চার রাজ্যের ভোটযুদ্ধ সমাপ্ত। তার মধ্যে তিন রাজ্যে আশানুরূপ সাফল্য। তা সত্ত্বেও, ফল প্রকাশের পরে উদযাপনের বদলে অস্বস্তি মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি শিবিরে। নির্বাচনে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং তেলঙ্গানা, এই চার রাজ্যে মোট ২০ জন সাংসদ বিজেপি তরফে প্রার্থী ছিলেন। বুধবার তাঁদের মধ্যে ১০ জন সাংসদ ইস্তফা দিয়েছেন।
২০ জন প্রার্থীর মধ্যে জিতেছেন ১২ জন। ভোটে জিতেও সাংসদদের সিংহভাগ (১০ জন) ইস্তফা জমা করেছেন এই দিন। তাঁদের মধ্যে লোকসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ ন’জন বিজেপি সাংসদ। রাজ্যসভা থেকেও একই সিদ্ধান্তে যোগ দিয়েছেন আরেকজন সাংসদ। বিজেপি সূত্রের খবর,এই তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে জয়ী এই সব সাংসদদের এ বার রাজ্য রাজনীতিতে ‘মনোনিবেশ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজস্থানের বিধানসভা ভোটে সাত সাংসদকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তালিকায় ছিলেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী প্রাক্তন শুটার তথা জয়পুর গ্রামীণ কেন্দ্রের সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর।
জয়পুরেরই জোটওয়ারা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ে জিতেছেন তিনি। জয়পুরের বিদ্যাধরনগর থেকে জিতেছেন রাজপরিবারের কন্যা তথা রাজসমন্দের সাংসদ দিয়া কুমারী।
তালিকায় ছিলেন ‘রাজস্থানের যোগী আদিত্যনাথ’ হিসাবে পরিচিত মহন্ত বালকনাথ। অলওয়ারের বিজেপি সাংসদ বালকনাথ তাঁর এলাকায় তিজারা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন।এঁরা তিন জনই বুধবার পদ ছেড়েছেন।
রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিয়া এবং বালকনাথের নাম নিয়েও জল্পনা চলছে। বিধানসভা ভোটে সওয়াই মাধোপুর কেন্দ্রে জয়ী বিজেপি প্রার্থী তথা রাজস্থানের প্রবীণ রাজ্যসভা সাংসদ কিরোরীলাল মীনাও ইস্তফা দিয়েছেন বুবাবার।
প্রসঙ্গত, এ বার রাজস্থান বিধানসভা ভোটে বিজেপির তিন সাংসদ হেরেছেন। এঁরা হলেন, ঝুনঝুনুর সাংসদ নরেন্দ্র কুমার (মান্ডওয়া), জালোরের বিজেপি সাংসদ দেবজী পটেল (সাঞ্চোরে) এবং অজমেরের সাংসদ ভগীরথ চৌধুরির (কিসানগড়)।
মধ্যপ্রদেশে বিজেপির প্রার্থিতালিকায় ছিলেন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ সাত সাংসদ। তাঁদের পাঁচ জন জিতেছেন নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীদের মধ্যে দামোহের সাংসদ প্রহ্লাদ পটেল (নরসিংপুর) এবং মোরেনার সাংসদ নরেন্দ্র সিংহ তোমর (দিমানি) জিতেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালে লোকসভায় প্রশ্ন-ঘুষ মামলায় অভিযুক্ত মান্ডলার সাংসদ ফগ্গন সিংহ কুলস্তে নিওয়াস বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন।
বিজেপি মধ্যপ্রদেশে প্রার্থী করেছিল চার লোকসভা সাংসদ রাকেশ সিংহ (জব্বলপুর), গণেশ সিংহ (সাতনা), রীতি পাঠক (সিধি) এবং উদয়প্রতাপ সিংহ (নর্মাদাপুরম)-কে। সিধি বিধানসভা কেন্দ্রে রীতি, গদরওয়ারায় উদয়, এবং জব্বলপুর-পশ্চিমে রাকেশ জিতেছেন। তবে রীতি এবং রাকেশ সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়েছেন বুধবার। অন্য দিকে, সাতনা বিধানসভায় হেরে গিয়েছেন গণেশ।
মধ্যপ্রদেশের পড়শি রাজ্য ছত্তীসগঢ়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সরগুজার সাংসদ রেণুকা সিংহ জিতেছেন ভরতপুর সোনহাট কেন্দ্রে। জয়ী হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বিলাসপুরের সাংসদ অরুণ সাউ (লোরমি) এবং রায়গড়ের সাংসদ গোমতী সাইও (পাতালগাঁও)। অরুণ এবং গোমতী লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন বুধবার।
যদিও দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তেলঙ্গানায় বিজেপি তিন সাংসদকে প্রার্থী করে সাফল্য পায়নি। আদিলাবাদের সাংসদ সোয়াম বাপু রাও বোয়াথ বিধানসভা আসনে এবং নিজামাবাদের সাংসদ ধর্মপুরী অরবিন্দ কোরাটলা বিধানসভায় হেরেছেন। করিমনগরের সাংসদ তথা বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বান্দি সঞ্জয় কুমারও করিমনগর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে পরাস্ত হয়েছেন।