খরচ মেলেনি, ক্ষোভ

মেডিক্যাল থেকে চলে যাওয়া বৃদ্ধার মৃত্যু জেই-তে

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক জনের মৃত্যু হল। শনিবার ভোররাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে মুস্কিপুর এলাকার বড়গ্রামের বাসিন্দা সুষমা সরকার (৬২) বাড়িতেই মারা যান। প্রথমে রায়গঞ্জ হাসপাতালে এবং পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিত্‌সা করানো হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে সুষমাদেবীকে নিয়ে যাচ্ছেন পরিজনেরা।—ফাইল চিত্র।

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক জনের মৃত্যু হল। শনিবার ভোররাতে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে মুস্কিপুর এলাকার বড়গ্রামের বাসিন্দা সুষমা সরকার (৬২) বাড়িতেই মারা যান। প্রথমে রায়গঞ্জ হাসপাতালে এবং পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিত্‌সা করানো হয়েছিল। তা করাতে গিয়েই ধারদেনা করে অন্তত ৩০ হাজার টাকা তাঁদের খরচ করতে হয় বলে পরিবারের লোকদের দাবি। হাসপাতাল থেকে খরচ মিলছে না এবং চিকিত্‌সা পরিষেবাও ঠিক মতে হচ্ছে না অভিযোগ করে গরিব পরিবারের ওই রোগিণীকে গত ১৪ অগস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। সেই থেকে চিকিত্‌সা পরিষেবার অভাবে বাড়িতেই পড়ে ছিলেন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত বৃদ্ধা। গত জুলাই মাস থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ১২০ জন মারা গিয়েছেন। জানুয়ারি থেকে মৃত ১৫৭ জন। তার মধ্যে ৩৬ জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

Advertisement

বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর চিকিত্‌সাও ঠিক মতো হচ্ছিল না। পরিবারের লোকেরা জানান, বাড়িতে ফেরার পর আশার স্বাস্থ্যকর্মীরা সুষমা দেবীর খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন। সে সময় সরকারের তরফে হাসপাতালে নিখরচায় চিকিত্‌সা ব্যবস্থা করার জন্য তাঁদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু সরকারের তরফে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। তাতে বাড়িতেই রাখতে হয় অসুস্থ ওই মহিলাকে। শরীর খুব খারাপ হলে পরিচিত স্থানীয় এক চিকিত্‌সকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তাঁর ছেলেরা। পরিচিতির সুবাদে তিনি নিখরচায় পরামর্শ দিতেন। খরচের কথা ভেবে পরিবারের লোকেরা সুষমাদেবীকে মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি বলে অভিযোগ। কেন না হাসপাতাল বা সরকারের তরফে কোনও সাহায্য এখনও তাঁদের মেলেনি। হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি কেন? সুষমাদেবীর ছেলে বাপ্পাবাবুর জবাব, “চিকিত্‌সক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে জানতে চাইলেও তাঁরা ঠিক মতো কিছু জানাননি।”

সুষমাদেবীর পরিজনের ক্ষোভ, সরকারি তরফে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তদের চিকিত্‌সার খরচ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা যে ঠিক মতো মিলছে না এই ঘটনাই তার প্রমাণ। তা ছাড়া বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তাদের সাহায্যের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলেও তাঁদের অভিযোগ। উত্তরবঙ্গে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্‌সা খরচ হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হচ্ছে। রোগীর পরিবার খরচ করে থাকলে তা তাঁরা ফেরত পান। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।” চিকিত্‌সা খরচের ব্যাপারে রোগীর পরিবার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না-করলেও হাসপাতালের তরফেই যাতে তাঁদের বিস্তারিত জানিয়ে সমস্ত সাহায্য করা হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তা ছাড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর কেন উদ্যোগী হয়নি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুষমা দেবীকে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে অগস্ট মাসের শুরুতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। দিন পাঁচেক সেখানে চিকিত্‌সার পর রেফার করা হলে গত ১২ অগস্ট তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে উন্নত চিকিত্‌সা মিলবে বলেই আশা করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। সুষমাদেবীর ছেলে বাপ্পাবাবুর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মেঝেতে ঠাঁই হয়েছিল সুষমাদেবীর। ঠিক মতো চিকিত্‌সাও হচ্ছিল না। চিকিত্‌সক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে চিকিত্‌সার ব্যাপারে জানতে চাইলে তাঁরা ঠিক মতো কোনও প্রশ্নের জবাব দিতেন না বলে অভিযোগ। তা ছাড়া এমআরআই এবং ওষুধ কিনতে খরচ হচ্ছিল। সব মিলিয়ে তখনই ধারদেনা করে ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ করে ফেলেছেন তাঁরা। দেড় বিঘা জমিতে চাষ আবাদ করে তিন ভাইয়ের সংসার চলে। কখনও সব্জি কিনে হাটে বিক্রি করতে হয়। তাই মার চিকিত্‌সার জন্য আর অর্থ ব্যয় করার মতো সামর্থ্য তাঁদের ছিল না বলে জানান বাপ্পাবাবু। তা ছাড়া উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগিনী ভর্তি থাকায় পরিবারের লোকদেরও থাকতে হচ্ছিল। তার খরচ রয়েছে। সব দিক ভেবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে মাকে বাড়িতে নিয়ে যান তাঁরা। বাপ্পাবাবু বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মায়ের চিকিত্‌সার খরচ করা সম্ভব হচ্ছিল না। চিকিত্‌সাও ঠিক মতো হচ্ছিল না দেখে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। এখানেই পরিচিত চিকিত্‌সককে দেখাতাম। কিন্তু মাকে বাঁচাতে পারলাম না। সরকারের তরফে নিখরচায় চিকিত্‌সার ব্যবস্থা হলে হয়ত বাঁচাতে পারতাম।”

প্রত্যন্ত এলাকার অভাবি পরিবারের বাসিন্দা সুষমাদেবীর চিকিত্‌সার ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কেন সাহায্য মিলল না? মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তদের চিকিত্‌সা খরচ হাসপাতাল থেকেই দেওয়া হচ্ছে। রোগীর পরিবারকেও তা জানানো হচ্ছে। রোগীর পরিবার আগে খরচ করলে পরে তাদের খরচের অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ঠিক কী হয়েছে দেখতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement