ছোট থেকেই খরচ বাঁচাতে শিখলে জীবনের যে কোনও পরিস্থিতিতে সহজেই মানিয়ে চলতে সুবিধা হবে। প্রতীকী ছবি।
সময় যত এগোচ্ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচ। সব ক্ষেত্রেই মুদ্রাস্ফীতির হারে হাঁপিয়ে উঠছেন প্রত্যেক ব্যক্তি। সেই কারণে যে কোনও ব্যক্তির জীবনেই খুব ছোট থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। অতীতে যা ঘটে গিয়েছে থাক, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই ছোট থেকেই সন্তানকে টাকার মূল্য বোঝানো উচিত। গোড়া থেকেই বুঝতে হবে টাকার আসল অর্থ। শুরু থেকে বুঝে খরচ করলে তবেই ভবিষ্যতে বিপুল সঞ্চয় সম্ভব। বলা যেতে পারে এটি জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় শিক্ষা। ছোট থেকেই খরচ বাঁচাতে শিখলে জীবনের যে কোনও পরিস্থিতিতে সহজেই মানিয়ে চলতে সুবিধা হবে। আর এই বিষয়টা সন্তানকে বোঝাতে হবে কিশোর বয়স থেকে।
বেশ কয়েকটি গবেষণা বলেছে, বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যম যত উন্নত হয়েছে, ততই জিনিসপত্রের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দামও। লোভনীয় বস্তুর প্রতি মানুষের আগ্রহ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আর এখানে টাকা খরচ হয় সব থেকে বেশি। তাই সন্তানকে সবার আগে চাহিদা আর শখের মধ্যে পার্থক্য বোঝান। আধুনিক বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা, বিলবোর্ড আর ইন্টারনেটের সুবাদে বিভিন্ন লোভনীয় বস্তুর প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া খুব একটা অবাক করা বিষয় নয়। আর মূলত বাড়ির খুদে সদস্য এমন বিজ্ঞাপন থেকে বেশি প্রভাবিত হয়। ফলে তাদের আবদারের পরিমাণও থাকে বেশি। তাই এই বিষয়ে তাদের শেখাতে হবে কোন জিনিসগুলো কেনা তাদের চাহিদার মধ্যে পড়ে এবং কোনগুলি বিলাসিতা। প্রয়োজনে বাচ্চার ঘরে বিল বোর্ডে দুই পাশে ভাগ করে দু’টি তালিকা করে দিন। এতে শখের জিনিসের প্রতি অযথা ব্যয় কমাতে শিখবে আপনার সন্তান। বাড়বে সঞ্চয়ও।
বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বাড়িতে এমন অনেক জিনিসই ব্যবহার করা হয় যা বৈদ্যুতিক মাধ্যমে চলে। এতে ইলেকট্রিক বিলও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আসে। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে এই বিল কমানো যায়, তা নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন। সব থেকে ভাল হয় যদি বাড়ির ইলেকট্রিক বিল হোক বা গ্যাস বিল, এ সব বিলের টাকা জমা করার ক্ষেত্রে সন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। এতে তাঁর জ্ঞান বাড়ার পাশাপাশি বাড়ির কোন খাতে কত পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, এবং তা কী ভাবে তা লাঘব করা যায়, সেই বিষয় ধ্যান ধারণা তৈরি হবে। এ ছাড়া একই সঙ্গে তার দায়িত্বও বাড়বে। পাশাপাশি ঘর থেকে বেরনোর সময় লাইট, ফ্যান বন্ধ করা, কল ছেড়ে না রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন সন্তানকে জানিয়ে রাখাও উচিত।
সন্তানদের ঘরের প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসগুলো কিনতে শেখান। প্রয়োজনে বাজারের তালিকা ধরিয়ে দিন সন্তানের হাতেই। বাজার করে যে টাকা বাঁচবে, তা দিনের শেষে ধরিয়ে দিন তার হাতে কিংবা তার ভাঁড়ে। এতে তার বাজার করার আগ্রহের পাশাপাশি সঞ্চয় করার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
সব চাহিদা বা শখ যে সব সময় মেনে নিতে হবে, তার কিন্তু কোনও কারণ নেই। ভালবাসা আর প্রশ্রয় দেওয়া, এই দু’টির মধ্যে তফাৎ রয়েছে। তাই সন্তান মুখ ফুটে কিছু চাইলেই তা হাতে ধরিয়ে দেবেন না। এতে তাদের চাহিদা ক্রমশ বাড়বে, করবে না। এর চেয়ে যখন যা প্রয়োজন, তা বুঝে তারপরই দিন। এতে সময়, অর্থ এবং জিনিস, এই তিনের মূল্যই ওরা বুঝতে শিখবে।
সেই সঙ্গে ছোট থেকেই বিনিয়োগের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলে তুলুন বাড়ির খুদে সদস্যকে। তার পিগি ব্যাঙ্ককে সর্বদা ব্যাঙ্ক হিসেবে গুরুত্ব দিন। ওঁরা যতটা উৎসাহ দেখাবে এই বেশি, ওঁদের সঙ্গে আপনারাও সমানভাবেই উৎসাহীত হয়ে উঠুন। এতে বাচ্চারা সঞ্চয়ের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল হয়ে উঠবে।
আপনার বাচ্চা যদি খুব ছোট হয়, তা হলে প্রশ্ন আসতে পারে যে এত ছোট বয়সে কী ভাবে সঞ্চয় শেখাবেন? বিভিন্ন খেলার ছলে আপনি তাকে সঞ্চয়ের অর্থ বোঝাতে পারেন। যেমন পিগি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। পিগি ব্যাঙ্কে অর্থ জমানোর জন্য তাকে কাজের বিনিময় বা ছোট ছোট জিনিসের বিনিময় স্বল্প পরিমাণ অর্থ দিন। যখনই সে অর্থের পরিমাণ বাড়তে দেখবে, তত তার উৎসাহ বাড়বে এবং সঞ্চয়ের প্রতিও আগ্রহ বাড়বে।
এ ছাড়াও বাচ্চার সঙ্গে কয়েন আইডেন্টিফিকেশন গেম খেলতে পারেন। বাচ্চাকে বিভিন্ন টাকা বা মুদ্রা কিংবা পয়সা চিনতে সাহায্য করুন। এতে সে পয়সার পার্থক্য ও ভ্যালু বুঝতে পারবে।
আপনি আপনার সন্তানের প্রাথমিক রোল মডেল। আপনি যে ভাবে কাজ করবেন, সে সম্পর্কে আপনার বাচ্চাও কাজ করবে। আপনি যদি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেন তা হলে সেও সেটিকে বেছে নেবে। আপনি যে বুদ্ধিমানের সঙ্গে অর্থ ব্যয় করেছেন এবং সময় মতো বিল পরিশোধ করেছেন, তা তাকে দেখানো তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে একই অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।