শেখার ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনও বাধা নয়। এই চলতি কথাটি বাস্তবেও প্রমাণ করলেন লালরিংথারা। তাই ৭৮টি বসন্ত পার করে আবার পড়াশোনা শুরু করেছেন তিনি।
মিজোরাম-মায়ানমার সীমান্তের কাছে চাম্পাই জেলার খুয়াংলেং গ্রামে ১৯৪৫ সালে জন্ম লালরিংথারার। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৮ বছর।
৭৮ বছর বয়সে পৌঁছে আবার নিজের স্বপ্নপূরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লালরিংথারা। মাঝপথে স্কুল ছা়ড়তে বাধ্য হন তিনি। সাত দশক পার করে আবার স্কুলে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
বাড়ি থেকে রোজ তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে পড়তে যান লালরিংথারা। মূলত ইংরেজি ভাষা রপ্ত করাই লক্ষ্য তাঁর।
ঝরঝরে ইংরেজি ভাষায় আবেদনপত্র লিখতে চান লালরিংথারা। এমনকি ইংরেজি ভাষায় পডকাস্ট শুনতেও যেন কোনও সমস্যা না হয়, তাই এই ভাষা রপ্ত করতে চান তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, লালরিংথারার যখন দু’বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা মারা যান। মায়ের সঙ্গে একা থাকতেন তিনি।
লালরিংথারার বাবার মৃত্যুর পর অর্থাভাবের মুখে পড়ে তাঁদের পরিবার। খুয়াংলেং গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল লালরিংথারাকে। কিন্তু অর্থাভাবে বেশি দূর পড়তে পারেননি তিনি।
খুয়াংলেং গ্রামের স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন লালরিংথারা। পড়াশোনা ছেড়ে মায়ের সঙ্গে চাষবাসের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন তিনি।
কিছু দিন পর খুয়াংলেং গ্রাম থেকে মিজোরামের নতুন রুয়াইকাম গ্রামে মায়ের সঙ্গে চলে যান লালরিংথারা। নতুন জায়গায় গিয়ে আবার নতুন স্কুলে ভর্তি করানো হয় লালরিংথারাকে।
নতুন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন লালরিংথারা। কিন্তু সেখানেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি।
পড়াশোনা ছেড়ে আবার চাষবাস শুরু করেন লালরিংথারা। ধানের জমিতে কাজ করে কোনও মতে রোজগার করতেন তিনি। নিজের চেষ্টায় ধীরে ধীরে স্থানীয় ভাষাও রপ্ত করে ফেলেছিলেন।
চাষবাসের পাশাপাশি স্থানীয় গির্জার রক্ষী হিসাবেও কাজ শুরু করেছিলেন লালরিংথারা। আর্থিক ভাবে সচ্ছল হওয়ার পর আবার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছা জাগে তাঁর।
২০১৮ সালে নতুন রুয়াইকাম গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন লালরিংথারা। সেই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা জাগে লালরিংথারার। কিন্তু নতুন রুয়াইকাম গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পর পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল না।
পড়াশোনা করবেন বলে নিজের বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে ভর্তি হন লালরিংথারা। সেই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন তিনি।
প্রতি দিন ওই তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যান লালরিংথারা। ৭৮ বছর বয়সে এ ভাবেই স্বপ্নপূরণ করছেন তিনি।