যিনি বলেছিলেন ‘চা হল তরল জ্ঞান’, তিনি নিঃসন্দেহে বাংলার অলিগলিতে ঘুরে গিয়েছেন। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মাটির ভাঁড়ে চা হোক কি পাঁচতারা হোটেলের টি-বারের পোর্সেলিনের পাত্র, চায়ের কাপে তুফান তুলতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। অবাঙালিরা চা ‘খাওয়া’ নিয়ে ঠাট্টা করলেও চা খাওয়ায় ‘না’ বলতে পারা বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া শক্ত।
এ দেশের মানুষকে চায়ের অভ্যেস ধরিয়েছিল ইংরেজরা। এবং অন্য অনেক কিছুর মতোই তৃপ্তিদায়ক এই উষ্ণ পানীয়কে আপন করে নিতে সময় নেয়নি ভারতীয়রা। আর চা তো শুধু এক রকম নয়। সাদা (আনঅক্সিডাইজড), কালো (পুরোপুরি অক্সিডাইজড), হলুদ (আনঅক্সিডাইজড), সবুজ (হার্বাল)... যেন বৈচিত্রময় ভারতীয় সংস্কৃতিকেই তুলে ধরেছে।
সাদা, কালো না কি সবুজ
কালের নিয়মে বদল এসেছে অনেক কিছুতেই। তাই চা শুধু আর অবসর বিনোদনের সঙ্গী হয়ে থাকেনি। মনে করা হচ্ছে, চা সারিয়ে তুলতে পারে অনেক রোগও। যেমন, মিন্ট টি সারিয়ে তোলে উচ্চ রক্তচাপ। আবার জ্যাসমিন টি দূর করে মাথায় যন্ত্রণা। শুধু রোগই নয়, রোগা হওয়ার জন্য রয়েছে গ্রিন টি।
কিন্তু এই সব ধারণা কতটা যুক্তিযুক্ত? নিউট্রিশনিস্ট রেশমি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘চা কখনওই ওষুধের বিকল্প হতে পারে না। এই যে গন্ধওয়ালা চায়ে নানা রোগ সারানোর কথা বলা হয়, সেটা চায়ের জন্য নয়। গন্ধের জন্য। অনেক সময় দেখবেন, বাড়িতে ধুপের গন্ধে একটা ভাল লাগা তৈরি হয়। সেটা থেকে সেরে যায় মাথার যন্ত্রণা। এটাও তেমনই। এক ধরনের মানসিক সান্ত্বনা।’’
পুষ্টিবিদদের মতে, পুষ্টির দিক থেকে চায়ের তেমন গুরুত্ব নেই। তবে তা মুড পাল্টে দিতে পারে পলকে। তার প্রতিফলন ঘটে শরীরে। ঘুরপথে সারিয়ে তুলতে পারে নানা রোগ। তবে একটা ব্যাপারে সাবধান করে দিতে চান তাঁরা। পরিমাণ মতো চা খাওয়া চলতেই পারে। কিন্তু কখনওই মাত্রাতিরিক্ত নয়।
চায়ের আমি, চায়ের তুমি
আর গ্রিন টি? ‘‘গ্রিন টি-তে এক ধরনের কেমিক্যাল প্রডাক্ট থাকে, যা নার্ভ স্টিমুল্যান্টের কাজ করে। তাই পরিমাণ মতো গ্রিন টি খেলে খিদে কমে। কিন্তু মনে রাখবেন, বেশি চা খেলে সমস্যা হবে গ্যাসট্রিকের,’’ বলেন রেশমি রায়চৌধুরী। তাঁর মতে দিনে দু’-তিন কাপ চা খাওয়া চলতে পারে। তার বেশি নয়।
প্রায় একই কথা বলছিলেন নিউট্রিশনিস্ট ডায়ানা পিন্টো। ‘‘প্রত্যেকটা মানুষ জিনগত ভাবে আলাদা আলাদা। ফলে কোনও একটা জিনিস যে সকলের জন্য ভাল হবে, এমন নয়। একজনের জন্য যেটা খাদ্য, আর এক জনের ক্ষেত্রে সেটা বিষ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের শ্বেতকণিকায় টি-সেল আর বি-সেলের একটা রেশিয়ো থাকে। গ্রিন টি বি-সেলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই যাঁদের বি-সেল এমনিতেই বেশি, তাঁদের কিন্তু গ্রিন টি উপকার করবে না, ক্ষতি করবে,’’ বলেন পিন্টো।
অনেকে মনে করেন, কফির নেশায় আটকে পড়েন মানুষ। পুষ্টিবিদরা কিন্তু বলছেন, চায়ের ক্ষেত্রেও এমনটা হতেই পারে। বিকেলবেলা চা না খেলে কেমন কেমন মনে হওয়াটা কিন্তু ওই অ্যাডিকশন থেকেই।
চা আসলে ভাল লাগার অঙ্গ। বাঙালির কাছে চা হল জীবনের অংশ। তাই দৈনন্দিন জীবন থেকে চা বাদ দিতে হবে না। শুধু একটু পরিমাণ বুঝে খান। তা হলেই আর কোনও সমস্যা হবে না।
মডেল: তৃণা
মেকআপ: জিতেন্দ্র মাহাতো
ছবি: দেবর্ষি সরকার
লোকেশন: কর্মা কেটল, সুইনহো স্ট্রিট