আয়নায় নিজেকে পরখ করে নিচ্ছেন মিস জে
বাবা-মায়ের দেওয়া নামের বাইরেও ওঁদের সবার আলাদা একটা করে নাম ছিল। ‘স্টেজ নেম’।
হোটেলের ডান্স ফ্লোর বা থিয়েটারের স্টেজে ওঠার জন্য যে নাম নিতে হত ওঁদের।
আরতি দাস যেমন হয়েছিলেন ‘মিস শেফালি’, জয়শ্রী সরকার ‘মিস জে’। এ ভাবেই মণিমালা দাস থেকে ‘মিস মালা’, মমতা রাজবংশী থেকে ‘মিস মনিকা’।
আরও অনেকে ছিলেন। মিস মিতা, মিস রূপালী, মিস শোভনা। একটা সময় শহর কলকাতার নাগরিক বিনোদনে ওঁদের ‘মিস’ করার কোনও উপায় ছিল না।
সাহেবি কেতার পাঁচ তারা হোটেলের ডান্স ফ্লোর থেকে ক্যাবারে ততদিনে এসে নেমেছে বাঙালির পাবলিক থিয়েটারে, পাড়ার রাত-জাগা জলসায়। শিক্ষিত বাঙালি যতই নাক সিঁটকে মুখ ঘুরিয়ে থাকুক, আমজনতা কিন্তু হামলে পড়ে দেখেছে ওঁদের।
প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে খুব সাবধানে ফ্রেমবন্দি ছবিটা বের করলেন মিস জে। কাচটা ফেটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পাশে দাঁড়িয়ে, নাচের পোশাকে। “এই দেখুন, রেড ক্রস চ্যারিটি বলের পর তোলা গ্রুপ ফটো, পার্ক হোটেলে। স্যর সস্ত্রীক এসেছিলেন। আমি কিন্তু এক পয়সা নিইনি। পুরোটা চ্যারিটিতে গিয়েছিল।”
মঞ্চে মিস জে
কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “অথচ ওঁর মন্ত্রী, বুদ্ধদেববাবু (ভট্টাচার্য) বললেন, অপসংস্কৃতি! শিশির মঞ্চে ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’ নাটক হওয়ার কথা। আমার একটা নাচের সিন ছিল। কিন্তু উনি পুরো নাটকটাই বন্ধ করে দিলেন!”
মিস শেফালির অ্যালবামেও আছে পুরনো ছবি। বিশ্বরূপা থিয়েটারে চৌরঙ্গি নাটকের সহস্র রজনীর অভিনয়ের গ্রুপ ছবিতে সহাস্য মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়।
চৌরঙ্গি নাটকে ক্যাবারে ডান্সার কনি-র চরিত্রে অভিনয় করেই মধ্যবিত্ত গেরস্থের ঘরে হইচই ফেলেছিলেন মিস শেফালি। বাংলা থিয়েটারে ক্যাবারের সেই শুরু। তবে বিশ্বরূপা কনি-র রোলের জন্য প্রথম ডেকেছিলেন মিস জে-কে। তখনও অবশ্য জয়শ্রী। বিশ্বরূপার মালিক রাসবিহারী সরকার নামটা ছেঁটেকেটে মিস জে করে দিলেন। “কিন্তু পয়সা দিত না জানেন! বলেছিল মাসে ৭০০ টাকা দেবে, সেটাও ঠিকমতো দিত না। তখন ফিরপোজ হোটেল থেকে একদিন বলল, বম্বেতে রিৎজ কন্টিনেন্টাল বলে ওদের একটা হোটেল আছে, সেখানে ক্যাবারে ডান্সার দরকার। দুচ্ছাই বলে চলে গেলাম বম্বে।” মিস জে চলে যাওয়ায় নিরূপায় ‘বিশ্বরূপা’ দশ গুণ বেশি পয়সা দিয়ে ওবেরয় গ্র্যান্ডের মিস শেফালিকে প্রায় হাতে-পায়ে ধরে ডেকে এনেছিল।
এখন মিস জে
সেই সত্তরের দশকে মিস শেফালি ওবেরয় গ্র্যান্ডের প্রিন্সেস ডিস্কোর স্টার ডান্সার। রাতের কলকাতা সম্মোহিত তাঁর নামে। থিয়েটারে যোগ দেওয়ার পর হেসেখেলে মাসে ২০-২২ হাজার টাকা রোজগার করতেন।
সবাই ওই উচ্চতায় পৌঁছতে না পারলেও আশির দশক পর্যন্ত ক্যাবারে ডান্সারদের কাজের অভাব হয়নি। মিনার্ভা থিয়েটারে ফার্স্ট সিন শেষ করেই সারকারিনায় থার্ড সিন। সেখান থেকে ঝট করে রামমোহন মঞ্চে একটা সিন সেরে সোজা প্রতাপ মঞ্চ। সেখানে ইন্টারভালের পরেই এন্ট্রি। থিয়েটারের ‘সিজন’ চললে এক একজন ক্যাবারে ডান্সার একসঙ্গে তিন চারটে নাটকে কাজ করতেন।
হলের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত, দৌড়ে বেড়াতেন ওঁরা। কিন্তু খাটনিই সার। যাদের নাম নেই, তাদের দামও নেই। “টাকা বাকি পড়ে থাকত বছরভর। একেকটা হলের সঙ্গে মাসে দেড়-দু’হাজারে কনট্র্যাক্ট হত। কিন্তু কখনও সব ক’টা জায়গার পাওনা টাকা পুরোটা হাতে পাইনি। ফলে যখন যা আসত, সংসারের পিছনেই খরচ হয়ে যেত।” বলছিলেন মিস মালা।
মণিমালা দাস। এখন সোদপুরের বাসিন্দা। বড় মেয়েকে ক্লাস টেন অবধি পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে কলেজে সেকেন্ড ইয়ার, টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালায়। কিন্তু সামাল দিতে পারছেন না বছর চল্লিশেকের মণিমালা। স্বামী চাকরি করতেন, সে অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাও ছোটখাটো কাজ থাকত হাতে, কিন্তু তিনিও এখন প্রায়ই অসুস্থ।
বহু সুপারহিট থিয়েটারের মধ্যমণি মিস শেফালি
“খুব কষ্টে আছি, বুঝলেন দাদা। নাচ ছাড়া তো আর কিছু শিখিনি, আর কোনও কাজ করতে পারব না। যদি কোথাও থেকে একটু সাহায্য...,” বলতে বলতে গলা ধরে এল মিস মালা-র। টাকা চাইলেই হল মালিক বা ম্যানেজাররা বলত, সেই হপ্তায় নাকি এক্কেবারে সেল হয়নি। দু’একশো টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলত, আপাতত এতেই চালা। পরের হপ্তায় দেখছি। কিন্তু সেই সুদিন আর আসত না। অথচ মিস মালা-র নামেও এক সময় হুড়মুড়িয়ে টিকিট বিক্রি হয়েছে।
“এখন শুনলে মনে হবে বানিয়ে বানিয়ে বলছি। কিন্তু সত্যিই একদল লোক ছিল, যারা মুখস্থ রাখত কখন কোন হলে, কোন নাটকের কোন সিনে আমার নাচ রয়েছে। ওরা প্রায় আমার পিছন পিছন ঘুরত। যখন যে হলে ঘুরতাম, ওরাও টিকিট কেটে ঢুকে পড়ত।” ম্লান হাসলেন মিস মালা। আর মিস শেফালি যে-নাটকে থাকতেন, তার টিকিট না পেয়ে হলে ভাঙচুর তো ছিল প্রায় রোজকার ঘটনা। “চৌরঙ্গি নাটকে আমার ছবিই পোস্টারে, বিজ্ঞাপনে বড় করে দিতে শুরু
সাজঘরে মিস শেফালি
করেছিল বিশ্বরূপা। সেই নিয়ে খুব খেপে গিয়েছিলেন সিনিয়র আর্টিস্টরা”, মুচকি হাসি মিস শেফালির ঠোঁটে।
আসলে সত্যিই একটা সময় এসেছিল, যখন এই ক্যাবারে ডান্সাররাই হয়ে উঠেছিলেন বাংলা থিয়েটারের বক্স আর্টিস্ট। মিস জে বলছিলেন, “কত বার দেখেছি, আমার নাচ শেষ হলে হল ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সবাই বলত, দেখেছ, কত লোক আসে শুধু তোমার নাচ দেখার জন্যে।”
কথাটা বলতে বলতে হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন মিস জে। তার পর স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বললেন, “কথাগুলো মাথায় ঢুকে গিয়েছিল। একদিনও কামাই করতাম না, দেরি করতাম না। বাবা মারা গেল, নিমতলা শ্মশানে তাঁকে দাহ করে এসেই বসে পড়েছি মেক আপ নিতে। রঙমহলে তখন ‘পিউ কাঁহা’ নাটকে কাজ করছি। কিন্তু কী হল এত কিছু করে! ক’টা লোকই বা মনে রাখল আমাকে!”
তখনও নিয়মিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে নাচছেন মিস জে। ওদিকে ওবেরয় গ্র্যান্ডে মিস শেফালি, আর অভিনয় করছেন সারকারিনায় ‘সম্রাট ও সুন্দরী’ নাটকে। এক থিয়েটার হলের মালিক আর এক জন ক্যাবারে নর্তকীকে নিয়ে শঙ্করের লেখা উপন্যাস-নির্ভর সেই নাটক তখন সুপার হিট। সে সময় আরও নতুন নতুন মেয়েও আসছে ক্যাবারে নাচতে। থিয়েটারে, হোটেলে। সেটা ১৯৭৯ সাল। নাগরিক বিনোদনে ক্যাবারের ওটাই সম্ভবত তুঙ্গমুহূর্ত।
কিন্তু তার পর থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করল। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে তত দিনে কিছুটা গুছিয়ে বসেছে। অপসংস্কৃতির ‘জঞ্জাল’ সরিয়ে শুদ্ধকরণের একটা প্রশাসনিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখনও ক্ষোভ মিস শেফালির গলায়, “সবাই বলল থিয়েটার থেকে ক্যাবারে হটাও। রীতিমত বিক্ষোভ হল থিয়েটারপাড়ায়। আমরা নাকি সব নষ্ট করে দিচ্ছি। কিন্তু যারা আমাদের ডেকে নিয়ে এসেছিল, তাদের দিকে কেউ আঙুল তুলল না!”
যদিও মিস শেফালি নিজেই মানেন যে সেই সময় ক্যাবারের নামে অনেক নোংরামোও হয়েছে থিয়েটারের স্টেজে। নাচের ‘ন’ জানে না, এমন অনেক ভুঁইফোড় ‘মিস’ তখন পেশাটার নাম খারাপ করেছিল। ফল ভুগতে হয়েছিল সবাইকে।
তার পরেও অনেকে প্রতিকূল স্রোতে ভেসে থাকার চেষ্টা করে গিয়েছেন। মিস মিতা। ক্যাবারে নাচের পাশাপাশি চুটিয়ে অভিনয় করতেন কমার্শিয়াল স্টেজে, অ্যামেচার থিয়েটারে। তখনও ব্যাঙ্কে, ক্লাবে ‘ফিমেল রোল’ করার ডাক আসত প্রচুর। রঙ্গনা, বিজন থিয়েটার, সারকারিনা, রঙমহল, স্টার, বিশ্বরূপা তখনও সরগরম। একটা না একটা কাজ জুটেই যেত। মিতা থাকতেনও থিয়েটারপাড়ার মধ্যেই। বিশ্বরূপায়, সাবেক শ্রীরঙ্গমে নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ির ঘর ছিল যেটা, সেই ঘরে। বিশ্বরূপা-র মালিক রাসবিহারী সরকারের ভাড়াটে ছিলেন। প্রমোটিং হবে বলে প্রথম তো বিশ্বরূপা-ই বন্ধ হয়। ঠাঁইনাড়া হয়ে আপাতত মিতার ঠিকানা রাজারহাট। কিন্তু থিয়েটার হলই তো সব বন্ধ। কাজ নেই। একটা সময় সিনেমাতেও ছোটখাটো রোল পেয়েছেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা
এখন মিস শেফালি
ফেলুনাথ’ ছবিতে মছলিবাবার ভজনের দলে চোখ বুজে মাথা দুলিয়ে হাতে তাল দেওয়া। ডায়লগ ছিল না। ‘ডাক্তার প্রিয়া’ ছবিতে দু’লাইনের ডায়লগ, মনে আছে এখনও। কিন্তু সেই রাজারহাট থেকে টালিগঞ্জ পাড়ায় কাজ খুঁজতে আসা এখন আর পড়তায় পোষায় না।
আসলে ঠিকানা বদল হয়েছে সবারই। দায়ে পড়ে। ওবেরয় গ্র্যান্ডে মিস শেফালির নিজস্ব সুইট ছিল। আর সার্কাস এভিনিউতে রাজসিক ফ্ল্যাট। এখন থাকেন নাগেরবাজারের কাছে বাপুজি কলোনির দু’কামরার ছোট্ট এক ফ্ল্যাটে। ভাল করে রোদও ঢোকে না। শ্বাসকষ্ট আছে। আরও নানা উপসর্গ। অথচ একটা সময়ে দুহাতে রোজগার করেছেন আর চার হাতে বিলিয়েছেন। সসঙ্কোচে বলেন, “কোনও দিন টাকা গুনে দিইনি। ব্যাগের মধ্যে খামচা মেরে হাতে যা উঠত দিয়ে দিতাম।”
এখন আর কোনও রোজগার নেই, কিন্তু কী আশ্চর্য, এখনও নাকি দান-ধ্যানের বদভ্যেস যায়নি। “খুব বড় মনের মানুষ শেফালি। ওর মতো মেয়ে হয় না”, বলছিলেন মিস জে।
মিস মালাও জানালেন দিদি যখন যা পারেন সাহায্য করেন। মিস মিতা বললেন, “দিদি একবার নাচের ইস্কুল করেছিলেন, সেখানে নাচ শিখিয়ে রোজগার হত।” কিন্তু স্বজনদের বৃত্তের বাইরে ওঁদেরকে দেখার, খোঁজ নেওয়ার আর কেউ নেই।
“আচ্ছা, আমরা তো আর্টিস্ট বলুন? এই সরকার আর্টিস্টদের জন্য এত কিছু করে, আমাদের একটা পেনশনের ব্যবস্থা করতে পারে না?” অসুস্থ ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে বললেন মিস জে।
খুব ছোটবেলায় মা-মরা জয়শ্রীকে কোলেপিঠে মানুষ করেছেন রানি মহলানবিশ। মান্না দে-র কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে খুব ভালবাসতেন। ১০ বছর বয়সে স্টার থিয়েটারে ‘বেবি জয়শ্রী’-কে প্রথম নাচের অনুষ্ঠান করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ওরিয়েন্টাল নাচের অনুষ্ঠান করতে পশ্চিম এশিয়ার বহু দেশ ঘুরেছেন। এখন জানতে চাইছেন, তিনি ভাল করে বুঝিয়ে বললে বুঝবে না সরকার? চোখের জল লুকোবার জন্য কথা বলতে বলতে মুখ ঘোরান মিস শেফালি, “এত লোক চেনে জানে, এত কাজ হয়, কিন্তু কেউ এসে বলে না এই ছোট রোলটা করো!” স্বয়ং সত্যজিৎ রায় যাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবির জন্য।
এঁদের সবার অনেক পরে, একেবারে শেষের দিকে ক্যাবারে নাচতে এসেছিলেন মিস মনিকা। মমতা রাজবংশী। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। গ্রেট ইস্টার্ন আর ট্রিংকাস-এ মনিকা নিয়মিত নাচতেন। নিউ ইয়ার্স ইভের অনুষ্ঠানে শহরের অন্যান্য হোটেলেও শো হত। এছাড়া কলকাতা আর দুর্গাপুর, জামশেদপুর, গুয়াহাটির মতো শহরের ক্লাবগুলো থেকে ডাক আসত পালা-পার্বণে। এখন সব বন্ধ।
হতাশার থেকেও বেশি ক্ষোভ মনিকার গলায়, “এতগুলো মেয়ের রুটি-রুজি বন্ধ করে দিল এক কথায়! আমরা কী খাব কেউ ভাবল না। অথচ সিঙ্গিং বারগুলোয়, কলকাতার বাইরের হোটেলে কী চলে, সেটা পুলিশও দেখে না পাবলিকও দেখতে পায় না!”
“আর কোনও দিন নাচতে পারব না। বার বার পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়ার আর কিছু নেই। তার উপর জোরে হাঁটলেও এখন এমন হাঁফ ধরে, কথা বলতে পারি না। পেটে আলসার। চোখের ডাক্তার বলল নাকি গ্লকোমা হয়েছে। কিন্তু মিউজিক শুনলে এখনও সে পোড়া চোখে জল আসে।” তালতলার এক তস্য গলির ভাঙাচোরা বাড়ির নড়বড়ে দোতলার অগোছালো ঘরে বসে বলছিলেন মিস জে।
চারদিকে স্তূপাকৃত প্লাস্টিকের পুঁটলি, খালি কৌটোকাটা, শিশি-বোতল। দেওয়ালে অজস্র তারিখ ফুরিয়ে যাওয়া ক্যালেন্ডারে ঠাকুর দেবতার ছবি। রামকৃষ্ণদেব, মা সারদা আর বিবেকানন্দের তিনটি ছবি ছাড়া আর একটিই বাঁধানো ছবি ঘরে। সহাস্য উত্তমকুমার। সেটাও ফটোগ্রাফ নয়, ক্যালেন্ডারের ছবি।
নিজের মনেই বলে যাচ্ছিলেন, “ওসব প্রেম ভালবাসা কোনও দিন হয়নি। নাচ তো একটা সাধনা, তাই না! সাধনায় ব্যাঘাত হত তা হলে।”
মনে পড়ল মিস শেফালির কথা। জীবনের সব প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, শুধু নাচকে ভালবেসেছিলেন বলে। ভয় ছিল, সংসারে বাঁধা পড়লে যদি আর নাচতে না পারেন! সে কথা বলতে গিয়ে এখনও চোখ ঝাপসা হয় তাঁর।
রাতের শহর এখনও আমোদে মাতে। রঙিন আলোয় শুধু চিকমিক করে ওঁদের চোখের জল।