সাধারণ অন্দরসজ্জাও নজরকাড়া হয়ে উঠতে পারে, যদি তার দোসর হয় সুতোর নিখুঁত নকশা বোনা একখণ্ড কার্পেট। রং-রূপ-আভিজাত্যে সে স্থান-কাল-সীমায় আবদ্ধ নয়। আসলে কার্পেট শুধুই যে আপনার বসতবাড়ির শোভা বাড়াচ্ছে, তা তো নয়। এ এক শিল্পকর্ম! অনেক সময়েই তার জন্মভূমির স্বাতন্ত্র্য ফুটে ওঠে কার্পেট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুলে, লতায়-পাতায়। কাশ্মীর, তুরস্ক, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া... কার্পেটের সম্ভার ছড়িয়ে রয়েছে নানা দেশে! এ এমন জিনিস, পকেটের ওজন বুঝে বোধহয় প্রতি বাড়িতেই তার দেখা মেলে।
কার্পেটের ব্যাপারে ভীষণ শৌখিন হিন্দুস্থান রোডের বাসিন্দা অয়ন ঘোষ। পেশায় ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট। ভালবাসেন বেড়াতে। একটা সময়ে চাকুরিসূত্রে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন বিদেশে। বাড়ির ড্রয়িং রুম, স্টাডিতে আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, আজ়ারবাইজ়ান, কাশ্মীর থেকে আসা সযত্নলালিত কার্পেটে শিল্পবোধ, আভিজাত্যের সংযোজন।
ডুপ্লে ফ্ল্যাটের এক তলার ড্রয়িংরুমে তুরস্ক আর তুর্কমেনিস্তান থেকে আসা দুই অতিথির পারস্পরিক সহাবস্থান। পশ্চিম এশিয়ার এই নয়নাভিরাম দেশ এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে তৈরি হওয়া আর এক দেশ। নাম ছাপিয়ে তাদের সংস্কৃতিতেও রয়েছে মিলমিশ। তাই কার্পেটের ডিজ়াইনে তফাত হলেও, মূল সুর যেন বলে ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা...’ এই দু’টি দেশ ছাড়াও ঘোষবাড়ির স্টাডিতে রয়েছে চোখ জুড়ানো কাশ্মীরি কার্পেটের ঠাসবুনোট। উপরের ড্রয়িং রুম ও ডাইনিং রুমে মিলিয়েমিশিয়ে অনবদ্য দু’টি কারাবাখ, আর্মেনিয়ান ও দু’টি জর্জিয়ান কার্পেট। অয়নের কথায়, ‘‘প্রত্যেকটির বিশেষত্ব ডিজ়াইন। তার মোটিফ। বিভিন্ন দেশের বা জায়গার আলাদা আলাদা মোটিফ রয়েছে। সেটাই তার বিশেষত্ব। দেশগুলো পাশাপাশি বলে কার্পেট ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস খুব একটা অন্য রকম নয়। এগুলো উল অন উল কার্পেট এবং হ্যান্ডমেড। উলকে ন্যাচারাল কালার দিয়ে ডাই করে বানানো।’’
কটন, উল অন উল, কটন অন উল এবং সিল্ক— মূলত এই চার রকমের কার্পেট হয়। কার্পেটের পাইল নির্দেশ করে সে কার্পেট কতটা পুরু হবে। তবে ওজনে ভারী হলেই যে কার্পেট ভাল হবে তা বলা যায় না। তা হলে কী ভাবে বুঝবেন তার কোয়ালিটি? ‘‘কোন কার্পেটের কারুকাজ কত সূক্ষ্ম ও ঘন, বোঝা যায় কার্পেট ওলটালে। উলটো দিক থেকে ছবি বোঝা যায়। এবং আপনি ফ্রন্ট আর ব্যাকের বিশেষ তফাত করতে পারবেন না। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক নটিং। তা যদি বাইরের দিকে থাকে, তা হলে খুলে আসার সম্ভাবনা,’’ বলেন তিনি।
তবে এ শহরে ধুলোর কারণে কার্পেট মেনটেন করা কি সহজ কিংবা কার্পেট পরিষ্কার রাখতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রয়োজন কি না, এ রকম অনেক প্রশ্নই তো ঘুরপাক খায়। উত্তরে অয়নের স্ত্রী প্রিয়ব্রতা বললেন, ‘‘হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে বাড়িতেই কার্পেট ধুই। বছরে এক বার। হালকা রং হলে দু’বার। তার পরে রোদে শোকাতে হয়।’’
অতএব আপনার সাধ্য ও শখের মিলন ঘটাতে পারে কার্পেট। আর তার ভরণপোষণ? তাও নির্ঝঞ্ঝাট! তাই আপনার অন্দর এ বার সেজে উঠুক বাহারি কার্পেটের সাজে।