হাজার হাজার বছর আগের পৃথিবীটা কেমন ছিল? সেই আদ্যিকালের মানুষরা কেমন করে দিন গুজরান করতেন? ইতিহাসের পাতায় আদিযুগকে নিয়ে কৌতূহলের সীমা নেই। নানা সময়ই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে খননকার্য চালান প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তুরস্কের একটি জায়গায় খনন কাজ চালিয়ে তেমনই এক আদি নিদর্শনের হদিস পাওয়া গেল।
২০২১ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের সেবুর্চ এলাকায় পাথরের দেওয়ালে খোদাই করা নানা ভাস্কর্যের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ওই শিল্পকর্মগুলি প্রায় ১১ হাজার বছরের পুরনো বলে দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি এ নিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর ‘অ্যান্টিকুইটি’ নামে একটি জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক আইলেম ওজ়দোয়ান।
পাথরের দেওয়ালে খোদাই করা শিল্পকর্মে ফুটে উঠেছে নানা কাহিনি। মানুষ বনাম জন্তুদের লড়াইয়ের নানা মুহূর্তের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
হাজার হাজার বছর আগে হিংস্র জন্তুদের আক্রমণে মানবজাতি কী ভাবে আত্মরক্ষা করত, তার আভাস পাওয়া গিয়েছে ওই শিল্পকর্মে।
একটি শিল্পকর্মে দেখা গিয়েছে, দুই পুরুষকে আক্রমণ করছে জন্তুরা। প্রাণ বাঁচাতে দু’জনেই আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।
অন্য একটি শিল্পকর্মে ধরা পড়েছে আরও এক ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। নিজের যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর দু’পাশে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দুটি চিতা। চিতা দুটি যেন ওই ব্যক্তিকে আক্রমণের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
হিংস্র জন্তুদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে ভয়ে যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে যেন কাঁপছিলেন ওই ব্যক্তি। সে কালে জন্তুদের আক্রমণের মুখে মানুষ কী করত, তারই আভাস পাওয়া গিয়েছে ওই শিল্পকর্মে।
আবার, হিংস্র জন্তুর আক্রমণের মুখে পড়ে পুরুষরা নিজেদের যৌনাঙ্গে হাত রেখে আড়াল করতেন নিজেদের বাঁচাতে। আত্মরক্ষার জন্যই তাঁরা সে কালে এমনটা করতেন বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
অন্য একটি শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে এক ব্যক্তি ও ষাঁড়কে। সেখানে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তির দিকে তেড়ে গিয়েছে একটি ষাঁড়। আক্রমণের জেরে যেন লাফিয়ে উঠেছেন ওই ব্যক্তি। তাঁর এক হাতে রয়েছে সাপ।
শিল্পকর্মে যে পুরুষগুলিকে দেখা গিয়েছে, তাঁদের চেহারাও অন্য রকম। গোলগাল মুখ, বড় কান, বড় চোখ।
খননকার্য চালিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকে ওই জায়গায় নিওলিথিক মানুষের জনবসতি ছিল।
গবেষকদের মতে, ওই সময়ে মানবজীবনে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটেছে। ঘুরে ঘুরে শিকার করা জীবনযাপনের বদলে কৃষিকাজ করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিল লোকেরা।
এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে যে কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, তা সবচেয়ে পুরনো বলে দাবি করা হয়েছে। আদ্যিকালে মানুষ ও জন্তুদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া কেমন ছিল, তাই-ই তুলে ধরা হয়েছে শিল্পকর্মে।
ওই এলাকায় আরও খননকার্য চালালে আরও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। নিওলিথিক যুগের নানা অজানা কাহিনিও জানা যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।