এক ডজনেরও বেশি খুনের অভিযোগ। রয়েছে খুনের চেষ্টা এবং তোলাবাজির অভিযোগও। মাথার দাম রাখা হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা। তবু কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না গ্যাংস্টার প্রবীণ যাদব ওরফে মডেলের। অবশেষে ১৪ অগস্ট তাঁকে পাকড়াও করেছে দিল্লি পুলিশ।
শনিবার পুলিশের আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রবীণকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে দিল্লির পটিয়ালা হাউস কোর্ট। আপাতত তাঁকে রাখা হবে তিহাড় জেলে। তবে প্রবীণ নাকি তিহাড় জেলে সুরক্ষিত নন। তাঁর উপর নাকি নীরজ বাওয়ানিয়া গোষ্ঠীর নজর রয়েছে।
প্রবীণকে জেল হেফাজতে পাঠানোর সময় তিহাড় কর্তৃপক্ষকে তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন পটিয়ালা হাউস কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অজয় নারওয়াল।
অশোক প্রধান গোষ্ঠীর বন্দুকবাজ (শার্পশ্যুটার) হিসাবে পরিচিত প্রবীণের নাকি তিহাড় জেলে প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত বিচারকের নির্দেশ, তিহাড় জেলে থাকাকালীন প্রবীণের নিরাপত্তার যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে হবে।
১৪ অগস্ট সকালে দিল্লির এমজি রোড এলাকা থেকে প্রবীণকে পাকড়াও করেছিলেন দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের আধিকারিকেরা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এমজি রোডে আগে থেকেই ওত পেতেছিলেন তাঁরা।
এফআইআরে পুলিশ জানিয়েছে, ১৪ অগস্ট ঘিটোরনি এলাকায় এমজি রোডে মুখোমুখি হয়েছিল অশোক প্রধান এবং নীরজ বাওয়ানিয়া গোষ্ঠীর লোকজন। সেখানে ছিলেন প্রবীণও।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে প্রবীণকে ধরার জন্য এমজি রোডে ফাঁদ পাতে পুলিশ। প্রবীণের গাড়ি আসতেই সেটি ঘিরে ফেলে থামানোর চেষ্টা করে তারা। পুলিশের দাবি, বেকায়দায় পড়তেই পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন প্রবীণ। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশও।
পুলিশের দাবি, রানিবাগ এলাকা থেকে ডাকাতি করা একটি গাড়িতে চড়ে সে দিন এমজি রোডে হাজির হয়েছিলেন প্রবীণ। সে সময় তাঁর কাছ থেকে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সও ভুয়ো ছিল।
প্রবীণের কাছ থেকে একটি পিস্তল-সহ চারটি তাজা কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারির পর তাঁকে ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে একপ্রস্ত জেরার পর শনিবার পটিয়ালা হাউস কোর্টে তোলা হয়েছিল প্রবীণকে।
আদালতে প্রবীণের আইনজীবী ঋষভ জৈনের দাবি, নীরজের দলের লোকজনের নজরে রয়েছেন প্রবীণ। তিহাড় জেলেও তাই তিনি সুরক্ষিত নন। সে কারণে তাঁকে দিল্লির রোহিণী জেলে স্থানান্তরিত করার আর্জিও জানান জৈন। তবে সে আর্জি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
প্রবীণের আইনজীবীর আবেদন শোনার পর ভারপ্রাপ্ত বিচারক তাঁর নির্দেশনামায় বলেছেন, ‘‘অভিযুক্ত ব্যক্তির নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য (তিহাড়) জেল সুপারিন্টেন্ডেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি আইনানুগ পদক্ষেপ করবেন।’’
প্রবীণের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, খুনের চেষ্টা-সহ ১২টিরও বেশি অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি রোহিণী জেলার কেএন কাটজু থানায় আরও একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাতেও খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রবীণের বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৭ বছর ধরে অপরাধ জগতের ২০টি অপরাধমূলক মামলায় জড়িত প্রবীণ। এই মুহূর্তে সাতটি মামলায় পলাতক ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে প্রশান্ত বিহার থানা এলাকায় খুনের চেষ্টার মামলায় তাঁর পাঁচ বছরের জন্য জেলও হয়েছিল।
এ হেন প্রবীণের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ, ২০২১ সালে রোহিণী এলাকায় গুলির লড়াই চলাকালীন খুন হন এক আইনপড়ুয়া। সেই সঙ্গে আহত হন ওই পড়ুয়ার এক আত্মীয়।
প্রবীণের গ্রেফতারিতে কাজে আসে, এমন কোনও তথ্য কেউ দিতে পারলে সেই ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল পুলিশ। তা সত্ত্বেও এত দিন তাঁকে ধরা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুলিশের জালে পড়লেন প্রবীণ।