চা অনেকটা বিনি সুতোর মালার মতো। রাষ্ট্রনায়ক থেকে কলেজ পড়ুয়া, ইউরোপ হোক বা এশিয়া কিংবা বাঙালি বাড়ির অন্দরমহলে... সম্পর্ক জুড়ে যায় চায়ের চুমুকে, বিপ্লবের বীজ বোনা হয় চায়ের টেবলে, কত সাহিত্যের জন্ম হয়। এক কথায় চা সর্বত্র পূজ্যতে! কিন্তু জানেন কি, শুধু ভাল চা খাওয়ানো নয়, চা পরিবেশনের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে আপনার রুচি এবং ব্যবহার!
চা তৈরির খুঁটিনাটি
ফরমাল বা ক্যাজুয়াল, চায়ের আমন্ত্রণ যেমনই হোক, চায়ের কোয়ালিটি যেন উচ্চমানের হয়। অতিথির যেন মনে না হয়, তিনি স্রেফ গরম জল খাচ্ছেন। দার্জিলিং হোক বা অসমের চা, প্রথম চুমুকেই মুগ্ধতা আসা চাই। একেবারে রান্নাঘর থেকে কাপে চা ঢেলে ট্রে-তে করে সাজিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। আবার ট্রে-তে টি-পট, পেয়ালা পিরিচ সাজিয়েও নিতে পারেন। এটা নির্ভর করছে অতিথি ও চা-খাওয়ার পরিবেশের উপর। চিনা মাটির বা রুপোর সুন্দর টি –সেট বাড়িতে থাকলে অবশ্যই দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ট্রাই করুন। গরম জল ও চা পাতা মেশানোর পর টি-পটটিকে টিকোজি পরিয়ে রাখুন। এতে অনেকক্ষণ গরম থাকবে। দেখে নিন, টি-পটের ভিতর ফিলটার বা ছাঁকনি আছে কি না। খেয়াল রাখবেন, চা ঢালতে গিয়ে কাপে চা-পাতা না পড়ে। ভাল মানের চা কিন্তু দুধ চিনি সহযোগে খায় না। দুধ, চিনি বা সুগার কিউব আলাদা পাত্রে রাখবেন। অতিথির পছন্দ অনুযায়ী তা ব্যবহার করুন। ব্ল্যাক টি তৈরি করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন, সেটা চিনি ছাড়া হবে না কি চিনি সহ। দুধ, চিনির সঙ্গে একটি ছোট পাত্রে লেবুর স্লাইস রাখুন। লিকার বা গ্রিন টি-র সঙ্গে কেউ কেউ লেবু পছন্দ করতে পারেন।
টুকটাক নিয়ম
কাপ প্লেটের উপর রেখে ছোট একটা চামচ দিয়ে গেস্টের হাতে দিন। কাপ হাতে দেওয়ার আগে টি কোস্টার পেতে দিন। টি-পট থেকে কাপে চা ঢালার সময় খেয়াল রাখুন, যাতে চা ট্রে-তে না পড়ে, হাতে তুলে দেওয়ার সময় প্লেটেও না পড়ে। যদি টি-ব্যাগ ব্যবহার করেন, তা হলে টি-ব্যাগ সহ কাপ অতিথিকে দেবেন না। আর টি-ব্যাগ অতিথির সামনে চামচ দিয়ে বা হাত দিয়ে চিপবেন না।
সেটা ফেলার জন্য হাতের কাছে ছোট্ট বিন রাখুন। ট্রে-তে অবশ্যই টিসু পেপার রাখবেন। চায়ের ট্রে থেকে শুরু করে টি কোস্টার, টি কোজি, ছোট বিন সব কিছুই হতে হবে সুন্দর। আপনার টি- সেটের সঙ্গে মাননাসই। প্লাস্টিকের ট্রে-র বদলে কাঠ, বাঁশ ,বেতের বা কাচের ট্রে ব্যবহার করুন। চা তৈরির সময় খেয়াল রাখুন যাতে কাপ প্লেট চামচের বেশি আওয়াজ না হয়। তাড়াহুড়ো না করে ধীরেসুস্থে চা পরিবেশন করুন।
চায়ের সঙ্গে ‘টা’
চায়ের সঙ্গে কী ধরনের স্ন্যাক্স থাকছে, সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লাঞ্চের পর মোটামুটি দুপুর তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে চা-পানের আয়োজন করতে হলে, রাখুন নানা ধরনের কুকিজ, ছোট-পাতলা স্যান্ডউইচ, ছোট পেস্ট্রি ও প্যাটি। নোনতা বিস্কিটের উপর জ্যাম, ক্রিম, টম্যাটো সস, চিজ দিয়ে ডেকোরেশন করে দিতেও পারেন। অধিকাংশ বাঙালির ডিনারের অভ্যেস একটু রাত করেই। অনেকে চায়ের আমন্ত্রণে আসেন অফিস সেরে ছ’টা-সাতটার পর। সে সময় কেক, প্যাটি, স্যান্ডউইচের আয়তন বড় হতে পারে। চলতে পারে স্প্যানিশ ওমলেট, চিকেন বা পনির র্যাপও।
দেশি স্টাইল
টি-পট বা চিনামাটির পেয়ালা- পিরিচের বাইরে গিয়ে ব্যবহার করতে পারেন সেরামিকের মাটির ভাঁড়। অবশ্য এই রকম পাত্রে আদা, এলাচ দুধ সহযোগে মসালা চা-ই মানানসই। তার সঙ্গে দিতে পারেন কুকিজের বদলে টোস্ট বিস্কিট, প্যাটি-পেস্ট্রির বদলে শালপাতার বাটিতে শিঙাড়া, খাস্তা নিমকি, চপ, বেগুনি ধরনের তেলেভাজা। আপনার সন্ধে হয়ে উঠুক মনোরম।