কথা ছিল ২০০টি শয্যা চালুর, আর এখন স্বাস্থ্যকর্তারা চাইছেন কোনওমতে ৩০ শয্যাতেই মুখরক্ষা হোক!
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কলকাতার প্রথম প্রস্তাবিত ট্রমা কেয়ার ইউনিট খুলতে গিয়ে নাস্তানাবুদ স্বাস্থ্য দফতর আপাতত তেমনই নির্দেশ দিয়েছে হাসপাতালের কর্তাদের। কিন্তু পরিকাঠামোর অবস্থা এত সঙ্গীন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাল্টা জানিয়েছেন, লোক না পেলে ৩০ দূরে থাক একটি শয্যাও এ বছরের মধ্যে চালু করা যাবে না। কিন্তু লোক নেওয়া হবে কী করে, এখনও অর্থ দফতরের অনুমোদনই তো স্বাস্থ্য দফতর জোগাড় করে উঠতে পারেননি! এ দিকে, ইউনিট খোলার নির্ধারিত সময়ের পর সাড়ে তিন বছর পেরিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য দফতরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে ঠিক কত দেরি হতে পারে?
মূলত দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে এই ইউনিটের পরিকল্পনা হয়। ঠিক হয়, এক ছাদের নীচে সব ধরনের পরীক্ষা ও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে। রাজ্যে এমন একাধিক ইউনিট চালুর কথা হয়। কলকাতায় প্রথম ইউনিট চালুর পরিকল্পনা হয় আরজিকর-এ। সেটি ২০০৮ সাল, বাম আমল। কথা ছিল, ২০১১ সালের জুলাইয়ে আরজিকরে ২০০ শয্যার প্রস্তাবিত ইউনিট চালু হবে। এ জন্য ১৬ কোটি টাকা অনুমোদন হয়। কিন্তু বহু বছর পেরোয়, কাজ এগোয় না। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩-এর জুলাইয়ে ইউনিট চালুর কথা ঘোষণা করে। সেখান থেকে পিছিয়ে ঠিক হয় ২০১৪ সালের প্রথমে। এখনও যা অবস্থা, তাতে ২০১৫’র শুরুতে হবে কি না বুঝতে পারছেন না আরজিকরের কর্তারা।
এ দিকে, কলকাতায় কেন একটা ট্রমা কেয়ার চালু করতে এই অবস্থা, সেই প্রশ্নে সমালোচিত হতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যভবন থেকে নির্দেশ এসেছে, অবিলম্বে যে কোনও ভাবে অন্তত ৩০ শয্যা চালু করা হোক। রাজ্যের শিক্ষা স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বাড়ি তো হয়ে দিয়েছে। এক বার ৩০টি শয্যা চালু হলে একটু-একটু করে বাকিটা হয়ে যাবে।” যা শুনে আরজিকরের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, “সম্ভব নয়। ডাক্তার যা আছে তা দিয়ে ঠেকনা দেওয়া যাবে কিন্তু বাকি লোক শূন্য। অন্তত ৫৬ জন নার্স, ৪৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী লাগবে, টেকনিশিয়ান লাগবে। না হলে ট্রমা কেয়ার মুখ থুবড়ে পড়বে। সামনের বছরের আগে চালু করা যাবে বলে মনে হয় না।”
কিন্তু এত বছরে দেরির পরেও কেন লোক নেওয়া হল না? কেন অর্থ দফতরের অনুমোদন বার করতে পারল না স্বাস্থ্য দফতর? সুশান্তবাবুর উত্তর, “সরকারি ব্যবস্থায় কিছু সময় লাগে। পলিসি, অগ্রাধিকারের ব্যাপার থাকে। আমরা শুধু ট্রমা কেয়ার নিয়ে বসে নেই। এত এসএনসিইউ খোলা হচ্ছে, আইসিইউ খোলা হচ্ছে।” ট্রমা কেয়ার কি সরকারের ‘প্রায়োরিটি’ নয়? শিক্ষাস্বাস্থ্য অধিকর্তার উত্তর, “তা ঠিক নয়, একের পর এক হবে। আমরা লোক নিতে অর্থ দফতরের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। পূর্ত দফতর বাড়ি তৈরিতে দেরি করেছে বলে লোক নেওয়ার আবেদন করতে পারিনি।”
যা শুনে পূর্ত দফতরের সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে বলেন, “আমরা দেরি করিনি। স্বাস্থ্য দফতরকে জিজ্ঞাসা করুন, ওরা টাকা কত দেরিতে ছেড়েছে। এখনও আমাদের পাওনা আছে, তাও বাড়ির কাজ শেষ করে দিয়েছি।” স্বাস্থ্যকর্তারা জবাবে জানান, টাকার সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন ২ কোটি ৮০ লক্ষের মতো মেটানো বাকি। পূর্ত দফতর এখনও ট্রমা কেয়ার ভবনে অক্সিজেন সরবরাহের পাইপলাইন তৈরি করতে পারেনি, বাড়ির মধ্যে ট্রলি বা হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা বানায়নি, এত ছোট দরজা বানিয়েছে যা দিয়ে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ঢুকছে না, লিফটের কাজ এবং এসি-র কাজ শেষ হয়নি, এমনকী ভবনের ফায়ার লাইসেন্সও এখনও পাওয়া যায়নি।
তা হলে ৩০ শয্যাও বা চালু হবে কী করে? আরজিকরের কর্তারা বলছেন “ঈশ্বর জানেন!”