চমৎকার রাজনৈতিক প্রহসন

চন্দন সেন-এর নাটকে। লিখছেন মনসিজ মজুমদার।রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পিতপ্রাণ বিখ্যাত লেখক স্বদেশ বাগান নিয়ে মত্ত। আগের সমমতবাদী বন্ধুদের একজন, পাড়ায় চব্বিশ ঘণ্টা ফুটবল প্রতিযোগিতার এক প্রৌঢ় খেলোয়াড়, পুরমাতা ও শাসকদলের এক ক্যাডারsssss মূলত এই চার জন ও স্বদেশের সংলাপ নিয়ে সংস্তবের ‘স্পর্ধাবর্ণ’ (রচনা: চন্দন সেন, পরিচালনা: দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়) নাটক। পরে একটি ঘটনায় স্বদেশের ব্যক্তিত্বে এক অতিনাটকীয় পরিবর্তন আসে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share:

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে কর্তৃপক্ষের কাছে সমর্পিতপ্রাণ বিখ্যাত লেখক স্বদেশ বাগান নিয়ে মত্ত। আগের সমমতবাদী বন্ধুদের একজন, পাড়ায় চব্বিশ ঘণ্টা ফুটবল প্রতিযোগিতার এক প্রৌঢ় খেলোয়াড়, পুরমাতা ও শাসকদলের এক ক্যাডারsssss মূলত এই চার জন ও স্বদেশের সংলাপ নিয়ে সংস্তবের ‘স্পর্ধাবর্ণ’ (রচনা: চন্দন সেন, পরিচালনা: দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়) নাটক। পরে একটি ঘটনায় স্বদেশের ব্যক্তিত্বে এক অতিনাটকীয় পরিবর্তন আসে। নাটকের শুরু থেকে দর্শক অনেক ক্ষণ মজে থাকেন স্বদেশের ছদ্মগম্ভীর উচ্চারণে নয়া জমানার কুৎসা শুনে এবং খেলোয়াড়,পুরমাতা ও ক্যাডারের প্রহসনরঙ্গ দেখে। জমে ওঠে চমৎকার রাজনৈতিক প্রহসন। দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বদেশ সেই প্রহসনের আদর্শ নায়ক। তিনি ধর্মেও আছেন জিরাফেও আছেন। কিন্তু যখন খবর আসে সলিল চৌধুরীর গান গাওয়ার অপরাধে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, তখনই প্রযোজনার মেজাজ পাল্টে যায়। ব্যঙ্গ-কৌতুক চাপা পড়ে সিরিয়াস রাজনৈতিক তর্কে। শেষ হয় আই পি টি এ-র নাটকের মতো জোরালো আশাবাদী/ প্রতিবাদী ঘোষণায়। মুশকিল হল স্বদেশের পরিবর্তনে দর্শকের প্রত্যাশার পরিবর্তন হয় না, হয় না স্বদেশের দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। স্বদেশ এখন ধর্ম বা জিরাফ কোনওটাতেই নেই, আছেন বহুরঙা পাপড়ির গণতান্ত্রিক গোলাপ ফোটানোয়। কেবল দ্বিজেন যেন এখনও আগের স্বদেশ, তাঁর স্বরক্ষেপণের চড়া মাত্রা ও গাম্ভীর্য সত্ত্বেও। প্রযোজনার সফলাংশের একক স্থপতি দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনয়ে ও পরিচালনায়। বিশেষ করে সুনীল মুখোপাধ্যায়, সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজু মণ্ডল, নিজের নিজের ভূমিকায় স্বাক্ষর রেখেছেন।

Advertisement

Advertisement

একক পাঠে মধুমিতা বসু

নতুন করে পাওয়া

সুলগ্না বসু

‘অন্য আমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মধুমিতা বসুকে পাওয়া গেল একক আবৃত্তির আসরে। অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন শ্রাবণী সেন ‘অমল ধবল পালে’ গানটির আবেগময় নিবেদনের মাধ্যমে। কথন-দক্ষতায় পারদর্শী মধুমিতা টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণ, মধুর সম্পর্কের ইতিকথার বুনোটে তৈরি করলেন আসরের চালচিত্রখানি এবং তারই সঙ্গে গেঁথে নিলেন তাঁর চয়নের কবিতাগুচ্ছ। সেই নিবেদনে উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি ছিল ‘পরিচয়’, ‘জন্মভূমি আজ’, ‘বীরপুরুষ’, ‘নন্দলাল’, ‘মালতীবালা’, ‘যমুনাবতী’। কয়েকটি কবিতার সঙ্গে কোরিওগ্রাফি ছিল দৃষ্টিনন্দন। এছাড়াও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে তিনি অংশ নিলেন শ্রুতিনাটকেও। তবে ‘রক্তকরবী’র নির্বাচিত অংশ পাঠে প্রার্থিত রাবীন্দ্রকতা অধরা রয়ে গেল।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ইন্দ্রাণী সেন আন্তরিক কথকতার ভঙ্গিতে মধুমিতার সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক সম্পর্কের স্মৃতিচারণা করলেন। গানও শোনালেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অলকানন্দা রায়, প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ। আয়োজক পিকাসো।

শিশির মঞ্চে কাব্যায়নের অনুষ্ঠানে

আবৃত্তি ও পরম্পরা

বারীন মজুমদার

জগন্নাথ বসু এ বার ব্রততীর পিতার স্মরণে প্রদত্ত মঞ্জুল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি সম্মানে ভূষিত হলেন। একই সঙ্গে ভূষিত হলেন ঊর্মিমালা বসুও। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পুরস্কার প্রদান আবৃত্তি শিল্পের পরম্পরাকে রক্ষা করা। তাই শিশির মঞ্চে কাব্যায়নের নামকরণ ছিল ‘পরম্পরা’।

আগামী শিল্পীর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের সফল হবার চাবিকাঠি। সেই স্বপ্নই দেখিয়েছেন ব্রততী, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের। কাব্যায়নের অনেক শাখা প্রশাখা। তার মধ্যে ১৬ জন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষককে নির্বাচন করে বাইশ বছরের অনুষ্ঠান পালন করলেন তাঁরা। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রযোজনাটিতে বিভিন্ন ধারার কবিদের বহুমুখী রচনার মাধ্যমে বাংলা কবিতার ক্রমবিকশিত রূপটিকে বুঝে নিতে সাহায্য করে। যেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তেমনই ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, নীরেন্দ্রনাথ চত্রবর্তী থেকে একালের জয় গোস্বামী। এগুলি উদাহরণ মাত্র। যে শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রত্যেকের যে সমান দক্ষতায় উন্নীত হয়েছেন তা নয়, বরং কারও কারও মধ্যে একটু আড়ষ্টতা লক্ষ করা গেছে। আবার কেউ বা সামান্য স্নায়ুর চাপে ভুগেছেন। কিন্তু এ কথা স্বীকার করতেই হবে প্রত্যেকের কণ্ঠ ভাল। উচ্চারণ পরিষ্কার। চেষ্টাও করেছেন জড়তাহীন থাকার। সংকলনের পূর্ণতা প্রদানের ক্ষেত্রেও যে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে তাও উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতের পথ তাঁদের মসৃণ কিনা এ কথা সময়ই বলবে। তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে দু’একজন ব্যতিরেকে কারও মধ্যে অপেশাদারিত্বের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আরও কয়েক জনকে তাঁদের গুরুকে অনুকরণ করার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হবে। শিল্পীদলে ছিলেন নিবেদিতা গঙ্গোপাধ্যায়, কৃত্তিকা বিশ্বাস, সঞ্চিতা কবিরাজ, শ্রাবন্তী বিশ্বাস, শিখা রায়, বুলা বাগচি, গার্গী চক্রবর্তী, দেবারতি চৌধুরী, নরেশ নন্দী, পিয়ালী ঘোষ, শ্রবণা শীল, শ্রাবন্তী বসু, সৌম্যশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রাবণী ভট্টাচার্য, সুস্মিতা চক্রবর্তী, সাম্য কার্ফা। প্রত্যেকের চয়নে ছিল দুটি করে কবিতা। সঞ্চালনায় ছিলেন মৌসুমী ভট্টাচার্য ও ঋতুপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়।

হাসির আড়ালে

পিনাকী চৌধুরী

ইমু নাট্য সংস্থা নিবেদিত ধ্রুব বসুর নাটক ‘ঘুমতন্ত্র’। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র উজ্জীবন ভোলাভালা লোক। সে কবিতা লেখে, গানও করে। সঙ্গে থাকত গাধা। আদ্যন্ত হাসির নাটক হলেও নাট্যকার যেন কোথাও আমাদের সমাজব্যবস্থার অন্য দিকটা আঙুল তুলে দেখিয়েছেন। একদিন স্থানীয় এক মাতব্বর তাকে ভোটের কবিতা লিখতে বলে। তার সালিশি সভার নাম ‘ঘুমতন্ত্র’, যেখানে ঘুমন্ত সভায় প্রথম দিনে উজ্জীবন যায় না। কিন্তু ভক্ষণের কোটাল এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে জরিমানা করা হয়। সে কিছুটা বাধ্য হয় কবিতা লিখতে। এর পর আবর্তিত হতে থাকে নাটকের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ। কিন্তু নাটকের শেষ দৃশ্যে ছিল বড় চমক। দেখা যায়, উজ্জীবন যখন গাধার সঙ্গে মিশত, তখন সে মানুষ ছিল, কিন্তু সে যখন মানুষের সঙ্গে মিশল, তখন যেন সে সত্যি গাধা হয়ে গেল। উজ্জীবনের ভূমিকায় গোপাল বসু এবং ভক্ষণের ভূমিকায় সুব্রত ভট্টাচার্যের অভিনয় প্রাণবন্ত। ইরানী মুখোপাধ্যায়, মনীষা সেন ও তাপস ভট্টাচার্য যথাযথ। ভাল লাগে শৌভিক সর্দার এবং সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, শালিনী দাসকে। নাটকটি পরিচালনা করেছেন ইরানী মুখোপাধ্যায়।

সুনির্বাচিত

একক গানে শাশ্বতী সেনগুপ্তের প্রতিটি গানই ছিল সুনির্বাচিত। শুরুতেই গাইলেন ‘আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে’। অপূর্ব গায়কি। পরে ‘আজি তোমায় আবার’, ‘আজি মেঘের কোলে কোলে যায় যে চলে’, ‘আজি গোধূলি লগনে’ গানগুলি অন্য মাত্রা এনে দেয়। দ্বিতীয় পর্বে তাঁর গাওয়া গানগুলির মধ্যে রয়েছে ‘আজি ঝড়ের রাতে’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘কে দিল আবার আঘাত’।

সব সুন্দর নয়

পিনাকী চৌধুরী

সম্প্রতি কলামন্দিরে অনুষ্ঠিত হল পাঠভবন প্রাক্তনীর অনুষ্ঠান। প্রথমে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে নাটক ‘শেষ থেকে শুরু’ মঞ্চস্থ হয়। আদ্যন্ত মজার নাটক। অভিনয় ও নির্দেশনার গুণে নাটকটি মনে রাখার মতো। ভোলার চরিত্রে সায়ন্তন রায় সাবলীল। নীলমণির চরিত্রে শুভায়ন মুখোপাধ্যায় নজর কাড়ে। নির্দেশনায় ছিলেন শুভদীপ চক্রবর্তী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement