পোস্টারে প্রতিবাদ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে
এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি সামলাতে চিকিৎসকদের ‘শাস্তি’র বিরুদ্ধে সরব হল সংগঠন। এ নিয়ে রাজনীতিরও অভিযোগ তুলেছে তারা।
সুপার সাসপেন্ডের পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনুপ রায়কে সাসপেন্ড করার ঘটনার বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সাঁটিয়ে প্রতিবাদ জানায়। ‘প্রিন্সিপালের অন্যায় সাসপেনশনে তীব্র ধিক্কার’ লেখা পোস্টার এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুপারের দফতরের সামনে, করিডরের দেওয়ালে সর্বত্রই নজরে পড়েছে। সংগঠনের সভাপতি শঙ্কর কবিরাজ বলেন, “অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে সাসপেন্ড করা হয়েছে। চিকিৎসকরা অনেকেই শঙ্কিত। ঠিকঠাক কাজ করলেও বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন করায় অনেক চিকিৎসকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। শাসক দলকে সমর্থন না করায় যে কোনও সময় আমাদের মতো চিকিৎসকদের উপরেও খাঁড়ার ঘা মেনে আসতে পারে।”
ওই চিকিৎসকের সঙ্গে সহমত হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের অনেকেই। প্রকাশ্যে তাঁদের একাংশ কিছু না বললেও তাঁদেরও যুক্তি, পরিকাঠামো ঠিক নেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। ৫৯৯ জন রোগীর জায়গায় প্রায় ১২০০ জন রোগী থাকছে। অর্ধেক কর্মী, চিকিৎসককে নিয়ে কী ভাবে দিনের পর দিন চালাতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের তা বোঝা উচিত। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাঁদের নজরে আনলেও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তা নিয়ে তো কখনও উচ্চবাচ্য করা হয় না বলে অভিযোগ।
উত্তরবঙ্গের ৬ টি জেলা ছাড়াও লাগোয়া বিহার, অসম, নেপাল থেকে অনেক রোগী এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। এনসেফ্যালাইটিসের এই পরিস্থিতিতেও কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের তরফে সম্প্রতি ডুয়ার্সের ক্রান্তিতে স্বাস্থ্য শিবির করে এনসেফ্যালাইটিস সন্দেহে ৫০ জন রোগীর রক্তের নমুনা আনা হয়েছিল। কিটের অভাবে ৫ দিন পরেও তা পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সংগঠনের সদস্যরা। আজ, বুধবার এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে ঠিকও করেছেন।
রোগীদের পরিজনের অভিযোগ, নিয়ম মেনে শৌচাগার পরিষ্কার না হওয়ায় সেগুলি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক, আধিকারিকদের একাংশের দাবি, হাসপাতালে সাফাই কর্মী যা প্রয়োজন তার তুলনায় অর্ধেক লোক রয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় অমিল হয়ে পড়ছে ট্রলিও। ধরাধরি করেই নিয়ে যেতে হচ্ছে অসুস্থ রোগীদের। এ দিকে নজর না দিয়ে কেবল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সমালোচনা করেছেন রোগীর পরিজনের একাংশ।
একের পর এক সাসপেন্ডের ঘটনাকে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “চিকিৎসকেরা এর পর কাজ করতে চাইবেন না। মুখ্যমন্ত্রী কি চান বাসিন্দারা নার্সিংহোমে গিয়ে চিকিৎসা করাক? গরিব বাসিন্দাদের অনেকেরই সেই সামর্থ্য নেই।” অশোকবাবু বলেন, “আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি এখান থেকে নিয়মিত তথ্য জানানো হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরে যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁরাই খোঁজখবর রাখেননি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে কোনও তথ্য দেননি। তাদের সাসপেন্ড করা দরকার। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত স্বাস্থ্য দফতরের ছেড়ে সেখানে পূর্ণ সময়ের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া।”
এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতিতে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষ অনুপ রায়কে সোমবার সাসপেন্ড করা হয়। তাঁর আগে হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার এবং সুবীর ভৌমিককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত ‘তুঘলকি’ বলেও মন্তব্য করেন ওই চিকিৎসক। তাঁর দাবি, অমরেন্দ্র সরকারকেও একই ভাবে সুপারের পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত বৈঠক, আলোচনা করে এনসেফ্যালাইটিস রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন। শঙ্করবাবু বলেন, “দুঃখের বিষয় মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়মিত স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে কাজকর্ম তদারকি করবেন তা আমরা দেখতে পাই না।”