্যবান।
তাঁরা তরুণের সেই পোস্টে জানান অজান্তেই তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন জ্যাকপট! এর মধ্যে ছিল সঙ্গীত সংক্রান্ত কিছু ব্যয়বহুল পেশাদার সফ্টঅয়্যার প্রোগ্রাম, যেগুলির সম্মিলিত মূল্য কয়েক হাজার ডলার। সাধারণত পেশাদার সুরকার এবং সাউন্ড ডিজ়াইনারেরা নিজেদের সঙ্গীত রেকর্ড করার জন্য এই প্রোগ্রামগুলির ব্যবহার করে থাকেন। দুটি সফ্টঅয়্যারের মধ্যে একটির দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা ও আর একটির বাজারমূল্য ছিল ১৭ হাজার টাকার কাছাকাছি।
এই পোস্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল সমাজমাধ্যমে। প্রচুর প্রতিক্রিয়া ও পরামর্শ জমা পড়ে তরুণের সেই ঝড় তোলা পোস্টে। ড্রাইভের উৎপত্তিকে ঘিরে তত্ত্ব এবং সন্দেহ ঘুরপাক খেতে থাকে এই পোস্টে। এই ধরনের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য অনেকেই এ বিষয়ে তাঁদের মতামত ব্যাখ্যা করেছিলেন পোস্টে।
রেডিটের সদস্যের মধ্যে কয়েক জন তরুণকে তাঁর অবগতির জন্য জানিয়েছিলেন যে এটি কোনও গ্রাহকের ফিরিয়ে দেওয়া পণ্য হতে পারে। পরে বিক্রেতা সেটি যাচাই না করেই পুনরায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন। হার্ড ডিস্কটি সঠিক ভাবে পরীক্ষা করা বা সেই ফাইলগুলি মুছে ফেলা ছাড়াই বিক্রির জন্য বাছাই করে ফেলা হয়েছিল।
নতুন হার্ড ড্রাইভ কেনার পর তাতে আগে থেকে ফাইল থাকার কারণ হল, ড্রাইভটি সম্ভবত আগে অন্য কোনও কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছে, অথবা এটি বিক্রি করার আগে সঠিক ভাবে ফরম্যাট করা হয়নি।
সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ জানিয়েছিলেন খুচরো দোকানে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে ফেরত আসা পণ্যগুলি প্রায়শই ন্যূনতম পরিদর্শনের বা যাচাইয়ের ধাপ পেরিয়ে আসে না। যদি পূর্বের গ্রাহক ড্রাইভটিতে থাকা ফাইল মুছে ফেলতে ব্যর্থ হন ও যাচাই না করে সেটি বিক্রির করে দেওয়া হয় তাহলে এই ঘটনা ঘটতে পারে।
আবার কেউ কেউ মনে করেছেন যে এই ধরনের ফাইলগুলি সফ্টঅয়্যারের নকল সংস্করণ হতে পারে। যার জন্য অ্যাক্টিভেশন কি প্রয়োজন হয় ও উপযুক্ত লাইসেন্স ছাড়া সেগুলি ব্যবহারযোগ্য হয় না।
অন্যরা মনে করছেন যে এই ফাইলগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে সেখানে রাখা হয়েছিল যাতে মনোযোগ আকর্ষণ করা যায় অথবা ইনস্টলেশনের সময় ক্রেতার কম্পিউটারে ভাইরাস বা ম্যালঅয়্যার সংক্রামিত হতে পারে। ক্রেতাদের কাছে মূল্যবান প্রোগ্রামের ছদ্মবেশে ভাইরাস সংক্রামিত সফ্টঅয়্যার চালানোর জন্য এটি একটি কৌশল হতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই ধরনের ঘটনাগুলি বড় ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি কেউ অজান্তে নকল বা সংক্রামিত সফ্টঅয়্যারটি ইনস্টল করে ফেলেন, তা হলে তাঁরা অনুমতির চুক্তি লঙ্ঘন করতে পারেন। আরও খারাপ বিষয় হল, এই ধরনের ফাইলগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যালঅয়্যার, স্পাইঅয়্যার বা ভেক্টর হিসাবে কাজ করে, যা ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন যে প্রতিটি নতুন বা সন্দেহজনক যন্ত্র কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বা ফোন ব্যবহারের আগে স্ক্যান করে নেওয়া উচিত। যদি সন্দেহজনক ফাইলের উপস্থিতি দেখা যায় তাকে নিরাপদে মুছে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এমনকি কোনও ফাইল বৈধ বলে মনে হলেও তা এড়িয়ে যাওয়াই নিরাপদ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।