ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
পত্রিকা: লিলি চক্রবর্তী যদি ‘অপুর সংসার’-এ অপর্ণা হয়ে সত্যজিতের ক্যামেরায় ধরা থাকতেন, তাহলে কি জীবনটা অন্য রকম হত?
লিলি: আমার তেমন কখনও মনে হয়নি। সত্যজিৎ রায় যখন ‘অপুর সংসার’-এর শিল্পী নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত, সেই সময় আমি উল্টোডাঙার বাড়িতে থাকতাম। বেশ কয়েকটা ছবিতে আমার কাজ করা হয়ে গেছে। একদিন সকালবেলা ওঁর প্রোডাকশন কন্ট্রোলার ভানুবাবু আমায় এসে বললেন মানিকদা আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম! বাবা আর আমি তার পরদিনই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। মানিকদা কিছু কথার পরে বিজয়া বৌদিকে বললেন, আমায় সাজিয়ে দিতে। তারপর মানিকদাই আমার অনেক ছবি তুললেন। চলে আসার সময় মানিকদা আমায় বলেছিলেন, তোমায় আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ‘অপুর সংসার’ করছি। তবে আরেকটি মেয়েকেও ঠিক করেছি, তাঁর বাবা যদি রাজি হয়ে যান তাহলে কিন্তু তোমায় নিতে পারব না।
পত্রিকা: তার পর?
লিলি: তার পর আর কী! বাড়ি ফিরে এলাম। পরে শুনলাম, শর্মিলা ঠাকুর ‘অপুর সংসার’-এ অভিনয় করছেন।
পত্রিকা: খারাপ লাগেনি?
লিলি: একটু দমে গিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু পরে মানিকদার ‘জন অরণ্য’-তে কাজ করেছি তো! এর চেয়ে বেশি আর কী চাইব!
পত্রিকা: ‘জন অরণ্য’ তো না হয় হল, কিন্তু পনেরো বছর পরে ‘শাখা প্রশাখা’, তাতেও তো আবার ক্যারেক্টার রোল। ‘অপুর সংসার’-এর অপর্ণা হলে বোধহয় লিলি চক্রবর্তীকে ক্যারেক্টার রোল বা সেকেন্ড লিড অভিনেত্রী হয়ে থেকে যেতে হত না...
লিলি: (বেশ বিরক্তির সঙ্গে মাথা ঝাঁকিয়ে) মানিকদার মতো পরিচালকের দুটো ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। ‘শাখা প্রশাখা’-র জন্য মানিকদা নিজে ফোন করে আমায় বলেছিলেন, তোমাকে আমি সামনে থেকে দেখতে চাই। লোকে বলছে তুমি নাকি একটু মোটা হয়ে গেছ। গিয়েছিলাম দেখা করতে। আমাকে দেখে ওঁর পছন্দই হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে এ ভাবে কাজ করাও আমার অভিনেত্রী জীবনে পরম পাওয়া।
পত্রিকা: শুনেছি, গুলজার ‘দেয়ানেয়া’ দেখে আপনাকে মুম্বইতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন!
লিলি: হ্যা।ঁ সে ’৭০ সালের কথা। মুম্বইতে ‘সম্পূর্ণ বিষ্ণুপরম’-এ অভিনয়ের সুযোগ পাই। নায়ক অসীমকুমার। সেটাই আমার প্রথম অ্যাপিয়ারেন্স মুম্বইতে। ওখানে কাজের জন্যই ফ্ল্যাট ভাড়া করতে বাধ্য হই। মুকুল দত্ত সেই সময় আমায় বললেন, গুলজার তোমার খোঁজ করছেন। এর পর উনিই আমাকে গুলজারের বাড়িতে নিজের গাড়ি করে পাঠিয়ে দেন। গুলজার কিন্তু প্রথম আলাপেই আমার সঙ্গে বাংলায় কথা বলেছিলেন। খুব ভাল বাংলা বলতেন, আর আমার হিন্দি শুনেও খুশি হয়ে ‘অচানক’-এর জন্য অফার দিয়েছিলেন।
আলাপ
পত্রিকা: আপনি এত চমৎকার হিন্দি কেমন করে বলতে পারতেন?
লিলি: আমার তখন পাঁচ বছর বয়স, ঠিক সেই সময় আমরা ঢাকা ছেড়ে চলে আসি। দেশভাগ আমাদের জীবনটাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। কলকাতায় এসে আমার বাবা ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এর ঠিক এক বছর বাদে আমরা সপরিবার মধ্যপ্রদেশ চলে যাই। আমার পড়াশোনা সব ওখানেই। তাই...
পত্রিকা: ‘অচানক’ ছবিতে কাজ করবেন বলে রাজি হলেও ছবির প্রযোজক এন সি সিপ্পিকে ফোন করতে আপনি রাজি হননি কেন?
লিলি: ওই প্রযোজকদের বাড়ি যাওয়া বা ফোন করে পি-আর করা, আমার পক্ষে কোনও দিনই সম্ভব ছিল না। গুলজারের অনুরোধেও আমি তা করিনি। শুধু কি ফোন? আমি তো টাকাপয়সা নিয়েও আজকালকার অভিনেতাদের মতো কথা বলতে পারতাম না। একটা মজার কথা বলি, একদিন দাদার-এ এস এন সাগরের একটি ছবির শু্যটিং করছি। কাজ প্রায় শেষ। এ দিকে স্বভাবদোষে, আমি তো কোনও পয়সাকড়ি চাইছিই না, ওঁরাও কিছু বলেননি। হঠাৎ একদিন একজন এসে বললেন, সাব আপনাকে ডাকছেন। আমি তো বুঝতে পারছি না কে সাব? যাই হোক, লোকটির সঙ্গে ঘরে গেলাম। ঢুকতেই দেখি প্রডিউসার এন সি সিপ্পি বসে। বললেন, তোর পয়সাটয়সা কি কিছু লাগবে না? তাতেও আমি কিছু বলছি না দেখে, বললেন, শোন, তোর আন্টি বাঙালি রান্না খেতে ভালবাসে। তুই একদিন আমাদের পাতুরি বানিয়ে খাওয়াবি, কেমন? পরে অবশ্য নিজে থেকেই পয়সাকড়ি মিটিয়ে দিয়েছিলেন। আমায় আর কিছু বলতে হয়নি।
পত্রিকা: তা’হলে পাতুরি খাইয়েই এন সি সিপ্পি প্রোডাকশনে ‘চুপকে চুপকে’-তে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয়ের অফার এল? ভয় করেনি অমন একজন সুপার স্টারের সঙ্গে অভিনয় করতে?
লিলি: নাহ্, তা কেন? মুম্বইতে ফ্ল্যাটের জন্য টাকা ধার চাইতে গিয়েছিলাম এন সি সিপ্পির কাছে। বললেন, ধার কেন? তুই আমার পরের ছবি ‘চুপকে চুপকে’তে অভিনয় কর, আর অ্যাডভান্স নে। ছবিতে আমি জয়া বচ্চনের বৌদির চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এর পর হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘আলাপ’ করলাম। সেটা করতে গিয়ে একটা মজা হয়েছিল। বাড়ির বড় বৌয়ের মেকআপ নিয়ে হৃষীদার কথামতো মেক আপ দেখাতে গিয়ে দেখি হৃষীদা দাবা খেলছেন। অমিতাভ বচ্চন দাঁড়িয়ে দেখছেন। আমি কিন্তু ওঁর সঙ্গে একটি কথাও বলিনি। তখন বরং ভয় পেয়েছিলাম যদি চিনতে না পারেন! কী দরকার বাবা!
পত্রিকা: অমিতাভ চিনতে পারলেন না?
লিলি: সে এক কাণ্ড! হৃষীদাকে মেক আপ দেখিয়ে চলে যাচ্ছি, তখন অমিতাভ পেছন থেকে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার! এর আগে একটা ছবিতে অভিনয় করেছি, আপনি কি আমায় চিনতে পারছেন না! আমি তো শুনে লজ্জার একশেষ। কোনওক্রমে বললাম, আপনি ব্যস্ত ছিলেন। তাই বিরক্ত করিনি।
সঙ্গে উত্তমকুমার
পত্রিকা: ‘আলাপ’ করতে গিয়ে রেখা-অমিতাভর অফ স্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা কেমন লেগেছিল?
লিলি: সে রকম কিছু নয়...
পত্রিকা: একসঙ্গে অভিনয় করছেন, কিছুই কি মনে হয়নি?
লিলি: (একটু ভেবে) শটের বাইরে দেখতাম, রেখা-অমিতাভ দুজনে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ওঁদের তেমন কোনও লুকোছাপা করতে দেখতাম না। বরং ওঁদের দেখলেই বোঝা যেত দু’জনের একটা বিশেষ বন্ধুত্ব আছে, অমিতাভ তো সেটে শট না থাকলে সেটেই মাঝে মাঝে গজল শুনতেন। আবার কখনও আমাদের সঙ্গেও গল্প করতেন।
পত্রিকা: এখন যোগাযোগ আছে অমিতাভ-র সঙ্গে?
লিলি: নাহ্! তবে ঋতুর (ঋতুপর্ণ ঘোষ) ‘চোখের বালি’ করার সময় ঐশ্বর্যার মারফত আমার খবর নিতেন সেটা শুনেছি।
পত্রিকা: আর ঐশ্বর্যা?
লিলি: দেখা হলেই প্রণাম করত। ‘চোখের বালি’-র সময় দেখেছি, আমাকে খুব লক্ষ করত। ওর শট না থাকলেও আমার অভিনয় দেখত। ও আসলে সব সময় কাজের মধ্যে ডুবে থাকত, যাতে অভিনয় ভাল করা যায়, আসলে প্রথম বাংলা ছবি তো! ছবিতে শেষের দিকে, একটা শটে ছিল, বিনোদিনীকে গালমন্দ করে ওর তৈরি চা গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে ফেলে দিচ্ছি। শটটা নেওয়ার পরে ঐশ্বর্যা আর ওর মা খুব হাততালি দিয়েছিল। ওদের দেখে ফ্লোরের সবাই, এমনকী টেকনিশিয়ানরাও হাততালি দিয়ে উঠেছিল। আমি তো অবাক! বললাম, এ কি যাত্রা হচ্ছে নাকি? সকলে বলেছিল এত ভাল অভিনয় তাই হাততালি না দিয়ে থাকতে পারেননি কেউ।
পত্রিকা: ‘বিপাশা’ ছবিতে তো সুচিত্রা সেনের বান্ধবীর পার্ট করেছিলেন। বাস্তবেও কি এই বন্ধুত্বটা ছিল?
লিলি: একেবারেই না! মিসেস সেন নিজের মতো থাকতেন, খুব রিসার্ভড্ ছিলেন তো! আমিও গিয়ে যে গল্প জুড়ব, এমনটা করতাম না। তবে তার জন্য কখনও শট দিতে অস্বস্তি হয়নি। মুম্বইতে থাকাকালীন পরে অবশ্য একবার দেখা হয়েছিল। তখন নিজে থেকেই খুব গল্প করেছিলেন। বলেছিলেন, তোমাকে পেয়ে একটু প্রাণ খুলে বাংলা বলা গেল। আর ‘চোখের বালি’ হচ্ছে যখন তখন রাইমা ওকে শটের ছবিগুলো দেখাতেই উনি নাকি বলেছিলেন, এই মেয়েটি তো আমার সঙ্গেও অভিনয় করেছে। ব্যস্, এইটকুই...
পত্রিকা: ‘বিপাশা’য় উত্তমকুমারও ছিলেন তো?
লিলি: হ্যাঁ ছিলেন, তবে সরাসরি আমার সঙ্গে অভিনয় কিছু ছিল না ওঁর। ‘দেয়া নেয়া’-তে সরাসরি কাজ করার সুযোগ হয়েছিল।
পত্রিকা: ‘দেয়া নেয়া’ বললেই আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘দোলে দোদুল দোলে ঝুলনা’ গানটার দৃশ্য। উত্তমকুমারের সঙ্গে অনস্ক্রিন এমন মধুর সখ্য কেমন করে তৈরি হয়েছিল? চিনতেন নাকি আগে?
লিলি: নাহ্। বরং ‘দেয়া নেয়া’-র সময় বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু উনি কেমন সুন্দর করে সহজ সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছিলেন আমার সঙ্গে। কত কিছু যে শিখেছি ওঁর কাছ থেকে!
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে
পত্রিকা: যেমন?
লিলি: ‘দেয়া নেয়া’-র সময়েরই কথা। আমি, বুড়োদা (তরুণকুমার) আর উত্তমকুমার একসঙ্গে বসে গল্প করছি। হঠাৎ উত্তমকুমার ছবির সংলাপ বলতে শুরু করলেন, বুড়োদাও বললেন, আমিও বললাম। তারপর জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা, আমরা কি রিহার্সাল দিচ্ছি? উনি বললেন, এরকম করে নর্মাল অ্যাক্টিং প্র্যাক্টিস করতে হয়, বুঝলে? কথা বলতে বলতে সংলাপে চলে গেলে অভিনয় করাটা সহজ হয়। আমিও বরাবরই নর্মাল অ্যাক্টিং-এর দিকেই ছিলাম।
পত্রিকা: আপনার মা দীপালি চক্রবর্তী আর মেজদি শেলী চক্রবর্তীর উৎসাহেই নাকি আপনার অভিনয় করতে আসা?
লিলি: আসলে মায়ের উৎসাহেই, মধ্যপ্রদেশে থাকার সময় থেকে, পাড়ায় পুজোর জন্য নাটক করেছি।
আমার মনে আছে, কোনও এক কালীপুজোর রাতে আমি প্রথম স্টেজে উঠি। এর অনেক পরে আমার মা নান্দীকার-এর সঙ্গে যুক্ত হন। মেজদিও তো নাটক করতেন। ওঁর সঙ্গে নাটকের রিহার্সালে যেতাম। এই সময় থেকেই অফিস ক্লাবে নাটক করা আরম্ভ করি। কিছু দিনের মধ্যেই ‘ভানু পেল লটারি’-তে অভিনয়ের সুযোগ আসে। পরিচালক কনক মুখোপাধ্যায়ের ভাই কুনালদা আমাকে তাঁর দাদার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন রাত্রেই জহর রায় আর কমল মিত্রর সঙ্গে অভিনয় ছিল।
পত্রিকা: তাই! ঘাবড়ে যাননি?
লিলি: একটুও না। আরে, আমি তো মধ্যপ্রদেশে মানুষ! উত্তম-সুচিত্রা ছাড়া বাংলার কাউকে চিনিই না। পরিচালক যেমন বলেছেন, অভিনয় করে দিয়েছি! কে জহর রায়, কে কী, জানতামই না! জানলে হয়ত, অভিনয় করতে পারতাম না। মনে আছে, সুবোধবন্ধুর ‘বৃন্দাবন লীলা’ আর ‘ভানু পেল লটারি’ একই সঙ্গে রিলিজ করেছিল।
পত্রিকা: দেব আনন্দকে নিয়ে নাকি আপনি পাগল ছিলেন?
লিলি: ওরে বাবাহ্! (এক গাল হাসি, চোখ কপালে তুলে) দেব আনন্দের ছবি দেখা থেকে কেউ আমায় আটকাতে পারত না। তখন মধ্যপ্রদেশে আমরা যেখানে থাকতাম, সেখানে সিনেমা হল ছিল না। সিনেমার গাড়ি আসত। গাড়িতেই একটা পর্দা থাকত, সেটা উঠিয়েই সবাইকে ছবি দেখানো হত। এ ভাবেই দেব আনন্দের ‘জাল’ ছবিটা সাত বার দেখেছিলাম। তখন আমার দশ-বারো বছর বয়স। দেব আনন্দ ছিল যেন আমার কাছে রাজপুত্তুর, পাগল-পাগল লাগত ওকে পর্দায় দেখলে। (মুখ ভার করে) তবে কেবল পর্দায় দেখলেই বোধহয় ভাল হত! পরে মুম্বইতে যখন আলাপ হল তখন ওঁর অনেক বয়স হয়ে গেছে...কথাও হল। কিন্তু সামনাসামনি দেখার পরে পাগলামির ঘোর কেটে গিয়েছিল।
শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে
পত্রিকা: আজকে দাঁড়িয়ে কি মনে হয়, মুম্বই থেকে চলে আসাটা ভুল হয়েছিল?
লিলি: জ্ঞানেশদা (মুখোপাধ্যায়), বীরু মুখোপাধ্যায়, হরিদাস সান্যাল জোর করে আমায় মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন। জ্ঞানেশদা তো বলেই ছিলেন, তোমার মতো অভিনেত্রী মুম্বইতে পড়ে থাকলে বাংলার থিয়েটার তো ক্রমশ হারিয়ে যাবে। এটা শুনে আর াকতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে কি, মুম্বইতে থাকলে হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় আর গুলজার ছাড়া আমি অন্য কারও ছবিতে অভিনয় করতেই পারতাম না।
পত্রিকা: কেন?
লিলি: আমার পক্ষে ব্যক্তিগত ভাবে প্রোডিউসার বা ডিরেক্টরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিনয় চেয়ে বেড়ানো সম্ভব ছিল না। এখানে এসে নাটকে ডুবে গেলাম। ‘না’ নাটকে অভিনয় করলাম।
পত্রিকা: চেহারা থেকে কণ্ঠস্বর, নায়িকা হওয়ার সমস্ত গুণই আপনার মধ্যে ছিল, উত্তমকুমার থেকে অমিতাভ বচ্চন স্টারদের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা যাঁর ঝুলিতে, তাঁকে এই সময়ে সিরিয়াল করে চুপচাপ থেকে যেতে হল?
লিলি: আমার কোনও লোভ নেই। দেখুন নায়িকা, চরিত্রাভিনেত্রী, বড় রোল, ছোট রোল, এসব নিয়ে কখনই মাথা ঘামাইনি। তবে যা পেয়েছি সেটাকে খুশির সঙ্গে মেনে নিয়েছি। আমি অনেক গুণী মানুষের সঙ্গ পেয়েছি যা আজকের বহু নামকরা অভিনেত্রীরা পায়নি। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, আগে যে ধরনের কাজ করেছি আর এখন যা করছি তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।
পত্রিকা: এখন কী করছেন?
লিলি: ‘সতী’ সিরিয়ালে কাজ করলাম। এবার ‘দ্বিরাগমন’ করছি। খুব টানা সিরিয়ালের কাজ করব না আর। সেই শর্তেই ছোট একটা পার্ট করছি। একদিন বাবাকে সাহায্য করার জন্য, সংসার চালাতে অভিনয়কে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে ছাপ্পান্নটা বছর পেরিয়ে গেল। আজ মনে হয় অভিনয় আমার দ্বিতীয় প্রেম ছিল...
পত্রিকা: আর প্রথম প্রেম?
লিলি: স্বামী।
কপালে আজও সেই ‘আলাপ’-এর বাড়ির বড় বৌয়ের টিপ, তাঁর ঠিক সামনেই টেবিলে রাখা অমিতাভ আর তাঁর ‘আলাপ’ সিনেমার অভিনয়ের একটি ফ্রেমবন্দি ছবি দেখলাম এক মায়াময় দৃশ্য!
বিকেলের নরম রোদ এসে পড়েছে সেই ছবির ওপর, রোদের আলোয় অমিতাভ আর লিলির ‘আলাপ’-এর দৃশ্য, ছায়া হয়ে পড়েছে আজকের লিলি চক্রবর্তীর চোখ ঢাকা বড় ফ্রেমের কাচে। কাকে দেখব? চোখের তারা? নাকি তারার চোখ...