রাঁধিব যতনে...

রান্নার হাজারো পদ্ধতির হাত ধরেই আসে খাবারের অগুনতি পদ। আর তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে রান্নার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতেই বদলে যায় খাবারের চেহারা, রং, গন্ধ। হয় স্বাদবদল।রান্নার হাজারো পদ্ধতির হাত ধরেই আসে খাবারের অগুনতি পদ। আর তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে রান্নার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতেই বদলে যায় খাবারের চেহারা, রং, গন্ধ। হয় স্বাদবদল।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

বারবিকিউ

যতই বিশ্বায়নের যুগে এখানকার রান্নার সঙ্গে মিলে যাক অন্য প্রান্তের রান্না, যতই হেঁশেলের তাকে সুখে ঘরকন্না করুক দেশি-বিদেশি আনাজ, মশলাপাতির পসরা, একটা সময়ের পর বেশির ভাগ উপকরণের স্বাদই তো নেওয়া হয়ে যায়। তা হলে নতুনত্ব আর থাকল কী? অবশ্যই আছে। আর তা হল রান্নার পদ্ধতিতে। মানে, ছানা বা ইলিশের স্বাদ তো আর অজানা নয়। কিন্তু রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতিতেই বারবার বদলে যায় খাবারের স্বাদ। যার জন্য যত বারই পাতে পড়ে গরম গরম ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভাপে, স্মোকড হিলসা অথবা ছানা ভাজা, ছানার কোপ্তা, ছানার পায়েস... আমরা প্রায় সকলেই চেটেপুটে খাই। তাই একই অঙ্গে ভিন্ন রূপদর্শনের মতোই জেনে নেওয়া যাক রান্না করার বেশ কয়েকটি পদ্ধতির কথা।

Advertisement

তাপের কথা মাথায় রাখলে রান্নার পদ্ধতিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়— ড্রাই হিট আর ময়েস্ট হিট।

Advertisement

ড্রাই হিট কুকিং মেথড

সহজ ভাষায় এই পদ্ধতিতে রান্নায় জল ব্যবহার করা হয় না। উপকরণ শুকনো রাখা হয় ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উপাদান নিজেদের রসে জারিত হতে থাকে। রান্নায় জল যোগ করা হলেও তা রান্নার পদ্ধতিতেই শুকিয়ে যায়।

বেকিং: খাবার রান্না করা হয় কনভেকশন হিটিংয়ের মাধ্যমে। একটা বদ্ধ এলাকায় তাপ আটকে রেখে ও নিয়ন্ত্রণ করে রান্না করা হয়। তাই বাড়িতে ওটিজি, মাইক্রোভেন না থাকলেও সহজেই প্রেশার কুকারে কেক বেক করা সম্ভব। আবার কড়াইয়ে বালি বা নুনের পরত রেখে বায়ুনিরোধক করে দিব্যি বানিয়ে ফেলা যায় কেক।

প্যান ফ্রাইং: এ ক্ষেত্রে আগুনের আঁচ থাকতে হবে মাঝারি। পাত্রে তেল দিয়ে উপকরণ ভেজে তুলে নিতে হবে। প্যান ফ্রাইং পদ্ধতিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

ডিপ ও শ্যালো ফ্রাইং: ডুবো তেলে কোনও উপকরণ মুচমুচে করে ভেজে তুলে নেওয়ার পদ্ধতিই হল ডিপ ফ্রাইং। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হোক বা ডিমের ডেভিল... ছাঁকা তেলে লালচে করে ভাজার জন্য এ ক্ষেত্রে জরুরি ডিপ ফ্রাইং মেথড। খেয়াল রাখতে হবে, তেল যেন গনগনে গরম থাকে ও যা ভাজা হচ্ছে, সেই উপাদানটি যেন তেলে নিমজ্জিত থাকে। অন্য দিকে অল্প তেলে কম পরিমাণ উপকরণ সেঁকে সেঁকে ভেজে নেওয়ার পদ্ধতিকে বলা যেতে পারে শ্যালো ফ্রাইং। তেলের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে শ্যালো ফ্রাইংয়ের রকমফের আছে।

সতেয়িং: গনগনে আগুনের আঁচে, অল্প তেল ব্যবহার করে চটজলদি রান্নার পদ্ধতি হল সতে। তাপমাত্রা বেশি থাকার দরুন উপকরণ থেকে ময়েশ্চার বেরিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। খাবারের উপকরণ থেকে ফ্যাট বেরিয়ে গেলে তাকে সরিয়ে নিয়ে কোনও স্টক দিয়ে সাঁতলে নেওয়া যেতে পারে।

গ্রিড্‌ল: সলিড ধাতব প্লেট অর্থাৎ গ্রিডলে তেল গরম করে বার্গার, সসেজ বা পেঁয়াজ ভেজে নেওয়া হয়। প্রয়োজনে লালচে করার জন্য খাবার উল্টে-পাল্টে নিতে হয়।

স্টার ফ্রাইং: কড়াইয়ে অল্প তেল গরম করে ঝিরিঝিরি করে কাটা আনাজ চটজলদি রান্না করে নামিয়ে নেওয়ার পদ্ধতিই হল স্টার ফ্রাইং।

গ্রিলিং: সরাসরি আঁচের উপর ড্রাই হিট কাজে লাগিয়ে খাবার গ্রিল করা হয়। প্রাথমিক ভাবে দরকার গ্রিলিং র‌্যাকের। তার তলায় আগুন ধরিয়ে র‌্যাকের উপর আনাজ, মাছ রেখে গ্রিল করা হয়। প্রয়োজন মতো তেল, ঘি বা মাখন দিতে হয় বারবার। গ্রিলার, গ্রিল প্যান বা গ্রিডলে খাবার গ্রিল করা যায়। খাবার একদম পুড়েও যাবে না, অথচ কাঁচা থাকার সম্ভাবনাও যেন না থাকে... ধৈর্য ধরে খেয়াল রাখতে হয় সে দিকে।

বারবিকিউ: বারবিকিউয়ের পদ্ধতি গ্রিলিংয়ের প্রায় কাছাকাছি। তবে বারবিকিউয়ের ক্ষেত্রে খাবারের উপর আঁচ সরাসরি লাগে না। কয়লা বা কাঠকয়লার ঢিমে আঁচ ও ধোঁয়ায় রান্না হতে থাকে র‌্যাকের উপর রাখা সবজি, মাছ ইত্যাদি। তবে বারবিকিউয়ের ক্ষেত্রে মাংস বা সবজি ম্যারিনেট করে রাখাই শ্রেয়।

রোস্টিং: রোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি তাপ ব্যবহার করা হয়। তাপ মাংস বা সবজির বাইরের অংশকে সিল করে দেয় ও উপাদানটি ভিতরের রসেই জারিত হতে থাকে। অর্থাৎ গোটা মুরগির পেটে মশলাপাতি ঢুকিয়ে তাকে রোস্ট করতে দেওয়া হয়। এতে মুরগি পেটের ভিতরে থাকা উপকরণ থেকেই ময়েশ্চার গ্রহণ করতে থাকে।

ময়েস্ট হিট কুকিং মেথড

এ ক্ষেত্রে জল বা তেল জাতীয় তরল পদার্থকে রান্নার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ডিপ ফ্রাইং কী ভাবে ড্রাই হিট কুকিং মেথড হয়? আশ্চর্যের বিষয়, সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রার পরিমাণের উপর ভিত্তি করা হয়। ফুটন্ত জলের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়। কিন্তু ডিপ ফ্রাইংয়ের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা উঠতে পারে ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত। তাই সেটা ড্রাই মেথড কুকিংয়ের অন্তর্গত।

পোচিং: তাপমাত্রা থাকতে হয় ৭১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৮২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মাঝামাঝি। জলে বুদ্বুদ ওঠা কাম্য নয়। জলে সামান্য গতিবিধি বাঞ্ছনীয়।

সিমারিং: জলে অল্প অল্প বুদ্বুদ থাকতেই হবে। আদর্শ তাপমাত্রা ৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সিমারিং পদ্ধতিতে স্ট্যু, স্যুপ ইত্যাদি রান্না ভাল হয়। পদের সমস্ত উপকরণ থেকে নির্যাস বেরিয়ে, তা জলে দ্রবীভূত হয় সুন্দর ভাবে।

বয়েলিং: কোনও সবজি বা মাংস ফুটন্ত জলে সিদ্ধ করে নেওয়ার পদ্ধতিই হল বয়েলিং। এর আদর্শ তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

স্টিমিং: স্টিমিং পদ্ধতিতে জলের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও রান্নাটা হয় ফুটন্ত জলের ধোঁয়া থেকে। খাবারের উপকরণ এখানে জলের সংস্পর্শে আসে না। ফলে জল থেকে নির্গত ধোঁয়াতেই রান্না হতে থাকে।

তবে সমস্ত রান্নাই যে এই কয়েকটি পদ্ধতির মধ্যে পড়ে, তা নয়।

ব্রেইজিং: এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে মাংস ড্রাই হিট পদ্ধতিতে রান্না করা হয়। মাংসের ক্যারামেলাইজেশন হয়ে গেলে ময়েস্ট হিট কুকিংয়ে পরিবর্তন করতে হয়। অর্থাৎ সেই মাংসকে সিমার করতে দিতে হয়। একটু বেশি শক্ত মাংসের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয় ব্রেইজিং।

সু ভি: এই পদ্ধতিতে খাবারের উপকরণ প্লাস্টিকে সিল করে সিমার করতে হয়। এই নতুন পদ্ধতিটি ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

রান্নার পদ্ধতি শুধু মাত্র এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্লাঞ্চিং, কিওরিং, হট সল্ট ফ্রাইং, পারবয়েলিং ইত্যাদি নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। আর রান্নার পদ্ধতিকে এ ভাবে তাপমাত্রার পরিমাণ ও শব্দের মাধ্যমে বোঝানো সহজ নয়। বরং হাতেকলমে অবিরাম প্রয়োগের মাধ্যমেই সেগুলিকে সহজে আয়ত্তে আনা যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement