ষাটোর্ধ্ব পুরুষের খাবার গিলতে কি অসুবিধে

হতে পারে খাদ্যনালিতে ক্যানসারের লক্ষণ। পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়। মুখোমুখি সংযুক্তা বসুহতে পারে খাদ্যনালিতে ক্যানসারের লক্ষণ। পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়। মুখোমুখি সংযুক্তা বসু

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:২৮
Share:

খাদ্যনালির ক্যানসার কি চিকিৎসায় সারানো সম্ভব?

Advertisement

সম্ভব। কিন্তু সেটা প্রাথমিক স্টেজে। বেশির ভাগ সময় এই ধরনের ক্যানসার দেরিতে ধরা পড়ে। নানা ধরনের উপসর্গের সঙ্গে গুলিয়ে যায় রোগের লক্ষণ। তাতেই ডাক্তারের কাছে পৌঁছনোতে দেরি হয়ে যায়। চিকিৎসারও সিদ্ধান্ত হয় যখন সব সুযোগ প্রায় হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ঠিক কী ভাবে উপসর্গগুলো গুলিয়ে যায়?

খাবার গিলতে অসুবিধে হয়। প্রথমত অসুবিধে হয় শক্ত খাবার খেতে। তার পর নরম খাবার বা তরল খাবার খেতেও অসুবিধে। মানুষ মনে করেন এমনিতেই অসুবিধে হচ্ছে। অনেকে জল খেয়ে খাবার গলাধঃকরণ করেন। খাবার খেতে গিয়ে গলায় ব্যথা হতে পারে। খাওয়াদাওয়ার অসুবিধে থাকায় ওজন কমে দ্রুত। অনেক সময় কাশির সঙ্গে আসতে পারে টাটকা রক্ত। ভারী হয়ে যেতে পারে গলার আওয়াজ। এই সব কিছুকেই কোনও ব্যক্তি ভাবতে পারেন স্বাভাবিক কিছু শারীরিক অসুবিধে। ফলে গাফিলতি হতে থাকে চিকিৎসা বা রোগ নির্ণয়ে। বিআইএম তিরিশের বেশি হওয়াও খাদ্যনালির ক্যানসারের কারণ। পাকযন্ত্র থেকে খাদ্যনালিতে যাঁদের অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়ে তাঁদেরও এই রোগ হতে পারে।

তা হলে উপায়? সাধারণ শারীরিক অস্বস্তি ভেবে গুলিয়ে ফেলা তো চলতেই থাকবে।

সেটাই তো হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। সেই জন্য পরামর্শ একটাই, যদি দেখেন যে-লক্ষণগুলো বলা হল সেগুলো এক মাসেরও বেশি রয়ে যাচ্ছে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলতে?

প্রথমে হাউজ ফিজিশিয়ানকে বলুন। তিনিই লক্ষণ বুঝে কার কাছে যেতে হবে বলে দেবেন।

আজকাল সব সময়ই বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে তামাক ক্যানসারের কারণ। খাদ্যনালির ক্যানসারের উৎসও কি তামাক বা বিড়ি সিগারেট গুটখা?

অবশ্যই। যে সব প্রতিষ্ঠিত কারণগুলো রয়েছে তার অন্যতম হল তামাকজাত দ্রব্যের নেশা। আর মদ্যপান। খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্ত ৯০% রুগির ক্ষেত্রেই এই সব নেশা থেকে যায়। যাঁদের রোগ ধরা পড়েনি, তাঁরা যদি এই মুহূর্তে তামাক বর্জন করেন খাদ্যনালির ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ৫০% কমে যাবে। সুতরাং বলব তামাক ছাড়লে আপনারই লাভ।

তা ছাড়া খুব গরম খাবার, ঝলসানো মাংস খাওয়া, আচার খাওয়ার নিয়মিত অভ্যেস থাকলে এই রোগের আশঙ্কা থাকে।

অ্যাসবেসটস, সিলিকা, এই সব ধরনের পণ্যের কারখানায় কোনও কাজে যুক্ত থাকলে খাদ্যনালির ক্যানসার হতে পারে। তবে খাদ্যনালির ক্যানসারের ক্ষেত্রে একটা বয়ঃসীমা আছে।

কীরকম সেটা?

মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের শরীরে এই ক্যানসার বাসা বাঁধে বেশি। এবং বেশির ভাগ পুরুষেরই রোগের সূচনা হয় বয়স ষাট পেরোলে।

তা হলে ষাট বছর পেরোলেই পুরুষদের খাদ্যনালির ক্যানসারের একটা রুটিন চেক আপ প্রয়োজন?

না, এই ধরনের চেক আপে যে কোনও লাভ হয় তা নয়। যে সব পুরুষের খাবার গিলতে অসুবিধে হয় তাঁরা চেক আপ করাতে পারেন মাঝে মধ্যে।

রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো কী কী?

বুক আর পেটের এক্স রে, খাদ্যনালির এন্ডোস্কোপি, সিটি স্ক্যান, এম আর আই করাতেই হবে প্রয়োজন মতো। এ ছাড়াও আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা আছে। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় মনে করলে করাতে বলবেন। সব ক’টা পরীক্ষা মিলিয়ে যে প্যাকেজ তার খরচ হাজার বিশেক টাকা বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে। কিছু ক্ষেত্রে সারা শরীরের স্ক্যান করাতে হতে পারে।

খাবারদাবারের অভ্যেস বদলে কি রোগ আটকানো যেতে পারে?

যাঁরা প্রচুর পরিণাণে ফল ও সাকসব্জি খান তাঁদের সাধারণত খাদ্যনালির ক্যানসার কম হয়। এই ধরনের খাবারে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যেটা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আর অবশ্যই বড় কথা, মদ সিগারেট চলবে না।

ক্যানসার ধরা পড়লে সারানোর উপায় কী?

অপারেশন করে খাদ্যনালিটা বাদ দিয়ে দেওয়া। তখন পাকস্থলী দিয়ে নতুন খাদ্যনালি তৈরি করা হয়। আর যদি খুব দেরিতে ধরা পড়ে তা হলে কেমো দিয়ে বা রেডিওথেরাপি করে রুগির চিকিৎসা হয়। তবে খাদ্যনালির ক্যানসারে ২০% রুগি চিকিৎসায় পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচেন সাধারণত। আশির ওপরে বয়সে রোগ ধরা পড়লে তখন আর খাদ্যনালি কেটে বাদ দেওয়ার ঝুঁকি সাধারণত নেওয়া হয় না। কারণ প্রাণের ঝুঁকিটা অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে খাদ্যনালিতে স্টেন্ট বসাতে হয়। স্টেন্ট খাদ্যনালির গহ্বরটাকে বড় করে দেয়। তাতে খাবার সহজে নামতে পারে গলা দিয়ে।

কিন্তু তাতে কি রোগের সংক্রমণ বা ব্যথা যন্ত্রণা কমে?

স্টেন্ট বসিয়ে যাতে খাবার খেতে পারে তার ব্যবস্থা হয়। না খেয়ে বাঁচার চাইতে, খেয়ে বাঁচা ভাল। এই আর কী!

খাদ্যনালির ক্যানসার কি সারিয়ে তোলার পর ফের সংক্রমণ ঘটতে পারে?

স্টেজ ওয়ানে খাদ্যনালিতে ক্যানসারের সংক্রমণ ঘটলে সেটা চিকিৎসায় সারানো যেতে পারে। রুগি আবার তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়ে কাজকর্ম করতে পারেন। কিন্তু খাদ্যনালির ক্যানসার যদি লিভার, লাংস এই সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তো রোগ সারানো মুশকিল।

যদি রোগ নিরাময়ের দিকে এগোয় তা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেমন? বা কত বার করাতে হয়।

রোগ সারার পর প্রথম দু’ বছর দু’ তিন মাস অন্তর পরীক্ষা করাতে হয়। তিন বছরের পর ছ’মাস অন্তর একবার। আর পাঁচ বছর যদি কেটে যায় তো বছরে একবার করালেই চলবে। তবে সব সময় চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

যোগাযোগ: ৯৮৩১৩৬৯৪২২

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement