রোগিণীকে ‘রেফার’ করার সময় তাঁর সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে চাননি বলে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ওই চিকিৎসককে মারধরও করা হয়েছে। বুধবার রাতে ফালাকাটা ব্লক হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, হাসপাতালের সিলিন্ডার বাইরের অ্যাম্বুল্যান্সে দেওয়ার নিয়ম নেই, সে কারণেই ওই রোগিণীর সঙ্গে সিলিন্ডার দেওয়া হয়নি। ওই রোগিণীকে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানেই মারা যান তিনি।
নিগৃহীত চিকিৎসক রোগীর এক আত্মীয়ের নামে ফালাকাটা থানায় অভিযোগ জমা দেন। পুলিশ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে মারধরের মামলা দায়ের করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবশ্য কেউ গ্রেফতার হয়নি। হাসপাতালের বিএমওএইচ সুমন রুদ্র তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওই রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন ছিল বলে তিনি স্বীকার করে নেন। হাসপাতালে বাড়তি অক্সিজেন ছিল বলেও তিনি জানান। সুমনবাবুর যুক্তি, “সরকারি সম্পত্তি আমরা বাইরের অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। তাই অক্সিজেন দেওয়া হয়নি।” তাঁর দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসককে মারধর করার পাশাপাশি ওই রোগীর লোকজন হাসপাতালের আলমারি ভাঙচুর করেছে। তবে পরিষেবা স্বাভাবিকও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার অবশ্য বলেছেন, “অক্সিজেন বাইরে না দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মনে করলে অক্সিজেন দিয়ে তাঁকে রেফার করতে পারেন। তবে তা ওই চিকিৎসকের উপর নির্ভর করে।” মৃত শ্যামলী দেবীর স্বামী নারায়ণ সরকার ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, “চিকিৎসক যে এতটা অমানবিক হতে পারে তা ভাবিনি। আমি বয়স্ক মানুষ। হাত জোড় করে অনুরোধ করি। তিনি উল্টে আমাকে, জামাইকে গালমন্দ করেন। আমরা ওঁকে মারিনি। উনি কেন এমন ভাবে অভিযোগ করলেন বুঝতে পারছি না।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত ফালাকাটা জয়চাঁদপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের গৃহবধূ শ্যামলী সরকারকে (৫৮) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর পরিবারের লোকজন জানান, সে সময় হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের দায়িত্বে থাকা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ওই রোগীকে দু’টি ইনজেকশন দিয়ে অন্যত্র চলে যান। অভিযোগ, শ্যামলীদেবী সে সময় কাতরাচ্ছিলেন। রোগীর ওই অবস্থা দেখে তাঁর আত্মীয়স্বজন চিকিৎসককে বারবার রেফার করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন। সে সময় ওই চিকিৎসক কোনও কথার জবাব দেননি বলে অভিযোগ বাড়ির লোকজনদের। আধ ঘণ্টা ধরে ওই অবস্থা চলার পরে চিকিৎসক অবশ্য রোগীকে রেফার করেন। রেফার করার পাশাপাশি ওই রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন বলে চিকিৎসক জানান। রাতে হাসপাতালের বাইরে থেকে অক্সিজেন মিলবে না। তাই হাসপাতালের একটি অক্সিজেন দেওয়ার জন্য আবেদন করলে চিকিৎসক তা দিতে রাজি হননি বলে অভিযোগ।
তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। হাসপাতালের বাইরে থাকা কয়েকজন যুবক ওই রোগীর আত্মীয়দের সমর্থন করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ার জন্য দাবি করেন। বচসা মারপিটের আকার ধারণ করে। ৪-৫ জন মিলে চিকিৎসক অভিষেকবাবুকে পেটান বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ পৌঁছনোর আগে রোগীকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ৪৫ কিলোমিটার দূরে কোচবিহারে রওনা হন পরিবারের লোকজন। ফালাকাটা থানার এক পুলিশ অফিসারের কথায়, রোগীর আত্মীয়দের ধরতে চিকিৎসক ও কয়েকজন কর্মী অপর একটি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বার হতে যান। তাদের না আটকালে ঝামেলা বাড়ত। শ্যামলী দেবীকে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পর গভীর রাতে তিনি মারা যান।