‘তু তো হানিকারক হ্যায়...’
‘দঙ্গল’ ছবির দৃশ্য। দুই বোনকে কুস্তিগির বানাবেই বাবা আমির খান। কী কঠিন লড়াই! কনকনের শীতের ভোরে দুই মেয়েকে সারা গ্রাম ছুট করায় আমির।
একটু ফ্লাশব্যাক: বিখ্যাত সেই দৃশ্য। ‘ফাইট কোনি ফাইট’... ‘কোনি’ ছবি। সাঁতারু কোনি তাঁর ট্রেনার ক্ষিদ্দার চাপে জোরে সাঁতরায়... আরও দ্রুত... তাকে পৌঁছতে হবে লক্ষ্যে।
মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে দেখতে গেলে প্রতিযোগিতার চাপ এবং তা ঘিরে ‘স্ট্রেস’, স্পষ্ট উপরের দু’টি সিনেমার ঘটনাতেই। কিন্তু দুটোতেই স্ট্রেসটা নিতে পারছে ওরা।
অথবা ভেবে দেখুন হালের ‘প্রাক্তন’ কিংবা ‘ক্ষত’ ছবিগুলি। এক পুরুষকে ঘিরে দুই নারীর মধ্যে কী অপরিসীম যন্ত্রণা। কী টেনশন! কী স্ট্রেস!
শুধু সিনেমায় কেন। বাস্তব ভাবুন। খবরের কাগজ বা টিভির দিকে তাকালেই দেখা যাবে, স্বামী তার স্ত্রীকে খুন করছে দ্বিতীয় নারীর কারণে। চাকরি চলে গিয়েছে বলে আত্মহত্যা করছে যুবক...
মানসিক চাপ, টেনশন এবং সব মিলিয়ে আসলে ‘স্ট্রেস’ই তার থাবা বাড়িয়ে চলেছে নিত্য দিনযাপনে। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার পথ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তা হলে উপায়?
কর্মহীন বেকার যুবক, অসুস্থ বৃদ্ধ, পরকীয়া সম্পর্কে জর্জরিত নারী-পুরুষ, ‘এই বুঝি চাকরি গেল’ টাইপের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চাপে মুহ্যমান কর্মী।
আরও পড়ুন: পিঠে ব্যথা ও তার চিকিৎসা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবির মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন প্রতিকার। বললেন, ‘‘বায়োলজিকাল, সোশ্যাল ও সাইকোলজিকাল কারণেই তৈরি হয় স্ট্রেস। বিশাল তার ব্যাপ্তি।
ধরা যাক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেল কারও। হয়তো সে নিজেই গাড়ি চালায়। বেড়ে গেল স্ট্রেস।’’
এ তো গেল নেগেটিভ কারণ। অনেক সময় পজিটিভ কারণেও স্ট্রেস বাড়ে। কেউ হয়তো মা হতে চলেছেন, অথবা সামনেই বিয়ে। আপাত আনন্দের ঘটনার মধ্যেও কিন্তু ‘স্ট্রেস’ ছড়িয়ে থাকে, ঠিক রান্নায় দেওয়া নুনের মতো। খালি চোখে দেখা মেলা ভার! আর তার থেকেই বাড়ে মাইগ্রেন, হার্ট ডিজিজ তথা অন্যান্য নানা অসুখ। আবির জানালেন,
• যেহেতু স্ট্রেসের কারণে ডিপ্রেশন (অবসাদ), অ্যাংজাইটি (উৎকণ্ঠা) ক্রমাগত বাড়ে এবং শেষে ইমোশনাল ডিসঅর্ডার দেখা যায়, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বকে সুদৃঢ় করা প্রয়োজন।
• অনেক সময়ে দেখা যায় একই কারণে দু’টি মানুষের আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। হয়তো বস কাউকে ডেকে পাঠাল। একজন ভাববে তার প্রোমোশন হবে। অন্য জন ভাববে হয়তো তার চাকরি যাবে। সুতরাং নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে পজিটিভ চিন্তায় নিয়ে আসতে হবে।
• প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি বা কাউন্সিলিং কাজে দেয়। খুব। সঠিক চিকিৎসায় স্ট্রেস সামলানো যায় অবশ্যই।
• কথায় কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হতে পারে। যে ভাবেই হোক কাটাতে হবে দুশ্চিন্তা।
• ফিজিকাল এক্সসারসাইজ, প্রাণায়াম, রোজ সকালে বেশ খানিকটা হাঁটা... এগুলো ‘স্ট্রেস’ কাটাতে দারুণ কাজে দেয়।
• ভাল কথা, সপ্তাহে এক দিন সিনেমা দেখা, গান শোনা, নিদেনপক্ষে কোনও পার্কে ঘুরে এলেও স্ট্রেস কাটে।
আর শেষে একটাই পরামর্শ, যখন মনে হবে সারা পৃথিবী হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে... কিচ্ছুটি আর সঠিক নিয়মে ঘটছে না, তখন একটা জিনিসই আপনার হাতে আছে, সেটা হল ‘ধৈর্য’।
জোঁকের মুখে নুন দিলে যেমন কাজ হয়, তেমনই ‘স্ট্রেস’-এর মুখে ছুড়ে মারুন ‘ধৈর্য’। কাজ হবেই!
মডেল: রিয়া
মেকআপ: সায়ন্ত ঢালি
পোশাক: ওয়েস্টসাইড
লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা
ছবি: অমিত দাস