প্রতীকী ছবি
আপনার কি এ বছরেই বিনিয়োগের বাজারে হাতেখড়ি হতে চলেছে? না কি, আপনি ইতিমধ্যেই বাজারে পা ফেলেছেন? আপনার বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন, চলতি বছরে অন্তত অন্যের অভিজ্ঞতা ধার করে নিজের টাকাকে অনিশ্চয়তায় ভাসাবেন না। মাথায় রাখবেন অনিশ্চিত বাজারও কিন্তু বিনিয়োগের দারুন সুযোগ। একই সঙ্গে সঞ্চয়ের ঝুলি ভরার পথটাও কিন্তু এমন সময়ে খুব সহজ নয়। এর জন্য যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় তা যদি আপনার না থাকে তাহলে কিন্তু সাবধানে পা ফেলতে হবে।
আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, কেন লগ্নি করছেন, জীবনে কী চান – এগুলো সব সময়েই সঞ্চয়ের সিদ্ধান্তে নেওয়ার আগে ঠিক করতে হয়। এটা আপনার জানেনও। কিন্তু এই বছর যে অনিশ্চয়তার কথা সাধারণ ভাবে দেখা যাচ্ছে তাতে কিন্তু ঝুঁকির পাল্লাটা একটু ভারি।
তাই এবছরে আপনাকে লগ্নির রাস্তায় হাঁটতে কিন্তু অনেক বেশি পরিকল্পিত হতে হবে।কত টাকা ইক্যুইটি, ঋণপত্র, বা সোনাতে ঢালবেন কতই বা নগদে রাখবেন তার কিন্তু ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে অঙ্ক করে হাঁটতে হবে। এটা কিন্তু কোনও ম্যাজিক নয়। আর এই বছর এর গুরুত্ব অপরিসীম
সম্পদ তৈরি, বিশেষত ইক্যুইটির জন্য ২০২৩ সাল খুব একটা সহজ বছর হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই অনিশ্চয়তার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ:
১। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ডামাডোল। যেমন, প্রায় এক বছর পরও রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব এখনও অব্যাহত। চিন-তাইওয়ান সম্পর্ক ভাল নয়, ভারত-চিনের টানাপড়েন এলএসি অথবা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল নিয়ে, দুই কোরিয়ার সমস্যা ইত্যাদী। এর প্রতিটিই কিন্তু বিশ্ববাজারকে কোনও বা কোনও ভাবে প্রভাবিত করে চলেছে। অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
২। মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সুদের হার বাড়ছে। বিশ্ব বাজারে রাজনৈতিক অশান্তির কারণে পণ্য সরবরাহ নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
৩। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারের উপর রাশ কড়াই থাকবে।
৪। ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা রয়েছে।
৫। আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড) অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্ব ব্যাংক ২০২৩ এ বিশ্বব্যপী মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির কারণে।
৬। কোভিডের ছোবলে এখনও আমরা সন্ত্রস্ত।
৮। সব মিলিয়ে বিশ্ব জুড়ে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছেই।
আর এই সব কারণে বিশ্বব্যপী আর্থিক বাজারে ঝুঁকির অঙ্ক চড়াই থাকবে। এবং ভারতের শেয়ার বাজারও এই সব কারণে দুর্বল থাকতে পারে। কারণ দেশের সংস্থাগুলির আয়ও অনিশ্চিত থাকবে বিশ্ব বাজারের এই পরিস্থিতির জন্য। ক্রেতারাও ঝুঁকি এড়িয়ে কেনাকাটা করবে।
আর তাই এই সব অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখেই আপনাকে সঞ্চয়ের ঝুলি ভরতে হবে।
একটা সময় ছিল যখন ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীদের যেমন ভাল রিটার্ন দিত ঠিক তেমনই মাঝে মধ্যে বিনিয়োগকারীদের হতাশও করেছে। সময়টা ছিল ২০১১, ২০১৫ এবং ২০১৮ সাল। অবশ্য ২০২৩ এর চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে, ইক্যুইটি কী ধরনের রিটার্ন দেবে তা অনুমান করা শক্ত। সুতরাং, কৌশলগত অ্যাসেট অ্যালোকেশন অপরিহার্য।
আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি মূলধন চান, তা হলে মাঝারি উচ্চ ঝুঁকি নিতে পারেন ৩ থেকে ৫ বছরের মেয়াদে। সে ক্ষেত্রে কৌশলগত অ্যাসেট অ্যালোকেশনের জন্য মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে মূলত তিন ধরনের অ্যাসেটে বিনিয়োগ করা হয় – ইক্যুইটি, ডেট এবং সোনা। এবং এটি নির্ভর করে ফান্ড ম্যানেজারের এই অ্যাসেটগুলির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির উপর। এটি আপনার দিক থেকে ভারসাম্য বজায় রাখার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয় এবং সহজে পোর্টফোলিও ট্র্যাক করা যায়।
অথবা, আপনি যদি ডিআইওয়াই (ডু ইট ইওরসেলফ) অর্থাৎ স্বনির্ভর বিনিয়োগকারী হন সেটি ৫ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য হতে পারে এবং আপনার ব্যক্তিগত ঝুঁকি প্রোফাইল সম্পদ সৃষ্টির যাত্রায় উচ্চ ঝুঁকি নিতে পারে তা হলে আপনি ১২-২০-৮০ অ্যাসেট অ্যালোকেশন মডেল অনুসরণ করতে পারেন। এখানে ১২ মাসের নিয়মিত মাসিক খরচ (ইএমআই লোনসহ) লিক্যুইড ফান্ডে রাখা যেতে পারে যেটি যে কোনও অপ্রীতিকর বিস্ময় এড়াতে পারে। ২০ শতাংশ রাখা যেতে পারে সোনা যা সাধারণত ইক্যুইটির সঙ্গে বিপরীত সম্পর্কে রয়েছে। ৮০ শতাংশ (গ্রোথ ব্লক) উপযুক্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ইক্যুইটি ফান্ডে মোতায়েন করা যেতে পারে। এই মডেলটি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এটি আপনার আজীবনের জন্য বিনিয়োগের সহজ সমাধান হয়ে উঠতে পারে। আপনার পোর্টফোলিওর স্থিতিশীলতা, বৃদ্ধি এবং সুরক্ষার সঠিক মিশ্রণ হয়ে উঠতে পারে।
বিনিয়োগের মেয়াদ যদি ৩ বছরেরও কম হয় তা হলে ইক্যুইটি এড়িয়ে চলাই ভাল। পরিবর্তে লিক্যুইড ফান্ড অথবা ব্যাঙ্কে টার্ম ডিপোজিট করা যেতে পারে। আবেগপ্রবণ হয়ে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।