Short story

সে নিজেকে বিলিয়ে দেয় তার অন্তিম দিনেও

যাকে আজ এত নিষ্ঠুরতার বিদায় জানানো হল; তার আনুমানিক বয়স হয়তো ওই ব্যস্ত মানুষগুলির পিতামহের সমান বা তার বেশি হলেও হতে পারত; — লেখক সুদীপ জোয়ারদার

Advertisement

সংগৃহীত প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৭:৩০
Share:

ছবি: সুদীপ জোয়ারদার

একটি গাছ কাটা হচ্ছে। যারা কাটছে দু’টি পয়সার জন্য, তাদের পক্ষে গাছটির বয়স বা গুরুত্ব অনুমান করা সম্ভব নয়। আর যারা আরও দু’টি পয়সা বেশি পাওয়ার তাগিদে ও নিজেদের সুবিধায় গাছগুলি কাটাচ্ছেন; অকৃতজ্ঞতা তাদের স্পর্শও করতে পারে না।

Advertisement

আজ সকাল থেকেই বাগানের দিকটায় বড় ভিড়। অনেক লোক এসেছে; কেউ গাছ কাটা দেখতে, কেউ তাদের পোষ্যদের খাওয়ার জন্য পাতা নিতে, আবার কেউ রান্নার জ্বালানি তাগিদে।

অশোক বাড়ির ছোট ছেলে; সবে কলেজ পাস করেছে। সে উপরের চিলেকোঠার ঘরে দু’টি ছাত্র পড়ায়। আজ পড়াতে মন বসছে না, যে কাঁঠালতলায় প্রতি বছর বড়দিনে নিয়ম ভাবে চড়ুইভাতির আসর বসত, বার্ধক্যের কারণে তার অস্তিত্ব আজ মহাসঙ্কটে। আপাতভাবে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই তার সমস্ত অবদান মানুষ এক লহমায় ভুলে গিয়েছে। এটাই বোধ হয় উত্তরাধুনিকতার বাস্তব রূপ।

Advertisement

মর-মরমর্ শব্দে চিলেকোঠার ঘর খানি কেঁপে ওঠার জোগাড়; ক্রমাগত কুঠারাঘাত আর সইতে না পেরে ধরিত্রীর বুকে লুটিয়ে পড়ল গাছটি। অপেক্ষারত অর্থলোভী দল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, “যাক বাবা! এতক্ষনে হল।”

একটি গাছের জন্ম থেকে তার বেড়ে উঠতে যতগুলি বসন্ত কেটেছে। সেগুলিকে এক পলকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারাও তো আর যে সে কথা নয়!!

গাছটি মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল মানুষ ছুটে গেল তার দিকে; যারা এতক্ষণ অপেক্ষায় ছিল, কারণ গাছের শরীর থেকে তার অংশগুলি আলাদা করতে তাদের বড় তাগিদ। শুরু হল তীব্র বাক-বিতণ্ডা। করাতের অসহনীয় আওয়াজ অশোকের কানে প্রবেশ করামাত্র যন্ত্রণায় তার মাথা ভোঁ ভোঁ করে উঠল। অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা নিরব মুখ আর হাতগুলি হঠাৎ কেমন ব্যস্ত হয়ে পড়ল, নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য। অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়ে নিজের জন্য কিঞ্চিৎ হলেও বেশি সঞ্চয়ের তাগিদে। সকলের মধ্যে একমাত্র শান্ত; মৃত্যুর কোলে শুয়ে থাকা গাছটি, যে চির শান্তিতে শুয়ে রয়েছে; নিশ্চিন্তে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে তার অন্তিম দিনেও।

অনেক ভাবনা আর স্মৃতি এসে ভিড় করে অশোকের মাথায়। সে ভাবে যে আর কোনওদিন কাঁঠালতলায় গ্রীষ্মের দিনে বসার সুযোগ পাবে না। যাকে আজ এত নিষ্ঠুরতার বিদায় জানানো হল; তার আনুমানিক বয়স হয়তো ওই ব্যস্ত মানুষগুলির পিতামহের সমান বা তার বেশি হলেও হতে পারত; কিন্তু তাতে কার কি এসে যায়?

হায়!! একটু ভাবার সময়ও অশোক পেল না। আসলে ব্যস্ততার যুগে ভাবনার কোনও সময় নেই। কোনও স্থান নেই। তা হলে যে পিছিয়ে যেতে হয়। বাবা ডেকে পাঠায় অশোককে। গাছের যে টুকরো টুকরো অঙ্গগুলি বাগানের মাটিতে তখনও পড়ে আছে সেগুলি হিসাব করে টাকা বুঝে নিতে হবে তো!

এই প্রতিবেদনটি ‘আষাঢ়ের গল্প’ কনটেস্ট থেকে সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement