ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) সব সময় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি বড় গুঞ্জন তৈরি করে। ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) মারফত ছাড়া সাম্প্রতিক আইপিও এর একটি অন্যতম প্রধান উদাহরণ। কিন্তু যখন অনেক কোম্পানি নিয়মিত আইপিও ঘোষণা করে, তখন বিনিয়োগের জন্য সঠিক কোম্পানি কোনটি, তা চিহ্নিত করা বেশ কঠিন হতে পারে।
সন্দেহ, দোলাচল কাটাতে ঠিক এই সময়েই সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে সাহায্য় করতে পারে কোম্পানির ড্রাফ্ট রেড হেরিং প্রসপেক্টাস (ডিআরএইচপি)। এই খসড়া পড়লেই বিনিয়োগকারী বুঝতে পারেন যে এটির সম্ভাবনা কতটা ভাল বা খারাপ হতে পারে।
এ বার প্রশ্ন,রেড হেরিং প্রসপেক্টাস কী? বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার একটি প্রক্রিয়া হল রেড হেরিং প্রসপেক্টাস, বা অফার নথি। যা কোনও কোম্পানি জাতীয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডের (সেবি) কাছে দায়ের করে।
ডিআরএইচপি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই উপযোগী একটি নথি কারণ এটি কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম, আর্থিক, প্রবর্তক এবং একটি আইপিও ফাইল করার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের জন্য কোম্পানির ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি কী ভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে চায়, বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি কী কী তা বিশদে বর্ণনা করা থাকে এই নথিতে।
তা হলে এক জন বিনিয়োগকারী হিসেবে, একটি খসড়া রেড হেরিং প্রসপেক্টাস বা ডিআরএইচপি-তে কী কী দেখা উচিত?
ব্যবসাটির বর্ণনা: এই বিভাগটি একটি কোম্পানির মূল ক্রিয়াকলাপ এবং এটি কী ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে সেই সমস্ত তথ্য বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরে। এক জন সম্ভাব্য শেয়ারহোল্ডার হিসাবে, ব্যক্তিবিশেষের এই অংশে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর এই বিনিয়োগ, কোম্পানির দ্বারা মূল ব্যবসায় ব্যবহার করা হবে এবং তিনি যদি এক জন শেয়ারহোল্ডার হতে চান তবে তিনি এই অংশটির মালিকানা পাওয়ার অধিকারী হবেন।
আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত তথ্যাদি: এটি হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এবং এতে কোম্পানির অডিট রিপোর্ট ও আর্থিক বিবৃতি থাকে। এক জন বিনিয়োগকারী হিসাবে, কোম্পানির আর্থিক বিবৃতি সম্পর্কে এবং লাভের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের লভ্যাংশ সম্পর্কে একটি সম্মক ধারণা পেতে সাহায্য করে এই খসড়াটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আর্থিক বিবৃতির উপর ভিত্তি করে তার ভবিষ্যতের বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং লাভের অংশ পরিমাপ করতে পারেন।
ঝুঁকির কারণ: কোম্পানিগুলি 'রিস্ক ফ্যাক্টর' শিরোনামের একটি বিভাগের অধীনে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি তালিকাভুক্ত করা থাকে। যা আদতে ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবসা, কার্যক্রম এবং অপারেশনকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু ঝুঁকি যাচাই করা ব্যাপক ভাবে প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি দেখেন যে কোম্পানির অনেকগুলি আইনি মামলা রয়েছে, তা হলে সেই আইপিও এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। এক জন বিনিয়োগকারী হিসেবে, ভবিষ্যতে কোম্পানির বৃদ্ধির জন্য বিপদ হতে পারে এমন ধরনের ঝুঁকিগুলি শনাক্ত করতে আপনার ভাল ভাবে পড়ে নেওয়া উচিত।
আয়ের ব্যবহার: বিভিন্ন কারণে কোম্পানিগুলি আইপিও ঘোষণা করে। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি যে মূলধন সংগ্রহ করতে চায়, তা দিয়ে সেই কোম্পানি কী করতে চায় তা খুঁজে বের করুন। কোম্পানি কি তার ঋণ কমাতে, নতুন সম্পদ ক্রয় করতে, পরিকাঠামো উন্নত করতে বা তার কার্যকরী মূলধনের চাহিদা মেটাতে এই পরিকল্পনা করেছে? এই বিষয়টি অবশ্যই জানা দরকার। কোম্পানির মূলধনের কাঠামোও পরীক্ষা করে দেখুন যে কোনও বড় বেসরকারি বিনিয়োগকারী কোম্পানিতে অর্থ রেখেছে কিনা।
সংস্থা ও তার পরিপার্শ্ব: একটি তার প্রতিযোগীদের তুলনায় কোম্পানির অবস্থান কেমন তা সম্পর্কে তথ্য বহন করে ডিআরএইচপি। কোম্পানিটি যে শিল্পের সঙ্গে জড়িত তার কর্মক্ষমতা প্রবণতাও নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা থাকে। আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির আইপিও-র জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন, তা হলে আপনাকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক এবং অর্থনৈতিক ভ্যারিয়েবেল, চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করতে হবে।
ব্যবস্থাপনা: একটি কোম্পানির ভবিষ্যত যাদের হাতে নিয়ন্ত্রিত, কোম্পানির বৃদ্ধি তাঁদের উপরে বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল। পরিচালন বৃদ্ধি, সম্প্রসারণ,সংস্কার, বিপণন ইত্যাদির মতো বিভিন্ন বিষয় পরিকল্পনার জন্য দায়িত্ব সর্বদাই থাকে ম্যানেজমেন্টের। এই বিভাগে নাম, যোগ্যতা, পরিচালক, প্রবর্তক এবং মূল ব্যবস্থাপনার কর্মীদের সম্পর্কেও জেনে নেওয়া উচিত। এটিতে কোনও ফৌজদারি মামলা বা এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধ বা মুলতুবি মামলার তথ্যও থাকতে পারে। এই বিভাগটি পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সমস্ত বিষয়ও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।