রোগীর দেহে ডেঙ্গির পরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু

শিলিগুড়ির গঙ্গানগরের বাসিন্দা সঞ্জয় খাতি নামে ১৪ বছরের যে কিশোরের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল রক্ত পরীক্ষায় তার দেহে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণুও পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার রক্ত পরীক্ষা রিপোর্ট দেখে এ কথা জানানো হয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ওই এলাকায় মশা মারার তেল স্প্রে করা হয় না বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১২
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার।

শিলিগুড়ির গঙ্গানগরের বাসিন্দা সঞ্জয় খাতি নামে ১৪ বছরের যে কিশোরের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল রক্ত পরীক্ষায় তার দেহে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণুও পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার রক্ত পরীক্ষা রিপোর্ট দেখে এ কথা জানানো হয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ওই এলাকায় মশা মারার তেল স্প্রে করা হয় না বলে অভিযোগ। এমনকী সাফাই পরিষেবা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পুরসভাকে সাফাইয়ের এবং মশা মারতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গির সংক্রমণ ঘটছে বলে যে ১২টি ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তারমধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ড অন্যতম। সেথানে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাসিন্দা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ওয়ার্ডে অন্তত ১২ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তবে সঞ্জয়ের শরীরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু থাকার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য দফতরকে। গত শনিবার থেকে সঞ্জয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তার আগে একাধিক নার্সিংহোমে ভর্তি করে তাঁর চিকিত্‌সা করছিলেন পরিবারের লোকেরা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস জানিয়েছেন, সঞ্জলের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক।

দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা হচ্ছে। এলাকা পরিষ্কার রাখার ওপরে জোর দিতে পুর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” এলাকায় সাফাই পরিষেবা যথাযথ নয় বলে বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য এ দিনও অভিযোগ তুলেছেন। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ বলেন, “মশা মারতে পুরসভা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এলাকায় দুই তিন সপ্তাহ ধরে আবর্জনা পড়ে থাকছে। জ্বরে আক্রান্ত এলাকার অনেকেই। তাঁদের অনেকেরই ডেঙ্গি হয়েছে বলে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন।”

Advertisement

গত সোমবার নিজেই কোদাল হাতে নিয়ে নর্দমা সাফ করতে গিয়ে বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রীকে ওই কাজ করতে দেখে বাসিন্দারা অনেকে প্রতিবাদও জানিছিলেন। তবে হাতে কোদাল তুলে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে ‘অভিনন্দন’ জানালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তিনি বলেন, “পুরসভা ময়লা পরিষ্কার করছে না বলেই, মন্ত্রীকে হাতে কোদাল নিতে হচ্ছে। তাতে জনরোষের মুখে পড়লেও, তাঁকে অভিনন্দন জানাই। কেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও স্বচ্ছ ভারত মিশনে সামিল হয়েছেন।”

যদিও, রাহুলবাবুর ‘অভিনন্দন’কে কটাক্ষ বলেই মনে করছেন শাসক দলের শিলিগুড়ির নেতারা। তাঁরা মনে করেন, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সামিল হয়েছেন বলে দাবি করে, তৃণমূলের অন্দরে বিভাজন করার চেষ্টা করছেন রাহুলবাবু। গত শনিবার কোচবিহারের দেওয়ানহাটে স্বচ্ছ ভারতের সাফাই অভিযানে সামিল হতে যাওয়া বিজেপি সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে এ দিন রাহুলবাবু দাবি করেন, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে ভাগ রয়েছে। রাহুলবাবুর মন্তব্য, “শিলিগুড়ির মন্ত্রী যে ভাবে মোদীজির ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তৃণমূলের অন্যদেরও সে পথে সামিল হওয়া উচিত।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “অভিনন্দন জানানোয় ধন্যবাদ। তবে ওদের কথার কোনও উত্তর নেই। মোদীজির স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাস দু’য়েক আগেই ‘কিপ শিলিগুড়ি ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ অভিযান আমরা শুরু করেছি। তবে পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সবুজায়ন নিয়ে আমাদের মদ্যে স্ববিরোধিতা নেই। শিলিগুড়ি আমাদের অভিযান হয়তো মন্ত্রীকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের লোকেরা তাই বলছেন।”

এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সঞ্জয় খাতিকে দেখতে যান প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ছিলেন সিপিএম নেতা জীবেশ সরকারও। তাঁর অভিযোগ, “ওই কিশোর জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এলাকায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তাকে মশা কামড়ায়। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। শহরে ডেঙ্গি এবং এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ চলছেই। তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা হচ্ছে না।”

অশোকবাবু বলেন, “সস্তা প্রচার পেতে মন্ত্রী কোদাল হাতে নর্দমা পরিষ্কার করতে নামছেন। অথচ দিনের পর দিন নিকাশি সাফাই করা হয় না। তা নিয়ে বাসিন্দারা অসন্তুষ্ট। এ দিন এলাকায় আমি গিয়েছিলাম। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দাবি, “বাম জমানা থেকেই নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ গড়ে তোলা হয়নি। তাই এখন ভুগতে হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement