সতর্কতার বালাই নেই, সংক্রমণের শঙ্কা

হাসপাতালের তিন তলার লম্বা করিডর। সংরক্ষিত এলাকার এক পাশে নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ)। উল্টো দিকে ‘নিওন্যাটাল’ ওয়ার্ড। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এই দুই ওয়ার্ডেই সোমবার থেকে বুধবার দুপুর অবধি মৃত্যু হয়েছে ন’টি শিশুর। বুধবার দুপুরের পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর অবধি মারা গেল আরও দুই শিশু। এদের মধ্যে এক জন ভর্তি ছিল নিওন্যাটাল ওয়ার্ডে। অন্য জন এসএনসিইউ-তে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

চটি খুলে ওয়ার্ডে আসা যাওয়া। —নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালের তিন তলার লম্বা করিডর। সংরক্ষিত এলাকার এক পাশে নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ)। উল্টো দিকে ‘নিওন্যাটাল’ ওয়ার্ড। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এই দুই ওয়ার্ডেই সোমবার থেকে বুধবার দুপুর অবধি মৃত্যু হয়েছে ন’টি শিশুর। বুধবার দুপুরের পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর অবধি মারা গেল আরও দুই শিশু। এদের মধ্যে এক জন ভর্তি ছিল নিওন্যাটাল ওয়ার্ডে। অন্য জন এসএনসিইউ-তে।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, এই দুই শিশুই আক্রান্ত ছিল জন্মগত শ্বাসকষ্টের সংক্রমণে। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ‘বার্থ অ্যাসপেকসিয়া’। আগের ৭২ ঘণ্টায় যেখানে নয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে, বৃহস্পতিবার সেই দু’টি ওয়ার্ডের ঠিক বাইরেই দেখা গেল সংরক্ষিত এলাকার মধ্যেই ওয়ার্ডের দরজার ঠিক বাইরে একাধিক মহিলা জুতো খুলে রেখেছেন। দুই ওয়ার্ডের দরজার বাইরে সবুজ রঙের পাপোশ। তার উপরেও কাদামাখা জুতো। জল সপসপ করছে পাপোশ জুড়ে। এক চিকিৎসক বললেন, “এখান থেকেই তো ভিতরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে! এই এলাকা সংরক্ষিত। এখানে ঢোকার আগে সিঁড়ির মুখে পৃথক দরজা বসানো রয়েছে। সেখানেই জুতো খুলে আসার কথা। সে ব্যাপারে সতর্কতাবাণীও রয়েছে। কিন্তু, কে শোনে কার কথা!” এক জন নার্স চিৎকার করে বলছিলেন, “এখানে কে জুতো খুলেছেন?”

প্রশ্ন শুনে হন্তদন্ত হয়ে বেরিযে এলেন কেন্দা থানার মানাড়া গ্রামের সারথি রজক। জানালেন, নাতি ভর্তি আছে। কেন জুতো পরে ভিতরে এসেছেন, জানতে চাওয়ায় বললেন, “আরও অনেকেই জুতো পরে এসেছে দেখে আমিও এখানে জুতো খুলেছিলাম।” একই কথা বলে নিজের জুতো নিয়ে বেরিয়ে গেলেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা খায়রুন বিবিও। ওয়ার্ডের এক প্রান্তে মহিলাদের শৌচাগার রয়েছে। এক পাশে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য, অন্য পাশে শিশুর সঙ্গে থাকা মা বা বাড়ির লোকজনের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু, শৌচাগারের দুই দরজার বাইরে যে বারান্দা, যেখানেই ছড়ানো রয়েছে এঁটো ভাত, ছেঁড়া জুতো। সেখানেই নোংরা জল ফেলছেন লোকজন। এক নার্সের কথায়, “কী বলব বলুন, আমরা নিজেরাই এই শৌচাগারে যেতে পারি না। কী ভাবে যাব এই নোংরা মাড়িয়ে! কাউকে বলে কোনও লাভ হয় না। এই জায়গা থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।”

Advertisement

নিজেদের অসহায়তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেনও। তিনি বলেন, “কাকে কী বলব! এর জন্য সচেতনতা জরুরি। মানুষজনের সচেতনতা ছাড়া এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবু আমরা দেখছি, কী করা যায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement