শরতের ছেঁড়া মেঘ, সাদা কাশের চামর, চণ্ডীপাঠ, প্যান্ডেলের বাঁশ, ত্রিপল... আগমনীর প্রতীকী প্রকাশ। তবে দূষণের পুরু জালে সেই সাদা মেঘেরা বোধহয় ছটফটিয়ে ওঠে। তাই কি সে ভাবে দেখা মেলে না তার? কংক্রিটের আগ্রাসনে কাশফুল তো ধীরে ধীরে গল্প হয়ে যাচ্ছে! জীবন থেকে প্রতি মুহূর্তে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। কিন্তু দুর্গাপুজোর সুবাস বোধহয় চিরকালীন। বাঙালির কাছে অমলিন। পার্থিব কিছু থাকা বা না থাকার সঙ্গে সে আবেগের মোটেই সদ্ভাব নেই।
পুজো আসছে মানেই নতুন কিছু। নতুন জামা, অন্য রকম সাজ, ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিন্ন ভাবে নিজেকে দেখা। তবে সে দেখায় তফাত তো থাকবেই। অষ্টাদশী কলেজনন্দিনী নিজেকে যে ভাবে সাজাবেন, সংসারজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো বউটি কিংবা কর্পোরেট অফিসের ব্যক্তিত্বময়ী বস তো আয়নায় নিজেকে সে ভাবে দেখবেন না। তাই উৎসবের জন্য রইল চার ধরনের ড্রেপিং স্টাইল। সনাতনী, আধুনিকা, ফিউশন এবং বোহো, নিজেকে যে যেমন দেখতে চান...
কোয়েল, শ্রাবন্তী, পাওলি এবং শুভশ্রী... চার নায়িকার চোখজুড়ানো সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত শরতের উৎসব মুখরিত সকাল-সন্ধে। বেনারসিতে শ্রাবন্তীর সাবেক সৌন্দর্য, কোয়েলের মুখের দৃঢ়তা অথবা ফিউশনের আধুনিক রূপেও পাওলির স্নিগ্ধতা, আবার শাড়িতে বোহেমিয়ান লুকে ক্যারিশম্যাটিক শুভশ্রী... চার নায়িকাই নজরকাড়া শাড়ির আবেদনে দীপ্তিময়ী। তবে আভরণ অবশ্যই ব্যক্তিত্ব।
রাজকীয় নীল বেনারসিতে কোয়েল মল্লিক। তাতে সাবেক জরির বুটি আর আঁচলে ফুলেল নকশা। যেন তাঁকে দেখেছি কোথায়! কানে সেমিপ্রেশাস স্টোনের ঔজ্জ্বল্য ঢেকে দিয়েছে অন্য গয়নার অনুপস্থিতি। বড় ডায়ালের হাতঘড়িতে আধুনিকতা ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। তিনি যেন পাখির নীড়ের মতো চোখের বনলতা সেন, তাই কি তাঁকে চেনা লাগে?
আবার শ্রাবন্তীর মুখে যেন নিষ্পাপ শিউলির সতেজতা আরও প্রাণবন্ত হয়েছে হলুদ বেনারসি জামেভারের আলিঙ্গনে। তার গা জুড়ে ফ্লোরাল ও পেজলি ডিজ়াইনের নির্ঝর। আঁচলে জরির চওড়া বর্ডার। নায়িকার হাতে ফুলের সাজি। তাঁর গলায় হিরের দ্যুতি, হাতে চুড়ির বাহার, কোমরবিছের নান্দনিকতা... কিন্তু সব ছাপিয়ে মন কাড়ে তাঁর চকিতা হরিণীসম চাহনি, যা দেখে পথিক আজও পথ হারাবেন। অষ্টমীর সকাল হোক বা দশমীর রাত, আপনিও সেজে উঠতে পারেন চিরকালীন এই সাজে।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে শাড়ির সম্পর্ক ভীষণ গভীর। বলা যায় অচ্ছেদ্য। কিন্তু তার সঙ্গে সাবেক সাজ তো সকলের মনের মতো না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে করাই যায় এক্সপেরিমেন্ট। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন। পাওলিকে হালকা নীল ডেনিম শার্টের সঙ্গে ইট লাল ও ম্যাজেন্টা, দু’টি বেনারসি একসঙ্গে অভিনব কায়দায় ড্রেপ করা হয়েছে। ফিউশনে তিনি স্মার্ট এবং এলিগ্যান্ট। ইট-লাল বেনারসিতে সোনালি জরি বর্ডারের উপরে রয়েছে টারকোয়াইজ় ব্লু, পিঙ্ক ও অরেঞ্জ রঙা অ্যাবস্ট্র্যাক্ট জিয়োমেট্রিক মোটিফ। নাকে সাবেক টানা নথ, হাতে রতনচূড়... আভরণ শুধু এটুকুই। নাহ! শাড়ির ব্রোচ ত্রিশূল। শক্তির আকর। সদ্যবিবাহিতা নায়িকার কপালে উজ্জ্বল লাল টিপ। শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
যদি নিজের লুক সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে চান, নিজেকে বোহো লুকে দেখুন। হ্যাঁ, শাড়ি এবং উজ্জ্বল লাল টিপেও বোহেমিয়ান ইমেজ দিব্যি ক্যারি করা যায়। কমলা বেনারসিতে শুভশ্রী যেন আগুনপাখি। শাড়ির আঁচলে নানা রঙের আঁচড়। তাতে জরি বর্ডার আর বুননে পাঠানি স্টাইল। বোহেমিয়ান লুকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য টায়রা। শাড়ি, জ্যাকেট, চুড়ি, টায়রার জাদুস্পর্শে শুভশ্রী যেন ভিনদেশি তারা!
শাড়ি: আনন্দ, রাসেল স্ট্রিট
মেকআপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার (পাওলি), নবীন দাস (শ্রাবন্তী, শুভশ্রী), অভিজিৎ চন্দ (কোয়েল)
স্টাইলিং: পূজা চট্টোপাধ্যায় (কোয়েল, পাওলি), অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (শুভশ্রী)
ব্লাউজ়: পূজা চট্টোপাধ্যায় (কোয়েল), প্রীতি দাস (শ্রাবন্তী),
ভি কাট (শুভশ্রী)
জ্যাকেট: বেদান্ত জৈন (শুভশ্রী)
জুয়েলারি: আভামা জুয়েলারি, বরদান মার্কেট (শ্রাবন্তী), জ্যাজ়ি জুয়েলারি, বিধান সরণি (শুভশ্রী, পাওলি)
ড্রেপিং: ডলি জৈন (কোয়েল, পাওলি), নবীন দাস (শ্রাবন্তী, শুভশ্রী)
ছবি: দেবর্ষি সরকার, সোমনাথ রায় (শুভশ্রী)
লোকেশন: শম্ভু স্টুডিয়ো, শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল ও রুদ্রজিৎ পাল, কুমোরটুলি (কোয়েল), লাহাবাড়ি, বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট (শ্রাবন্তী)
ফুড পার্টনার: দ্য বেঙ্গল লাউঞ্জ, ডালহৌসি