হবু জামাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে মেয়ের বিয়ের আগে তাঁকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের ৩৮ বছরের তরুণী। সেই কাণ্ডে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যম জুড়ে। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই আরও একটি বিবাহের খবর উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে।
ঘটনাস্থল সেই উত্তরপ্রদেশ। পাত্র সম্পর্কে নাতি। পাত্রী ৫২ বছরের প্রৌঢ়া। দু’জনের বয়সের ব্যবধান ২০ বছর। বয়স বা সম্পর্কের বাধা ঠাকুমা-নাতির প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। চার সন্তান, স্বামী, সংসার ছেড়ে নাতির সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছেন প্রৌঢ়া। নাতিকে নিয়ে পালিয়ে মন্দিরে বিয়ে সারলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা।
এখানেই এই ঘটনা শেষ নয়, পালিয়ে বিয়ে করার আগে বয়স্ক স্বামী ও সন্তানদের বিষ খাইয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা ছকেছিলেন নাতি ও ঠাকুমা। সেই মনোস্কামনা অবশ্য পূর্ণ হয়নি দু’জনের। পরে সকলকে হতবাক করে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালানোর আগে নাতির দেওয়া সিঁদুরে সিঁথি রাঙিয়ে নেন প্রৌঢ়া পাত্রী।
পাত্রীর নাম ইন্দ্রাবতী ও পাত্র আজ়াদ। দু’জনেই অম্বেডকরনগরের বাসিন্দা। সম্পর্কে নাতি-দিদা হলেও বেশ কিছু কাল ধরেই তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আজ়াদ প্রায়ই ইন্দ্রাবতীর বাড়ি আসতেন। দু’জন দেখাসাক্ষাৎও করতেন। পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় কারওর তেমন সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ়াদ সম্পর্কে ইন্দ্রাবতীর খুড়তুতো ভাইয়ের নাতি।
২০ বছর আগে প্রতাপপুর বেলওয়ারিয়া এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রশেখরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ৫২ বছর বয়সি ইন্দ্রাবতীর। চন্দ্রশেখরের সঙ্গে এটি তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ। তাঁর প্রথম পক্ষের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। এর পর আরও তিনটি সন্তান জন্মায় ইন্দ্রাবতীর। দু’বছর আগে চন্দ্রশেখর দায়িত্ব নিয়ে তাঁর সৎমেয়ের বিয়েও দিয়ে দেন। তিনি জানতেও পারেননি কখন ইন্দ্রাবতীর তাঁর প্রতি মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে।
ইন্দ্রাবতী ও আজ়াদ দু’জনের বাড়ি একই গ্রামে। ইন্দ্রাবতী তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা এতটাই কাছে চলে আসেন যে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দু’জনেই মাঝেমধ্যে দেখা করতেন। তবে তাঁরা যে প্রেমের সম্পর্কে জড়়িয়েছেন তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি প্রতিবেশী বা পরিবারের সদস্যেরা। ফলে বাধাও দেননি।
পালিয়ে যাওয়ার চার দিন আগে তাঁদের গোপনে সাক্ষাৎ করতে দেখে ফেলেন ইন্দ্রাবতীর স্বামী চন্দ্রশেখর। জবাবদিহি চাওয়ায় তাঁদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন ইন্দ্রাবতী। সব জেনে চন্দ্রশেখর এর বিরোধিতা করেন। স্ত্রীকে ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন বৃদ্ধ। কিন্তু, ইন্দ্রাবতী এবং তাঁর প্রেমিক নাতি নাছোড়বান্দা। কোনও কথা শুনতে তাঁরা রাজি ছিলেন না।
এর পর বিষয়টি গড়ায় থানা-পুলিশে। চন্দ্রশেখর বিষয়টি সমাধানের জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ অভিযোগ দায়ের করতে অস্বীকৃত হয়। পুলিশ জানায়, ইন্দ্রাবতী এবং আজ়াদ উভয়ই প্রাপ্তবয়স্ক এবং তাঁদের মনোমতো সঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
চন্দ্রশেখরের আরও দাবি, ইন্দ্রাবতী সন্তানদের বিষ খাইয়ে খুন করার চক্রান্ত করেছিলেন। সে বিষয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। এর আগে উভয় পক্ষকে লাহাটোরওয়া থানায় ডেকে কথা বলা হয়েছিল কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। পরিবার ও সমাজের তোয়াক্কা না করেই তাঁরা পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সংসার পাতার স্বপ্ন নিয়ে।
চন্দ্রশেখরের অভিযোগ, কাজের সূত্রে তিনি প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর ঘন ঘন বাড়ি থেকে দূরে যাতায়াতের ফলে ইন্দ্রাবতী এবং আজ়াদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
গ্রাম থেকে উধাও হওয়ার আগে একে অপরকে বিয়ে করেন। গোবিন্দ সাহেব মন্দিরে গিয়ে হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে সারেন দু’জনে। অগ্নিসাক্ষী রেখে সাত পাক ঘোরেন। আজ়াদ ইন্দ্রাবতীর সিঁথিতে মেটে রঙের সিঁদুর পরিয়ে দেন। এর পর তাঁরা ভিন্রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন বলে খবর। বৃহস্পতিবার তাঁরা উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে চলে যান।
স্ত্রীর এই আচরণে মর্মাহত হয়ে চন্দ্রশেখর ইন্দ্রাবতীর ১৩ দিনের পারলৌকিক অনুষ্ঠান পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আচরণের প্রতীকী অর্থ হল তিনি স্ত্রীকে তাঁর জীবনে ‘মৃত’ বলে মনে করছেন।
লাহাটোরওয়া থানা আধিকারিক জানিয়েছেন, মহিলার স্বামীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করার জন্য ডাকা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।