তবলায় প্রদ্যোত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সন্তুরবাদক তরুণ ভট্টাচার্য
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ও আইসিসিআর-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘গঙ্গা’। অনুষ্ঠানে স্বয়ংসৃষ্ট রাগ গঙ্গা বাজিয়ে শোনালেন সন্তুরবাদক তরুণ ভট্টাচার্য। তাঁকে তবলায় সঙ্গ দিয়েছেন প্রদ্যোত মুখোপাধ্যায়। দূষণ-জর্জরিত গঙ্গাকে পরিস্রুত করার অঙ্গীকার নিয়েই রাগটি সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। যোগেশ্বরী এবং কলাবতী রাগের ছায়া অবলম্বনে সৃজিত গঙ্গা বেশ শ্রুতিমধুর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই যোগেশ্বরী রাগ সৃষ্টি করেছিলেন বিশিষ্ট সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর, রাগ যোগ এবং রাগেশ্রীর সংমিশ্রণে। যোগের প্রশান্তি এবং রাগেশ্রীর মাধুর্য— উভয়ই যোগেশ্বরীর মেজাজে ধরা পড়ে। ঋষভ-বর্জিত গঙ্গা রাগের সুরবিন্যাসেও মধুময় এক প্রশান্তির আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু সে দিনের অনুষ্ঠানে গঙ্গা রাগটি তেমন পরিপূর্ণতা লাভ করল না।
সূচনায় পরিবেশিত সংক্ষিপ্ত সুরবিস্তার বেশ ভাল লেগেছে। তবে রাগটির গোড়াপত্তন যতটা সুন্দর হয়েছিল, সমাপ্তি ততটা হৃদয়গ্রাহী হল না। একাধিক রাগের সংমিশ্রণে তৈরি কোনও রাগ পরিবেশনের সময়ে শিল্পীকে খুব সতর্ক থাকতে হয়, যাতে কোনও একটি রাগের প্রভাবে মূল রাগের সামগ্রিক আবেদন নষ্ট না হয়ে যায়। কিন্তু তরুণ ভট্টাচার্যের বাদনে যোগেশ্বরীর স্বভাব একটু বেশি মাত্রায় ফুটে উঠছিল। এ ছাড়া তবলার বর্ধিত গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মাঝে মাঝেই শিল্পীর সন্তুরবাদন যান্ত্রিকতাদোষে আক্রান্ত হচ্ছিল। যে মীড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অলংকারস্বরূপ, তাকে সন্তুরে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় না, বাদ্যযন্ত্রটির গঠনগত কারণেই। তরুণ ভট্টাচার্যের সন্তুরবাদনে সেই মীড়ের ‘আভাস’ দেওয়ার প্রয়াস লক্ষিত হল। যে কারণে শিল্পী এক স্বর থেকে অন্য স্বরে যাওয়ার সময়ে প্রলম্বিত স্ট্রোক ব্যবহার করেছেন। প্রচেষ্টাটি প্রশংসনীয়। তবে বাদ্যযন্ত্রের সীমাবদ্ধতার দিকটি স্মরণে রাখাও শিল্পীর কর্তব্য। বাদ্যযন্ত্রের স্বভাব অনুযায়ী তাকে পরিপূর্ণতা দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। নচেৎ উপস্থাপনা আরোপিত মনে হয়। ধীর লয়ের সুরবিস্তারে ঘন ঘন প্রলম্বিত স্ট্রোকের ব্যবহার একটু অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। প্রদ্যোত মুখোপাধ্যায়ের তবলাবাদন মন্দ লাগেনি। শিল্পীর দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল রাগ ভূপালি। দক্ষিণী ভঙ্গিমায় রাগটি বাজালেন তিনি, শোনালেন আদি তালে নিবদ্ধ একটি কম্পোজ়িশন। তাঁকে মৃদঙ্গমে সহযোগিতা করেছেন রমেশ শ্রীনিবাসন। তুলনামূলক ভাবে এই রাগটি শুনতে ভাল লেগেছে।