নিউজপেপার টিউব ল্যাম্প
দীপাবলির রাতে আমাদের প্রত্যেকের বাড়িরই আনাচ-কানাচ জুড়ে থাকে আলোর রোশনাই। সমস্ত আঁধার দূর করে আলোয় ভেসে যাওয়ার একটা রাত। আর তার জন্য কত না তোড়জোড়! বাজারেও বসে গিয়েছে নানা আলোর পশরা। তবে এ বার যদি নিজের বাড়ির আলো নিজেই তৈরি করেন, মন্দ হবে না, বলুন!
আলোকসজ্জা বাড়ির অন্দরের অন্যতম মূল সাজ। আলোর ব্যবহারই বদলে দিতে পারে বাড়ির অভ্যন্তরীণ একঘেয়েমি, এনে দিতে পারে রঙের ছোঁয়া। সে রকমই মনকা়ড়া কিছু হাতে তৈরি আলোর সন্ধান রইল আপনাদের জন্য।
সুতোর লণ্ঠন: একটা বড় বেলুন ফুলিয়ে নিন। বাটিতে সম পরিমাণে আঠা, জল মিশিয়ে পাতলা করে নিন। বেলুনের গায়ে আঠা লাগিয়ে পাটের দড়ি, উল অথবা নারকেল দড়ি ভাল করে পাকিয়ে নিন। কয়েক ঘণ্টা রেখে আঠা শুকিয়ে ফেলুন। পিন দিয়ে বেলুনের গায়ে ফুটো করে বেলুন বের করে নিন। দেখবেন সুতো, দড়ি বা উলের একটা শক্তপোক্ত খাঁচা তৈরি হয়েছে। এ বার পছন্দ মতো রং করে একটা বাল্ব লাগিয়ে ঝুলিয়ে দিলেই হল। তৈরি হয়ে যাবে রঙিন সুতোর লণ্ঠন। এ বার বারান্দায় লম্বা দড়ি দিয়ে সারি সারি সুতোর লণ্ঠন ঝুলিয়ে দিন। আপনার চিরচেনা অন্দরমহলও নতুন লাগবে।
বোতল-বাতি: খাবার টেব্ল আলোকিত করতে বোতল-বাতির চেয়ে ভাল আর কিছু নেই। এর জন্য সবচেয়ে আদর্শ পুরনো ওয়াইনের বোতল। কোনও মিস্ত্রিকে দিয়ে বোতলের তলার গোল চাকতি কেটে বাদ দিয়ে দিন। খেতে বসার আগে টেব্লে বেশ কয়েকটা রঙিন কাঠের টুকরো রাখুন। তার উপরে সাদা মোমবাতি বসিয়ে উপর থেকে ওয়াইনের বোতল বসিয়ে দিন। বোতলের ছিপি খুলতে ভুলবেন না যেন। এ ছাড়াও যদি ঝক্কি না চান, তা হলে বোতলের মুখে ছিপি লাগিয়ে তার উপরেই মোমবাতি বসান। বাতি গলে গলে কাচের উপরে পরে তৈরি হবে জ্যামিতিক নকশাহীন সুন্দর বাতিদান।
কুইল্ড দিয়া
কুইল্ড দিয়া: ঠাকুরঘরে কিংবা আয়নার সামনে মোমবাতির বদলে রাখুন কুইল্ড দিয়া। একটা পুরনো সিডি পরিষ্কার করে মাঝখানে টি-লাইট ক্যান্ডেল বসানোর মতো জায়গা ছেড়ে গোল আঁকুন। কুইলিং নিডলের সাহায্যে হ্যান্ডমেড পেপার দিয়ে বুনে নিন রোজ, টিয়ার ড্রপ, পেটাল জাতীয় মোটিফ। আলপনা দেওয়ার মতোই কুইলিং ডিজাইন তৈরি করুন। এ বার মাঝে একটা টি-লাইট ক্যান্ডেল বসিয়ে দিলেই জমে যাবে মোমবাতির সাজ!
নিউজপেপার টিউব ল্যাম্প: বাড়ির জমে থাকা পুরনো খবরের কাগজ না বিক্রি করে বরং বানিয়ে ফেলুন হরেক রঙা বাতি। বেশ কয়েকটি খবরের কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে শক্ত করে নিন। এ বার কাগজের স্ট্রিপ মুড়ে মুড়ে সরু সরু চোঙের আকার বানিয়ে আঠা লাগান। চকের মতো দেখতে এই টিউবগুলোয় রং করুন মনের আনন্দে। একটা বড় কাগজে ষড়ভুজ এঁকে নিন। প্রতিটা বাহুর উপরে একটা করে টিউব লাগিয়ে লাগিয়ে ল্যাম্পের খাঁচা (পাশের ছবির মতো) বানান। সবশেষে ইচ্ছে মতো একটা আলো লাগিয়ে দিলেই ব্যস, কেল্লা ফতে!
কাপকেক লাইনার লাইট: বাড়িতে মাফিন বা কাপকেক বানানোর জন্য নিশ্চয়ই রাখা থাকে রঙিন লাইনার্স? এ বার একটা বেলুন ফুলিয়ে তার গায়ে আঠা দিয়ে পুরনো খবরের কাগজ লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। পিন ফুটিয়ে বেলুন বের করে নিন। কাগজের খাঁচার উপরে রংচঙে মাফিন লাইনার্স কোলাজ করে লাগিয়ে আলো ঝুলিয়ে দিন।
এ তো গেল হাতে তৈরি আলোর কথা। এই সমস্ত আলো ছাড়াও ম্যাসন জারের ভিতরে টুনি বাল্বের গোছা কিংবা বাড়িতে ঢোকার মুখে বড় কালো পাথরের পাত্রে জল ঢেলে রঙিন ফুল আর ফ্লোটাল ক্যান্ডলের সজ্জা বদলে দিতে পারে আপনার বাড়ির সাজ। কেউ যদি নিজের হাতে আলো না-ও তৈরি করেন, কিনে আনা আলো দিয়েই বাড়ি সাজাতে পারেন নানা ভাবে। শুধুমাত্র রেলিংয়ে নয়, বরং বুক শেল্ফের ধার ধরে অথবা আয়নার চারপাশে লাগান আলো। অগোছালো করে মেঝেয় না ফেলে রেখে সিঁড়িতে ওঠা-নামার রেলিঙে পাকিয়ে পাকিয়ে অথবা গাছের টবে আলগোছেও আলো সাজিয়ে রাখতে পারেন।
দীপাবলিতে আলোর পরতে পরতে আপনার বাড়ির অন্দরমহল থেকে মুছে যাক কালিমা। এ বার আপনার সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় আনন্দে ভাসুক আলোর জোয়ার।