মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে প্রসূতিকে নতুন জীবন দিল বিরল অস্ত্রোপচার

মায়ের গর্ভে যে জলীয় পদার্থের (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড) মধ্যে সন্তানের বাস, সিজারিয়ান প্রসবের সময়ে সেই জলীয় পদার্থই আচমকা মিশে গিয়েছিল মায়ের রক্তে। দ্রুত নেমে যাচ্ছিল রক্তচাপ। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মারাত্মক কমে গিয়ে ধড়ফড় করছিলেন সেই তরুণী। ভেন্টিলেশনে রেখেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, এ যাত্রা পরিত্রাণের আর কোনও উপায় নেই। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা অবশ্য হাল ছাড়েননি। তাঁদের লাগাতার লড়াইয়ে তিন দিন পরে বিপদ কাটল। আক্ষরিক অর্থেই নতুন জীবন ফিরে পেলেন ওই তরুণী। মা ও শিশু দুজনেই এখন সুস্থ।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫১
Share:

মায়ের গর্ভে যে জলীয় পদার্থের (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড) মধ্যে সন্তানের বাস, সিজারিয়ান প্রসবের সময়ে সেই জলীয় পদার্থই আচমকা মিশে গিয়েছিল মায়ের রক্তে। দ্রুত নেমে যাচ্ছিল রক্তচাপ। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মারাত্মক কমে গিয়ে ধড়ফড় করছিলেন সেই তরুণী। ভেন্টিলেশনে রেখেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, এ যাত্রা পরিত্রাণের আর কোনও উপায় নেই। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা অবশ্য হাল ছাড়েননি। তাঁদের লাগাতার লড়াইয়ে তিন দিন পরে বিপদ কাটল। আক্ষরিক অর্থেই নতুন জীবন ফিরে পেলেন ওই তরুণী। মা ও শিশু দুজনেই এখন সুস্থ।

Advertisement

এই ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করছে শহরের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক মহল। তাঁদের মতে, এ দেশে এমন সমস্যায় সাধারণ ভাবে মৃত্যু অনিবার্য পরিণতি। বিদেশেও বাঁচার হার খুব কম।

চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যার নাম অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এম্বোলজিম। জলীয় পদার্থ রক্তে মিশে গেলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই সমস্যাটা এমনই যে, আগে থেকে কোনও আঁচ পাওয়া যায় না। ফলে একে ঠেকানোরও কোনও উপায় নেই।

Advertisement

প্রসবের সময়ে এক লক্ষ মহিলার মধ্যে এক জনের এই সমস্যা হতে পারে। সমস্যার সূত্রপাত হয় অক্সিজেনের অভাব এবং শ্বাসকষ্ট দিয়ে। তার পরে আচমকাই রক্তচাপ এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায়। ফুসফুস জলে ভরে ওঠে। সংজ্ঞা হারিয়ে রোগিণী শক-এ চলে যান। কারও কারও হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসে আঘাতের কারণে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয়। কারও আবার শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল? মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের অধিকর্তা অরিন্দম কর বলেন, “এ ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত ওই মহিলাকে ভেন্টিলেশনে দিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও ওঁর ফুসফুসে ন্যূনতম অক্সিজেনটুকুও পৌঁছচ্ছিল না। হার্টও রক্ত পাম্প করতে পারছিল না। ফলে প্রায় সকলেই ধরে নিয়েছিলেন আর কিছু করার নেই।”

তার পর? অরিন্দমবাবু বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে খুব দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিই। স্থির করি ফুসফুস এবং প্রয়োজনে হার্টের কাজটাও যন্ত্রের মাধ্যমে করাতে হবে। ব্যাপারটা অনেকটা কৃত্রিম ফুসফুসের মতো। এরই পাশাপাশি ইন্ট্রা অ্যাওর্টিক বেলুুন পাম্পের সাহায্যে হার্টের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়। কিন্তু হার্টের কোনও পরিশ্রম হয় না। কারণ গোটা বিষয়টিই ঘটে কৃত্রিম ভাবে। ওই তরুণীর হার্ট এবং ফুসফুস বিশ্রাম পাওয়ার পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে।”

৭২ ঘণ্টার একটানা চেষ্টার পরে চিকিৎসায় সাড়া দেন তরুণী। আপাতত তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরের অন্য স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকরাও। চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর বলেন, “এটা খুব বিরল একটা সমস্যা। কার যে কখন হবে, সেটা আগে থেকে বোঝা যায় না। হঠাৎ পেটে আঘাত লাগলে হতে পারে। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়।”

স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মেমব্রেন ফুটো হয়ে প্রসূতির শরীরে জল ভাঙতে শুরু করে। তার পরে তা হার্টে পৌঁছে কোথাও একটা আটকে যায়। ফলে হার্টের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এটা এমন একটা সমস্যা যা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এ ক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement