সাধের জল-বাগান

এক টুকরো ঘরোয়া বাগানে টবে মাটি বসিয়ে গাছ পোঁতাই শেষ কথা নয়। বাড়ির ভোল পাল্টাতে জলভরা পাত্রে বসান হরেক জলজ গাছ।এক টুকরো ঘরোয়া বাগানে টবে মাটি বসিয়ে গাছ পোঁতাই শেষ কথা নয়। বাড়ির ভোল পাল্টাতে জলভরা পাত্রে বসান হরেক জলজ গাছ।

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০৮:১০
Share:

পরিষ্কার, শান্ত জল। ফুটে আছে পদ্ম বা শালুক। পাতার ফাঁকে ফাঁকে চঞ্চল আনাগোনা গোল্ডফিশের...

Advertisement

এ হেন দৃশ্য দেখা যেতে পারে আপনার বসার ঘর, বারান্দা বা ছাদে। এ রকম বাগানের পোশাকি নাম ‘ওয়াটার গার্ডেন’। বাড়িতে এই বাগান শান্তির অনুভূতি এনে দেয়। সাধারণ বাগানের চেয়ে অন্য রকম ওয়াটার গার্ডেন কচিকাঁচাদেরও খুব পছন্দের। বাড়িতে জায়গার অভাবে বড়সড় ওয়াটার গার্ডেন করা সম্ভব না হলে, ঘরের উপযুক্ত ছোট বাগানও বানাতে পারেন। মাটি দিয়ে গাছ বসানোর বদলে শুধু জলে কয়েকটি গাছ ভাসিয়ে রেখে ভোল বদলে দিতে পারেন বাড়ির।

Advertisement

কী কী গাছ রাখবেন

সহজলভ্য কিছু গাছ শুধু জলেও বেঁচে থাকে। যেমন মানি প্ল্যান্ট, পদ্ম, শালুক, লাকি ব্যাম্বু, ইংলিশ আইভি, ফিলোডেনড্রন, ওয়াটার লেটুস, ফার্ন। এই গাছগুলি ঘরের ভিতরেও বেঁচে থাকে। একটু অন্য রকম গাছ রাখতে চাইলে খোঁজ করুন ছোট প্রজাতির হোগলা, জলজ ঘাস, ওয়াটার পপি, অ্যারাম লিলি, মোজেইক প্ল্যান্ট, প্যাপিরাসের। অ্যাকোয়ারিয়ামের গাছও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গাছগুলি জলে সম্পূর্ণ ডুবে থাকে। জল পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে। ফেলনা নয় ওয়াটার হায়াসিন্থ অর্থাৎ কচুরিপানাও। গুচ্ছ গুচ্ছ বেগুনি ফুলের বাহারে এটি পাল্লা দিতে পারে যে কোনও গাছের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বেশি জায়গার।

কী ভাবে তৈরি করবেন

কাচ বা সেরামিকের লম্বা বাহারি পাত্রে রাখুন একটি বা দু’টি করে মানি প্ল্যান্ট, লাকি ব্যাম্বু বা ইংলিশ আইভির মতো গাছ। পাত্রগুলির তলায় দিন পছন্দসই রঙিন পাথর। এতে গাছগুলি এ দিক-ও দিক সরে যাবে না। বাড়বে সৌন্দর্যও। দেওয়াল থেকে পরপর ঝুলিয়েও রাখতে পারেন পাত্রগুলি। একটু বড় আকারের ফিশ বোল বা গোলাকার চ্যাপ্টা পাত্রে রাখতে পারেন একটি করে পদ্ম বা শালুক। সঙ্গে কয়েকটি ওয়াটার লেটুস।

বারান্দায় বা ছাদে বাগান করতে চাইলে বেছে নিন বড় পাত্র। সেরামিক হোক বা জল ধরে রাখার মতো মাটির পাত্র, পছন্দ আপনার। এ ক্ষেত্রে এক রকম গাছ না রেখে মিলিয়ে মিশিয়ে রাখুন একাধিক গাছ। পদ্ম বা শালুকের পাতা, ফুল ছাড়া বাকিটা জলের তলায় থাকে। লাকি ব্যাম্বু, ফার্ন, হোগলা বা প্যাপিরাসের আবার শুধু শিকড় থাকে জলে। এই গাছগুলির গোড়ায় অল্প মাটির প্রয়োজন। আবার ওয়াটারলেটুস, মোজেইক প্ল্যান্ট, ওয়াটার পপি, কচুরিপানার মতো গাছের পুরোটাই ভাসমান। এই তিন রকম গাছই থাকুক আপনার জল-বাগানে। পাত্রের তলায় অল্প বালি বা মাটি দিয়ে গাছ বসান। উপরে বিছিয়ে দিন পাথর। এতে মাটি জলের সঙ্গে মিশে যাবে না। পাত্রের ধারের অংশ সাজাতে ব্যবহার করুন পাথরের টুকরো। যে সব গাছের শুধু শিকড় জলে থাকে, সেগুলি এই পাথরের উপরে বসান।

যত্ন কী ভাবে

জলের উপর ভাগ ৫০ শতাংশ গাছের পাতা দিয়ে ঢাকা থাকলে শ্যাওলা কম হবে।

অ্যামাজন সোর্ড বা হর্নওয়র্টের মতো অ্যাকোয়ারিয়ামের গাছ রাখুন দু’-একটি। শ্যাওলা আটকাতে ও জলের পিএইচ মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এগুলি।

জলে ছেড়ে দিন রঙিন মাছ। জল পরিষ্কার থাকবে। আবার জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধিও আটকাবে।

জল কমে গেল আবার ভরুন। ক্লোরিন মেশানো জলে গাছের ক্ষতি হয়। সম্ভব হলে বাগানের জন্য টিউবওয়েল বা কুয়োর জল ব্যবহার করুন। এই জলের খনিজ পদার্থ গাছের পুষ্টি জোগাবে।

কিছু গাছ দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। কিছুদিন অন্তর বাড়তি গাছের সংখ্যা কমান। ফেলে দিন পচা পাতাও।

বছর খানেক বাদে পাত্রটি সাফ করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গাছগুলি তুলে অন্যত্র রেখে ফের বসাতে হবে।

প্রয়োজনীয় গাছ ও সরঞ্জাম পেয়ে যাবেন নার্সারিতে। গ্রামে বেড়াতে গিয়েও সংগ্রহ করতে পারেন গাছ। আর সব কিছু হাতের কাছে পেয়ে গেলে অল্প আয়াসেই বানিয়ে ফেলুন ওয়াটার গার্ডেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement