আগে ওবেসিটি কমান

ইউটেরাইন প্রোল্যান্স বা নিম্নাঙ্গে জরায়ু নেমে আসা খুবই সমস্যা। প্রতিকারের কথা বলছেন ইউরো-গায়নোকলোজিস্ট ডা. মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। কথা বললেন সুজাতা মুখোপাধ্যায়।ইউটেরাইন প্রোল্যান্স বা নিম্নাঙ্গে জরায়ু নেমে আসা খুবই সমস্যা। প্রতিকারের কথা বলছেন ইউরো-গায়নোকলোজিস্ট ডা. মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০০:০৩
Share:

প্র: ইউটেরাইন প্রোল্যান্সের হঠাৎ এত বাড়াবাড়ি?

Advertisement

উ: ওবেসিটি বাড়ছে। ব্যায়ামের ধার ধারছেন না মহিলারা। ধূমপান বেড়েছে আগের তুলনায়। আবার ডায়েটিং করতে গিয়ে শিকার হচ্ছেন অপুষ্টির। সবে মিলেই হচ্ছে আর কি।

প্র: কিন্তু বাচ্চা তো হচ্ছে সিজার করে! আমরা তো জানতাম নরমাল ডেলিভারি হলে এ সব হয়।

Advertisement

উ: টানা-হ্যাঁচড়া করে নরমাল ডেলিভারি হলে চান্স বাড়ে ঠিকই। কিন্তু সিজার হলেও হতে পারে। আসলে ৯ মাস ধরে বাচ্চা ক্যারি করাটাই চাপের।

প্র: মানে?

উ: দেখুন, তলপেটের ভিতরে আছে পেলভিক ফ্লোর মাসল। তার উপরে গায়ে গায়ে লেগে আছে জরায়ু, ব্লাডার, রেক্টাম। সন্তান পেটে আসার পর যখন জরায়ু বড় হতে শুরু করে, মাসলের উপর চাপ বাড়ে। মাসল দুর্বল হতে থাকে। যত বেশি সন্তান হবে, তত এই পেশি দুর্বল হবে।

প্র: বাচ্চা না হলে হবে না?

উ: ক্রনিক কনস্টিপেশন, পুরোনো কাশি, পেটের অপারেশন, নার্ভে চোট, ওবেসিটি ইত্যাদি কারণেও হতে পারে। বয়সের সঙ্গেও পেশি দুর্বল হয়। দুর্বল হয় মেনোপজের পর শরীরে স্ত্রী হরমোন কমে গেলে, পেটে রেডিও থেরাপি হলে, অপুষ্টিতে, শুয়ে-বসে থাকার অভ্যেস হলে।

প্র: মেনোপজের পর জরায়ু বাদ দিয়ে দিলেই তো ঝামেলা শেষ?

উ: ঝামেলা বাড়তেও পারে।

প্র: জরায়ু না থাকলে আর বেরোবে কী?

উ: জরায়ু অপারেশনে পেলভিক ফ্লোর মাসল আরও দুর্বল হয়। সেই দুর্বলতার পথ ধরে বেরিয়ে আসতে পারে ব্লাডার বা রেক্টাম। কখনও দুটোই।

প্র: এ সব নিশ্চয়ই খুব বিরল ব্যাপার?

উ: একেবারেই বিরল নয়। আসলে সব সময় এরা যোনিপথের বাইরে বেরিয়ে আসে না বলে এ রকম মনে হয়।

প্র: বাইরে না বেরোলে তো আর সেটা প্রোল্যাপ্স নয়?

উ: প্রোল্যাপ্স মানে হল নিজের জায়গা থেকে নেমে আসা। ফার্স্ট ডিগ্রি প্রোল্যান্সে যোনিপথের কাছাকাছি নেমে এলেও বাইরে থেকে দেখা যায় না। দেখা যায় থার্ড ডিগ্রিতে। প্রথমে অল্পস্বল্প। ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে জরায়ু, রেক্টাম, ব্লাডার, সব বেরিয়ে আসতে পারে। তবে এতটা বাড়াবাড়ি কমই হয়।

প্র: এ রকম যে হতে চলেছে তা বুঝব কী করে?

উ: প্রথম দিকে যোনিপথের কাছটা ভারী ভারী লাগে, ইউরিন করতে অসুবিধে হয়, বার বার ইউরিন পায়, হাঁচলে-কাশলে-জোরে হাসলে ইউরিন লিক করতে পারে। সঙ্গে ইউরিনে জ্বালা, ব্যথা, অস্বস্তি, চুলকানি থাকতে পারে। সহবাস কষ্টকর হয়। কখনও আবার পেট পরিষ্কার হয় না, চাপ দিয়ে মলত্যাগ করতে হয় ইত্যাদি।

প্র: অধিকাংশই তো সব ইউরিন ও বাওয়েল মুভমেন্ট সংক্রান্ত উপসর্গ? প্রোল্যান্স তো হচ্ছে জরায়ুর!

উ: জরায়ু-ব্লাডার-রেক্টাম সব গায়ে-গায়ে লেগে থাকে! একটা নামলে, তার এফেক্ট অন্যটাতেও পড়ে। কখনও তারা বাইরে বেরোয় না কিন্তু সেই সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দেয়। কখনও বেরিয়েও আসে। উপসর্গের মাত্রা বাড়ে। শুধুমাত্র ইউটেরাইন প্রোল্যান্স খুব একটা হয় না।

প্র: এ সব ঠেকানোর কোনও রাস্তা নেই?

উ: চেষ্টা তো অবশ্যই করতে হবে। তবে সমস্যা হল শরীরে অন্য মাসলের মতো পেলভিক ফ্লোর মাসলের নীচে হাড়ের সাপোর্ট নেই। তার উপর মেয়েদের ক্ষেত্রে এতে রয়েছে তিন-তিনটি ছিদ্র। যোনি পথ, ইউরিনারি ও রেক্টাল প্যাসেজ। ফলে পেশিটি এমনিতেই একটু দুর্বল। তাকে শক্তপোক্ত করে ফেলতে না পারলে পান থেকে চুন খসলেই এ সব সমস্যা হতে পারে।

প্র: শক্তপোক্ত করার রাস্তা কী?

উ: কম বয়স থেকে পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করা। গর্ভাবস্থায় রুটিন মেনে এই ব্যায়াম করা।

প্র: তা হলেই হয়ে যাবে?

উ: না, এতে মাসলের মধ্যে দুর্যোগ এড়ানোর শক্তি আসবে।

প্র: আর দুর্যোগ ঠোকানোর রাস্তা?

উ: সুষম খাবার খেয়ে ও ব্যায়াম করে ওজন কন্ট্রোলে রাখুন। ভুলভাল ডায়েটিং করে অপুষ্টি হলে চলবে না। পেটে চাপ পড়া এড়াতে, কোষ্ঠকাঠিন্য, কাশি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ৩-৪ ঘন্টা অন্তর ইউরিন করতে হবে। বেশিক্ষণ ইউরিন হোল্ড করলে ব্লাডার বড় হয়ে গিয়েও সমস্যা বাঁধাতে পারে। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। এড়িয়ে যেতে হবে অকারণ পেটের অপারেশনও।

প্র: এত নিয়ম মানা কি মুখের কথা!

উ: যতটুকু সম্ভব মানুন। তাতে কাজ না হলে ওষুধ আছে, অপারেশন আছে। সে অপারেশনেও কাটাছাঁটা নিতান্তই কম। পেট না কেটেই অপারেশন হয়। একই সঙ্গে প্রোলাপ্স ও ইউরিন সমস্যা দুই-ই মেটে।

যোগাযোগ-৯৮৩১০২১৭৭৭

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement