নার্সিংহোম-কর্মীর অপমৃত্যুতে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে

সুভাষ সরোবর থেকে শনিবার সকালে উদ্ধার করা হল এক ব্যক্তির দেহ। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সমীরকুমার রায় (৫৪)। বাড়ি বেলেঘাটার হরমোহন ঘোষ লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, সমীরবাবুর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, সমীরবাবু বেলেঘাটার একটি নার্সিংহোমে হিসেবরক্ষকের চাকরি করতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২২
Share:

সুভাষ সরোবর থেকে শনিবার সকালে উদ্ধার করা হল এক ব্যক্তির দেহ। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সমীরকুমার রায় (৫৪)। বাড়ি বেলেঘাটার হরমোহন ঘোষ লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, সমীরবাবুর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সমীরবাবু বেলেঘাটার একটি নার্সিংহোমে হিসেবরক্ষকের চাকরি করতেন। এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর পরিবারের তরফে ওই নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমীরবাবুর উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। রাতে বেলেঘাটা থানার ও সি অরুণ সাহা বলেন, “ওই নার্সিংহোমের মালিক ও তাঁর ছেলে কারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অনুসন্ধান চলছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, সমীরবাবুর বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী রয়েছেন। তাঁর এক বিবাহিত মেয়েও আছেন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোজের মতো শুক্রবারও সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কর্মস্থলে যান সমীরবাবু। তবে দুপুরে নিয়মমাফিক খেতে আসেননি তিনি। এর পরে বিকেল গড়িয়ে গেলে স্ত্রী শুভ্রা রায় ওই নার্সিংহোমে ফোন করেন। শুভ্রাদেবী বলেন, “নার্সিংহোম থেকে জানানো হয়, উনি দুপুর একটা নাগাদ বেরিয়ে গিয়েছেন।” সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষার পরে বেলেঘাটা থানায় একটি নিখোঁজ-ডায়েরি করেন তিনি।

Advertisement

শুভ্রাদেবী জানান, শনিবার সকালে পুলিশ তাঁদের জানায়, সুভাষ সরোবরে একটি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। ফুলবাগান থানায় গিয়ে সমীরবাবুর দেহ শনাক্ত করেন তাঁর একমাত্র মেয়ে দিয়া রায় সেন। তার পরেই বেলেঘাটা থানায় ওই নার্সিংহোমের মালিক ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন দিয়া। তাঁর অভিযোগ, মালিক ও তাঁর ছেলের ক্রমাগত অত্যাচারেই আত্মহত্যা করেছেন সমীরবাবু।

নার্সিংহোমে তাঁর সহকর্মীরা জানান, গত ১২ অক্টোবর নার্সিংহোমের অ্যাকাউন্টে টাকার হিসেবে গণ্ডগোল ধরা পড়ে। হিসেব রক্ষার দায়িত্ব সমীরবাবুর উপরে থাকায় তাঁকেই সন্দেহ করেন কর্তৃপক্ষ। তাঁর উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয় বলেও অভিযোগ। শুভ্রাদেবী বলেন, সেই ঘটনার পর থেকেই কথাবার্তা কমিয়ে দেন সমীরবাবু। ওই নার্সিংহোমের কর্মীরা জানিয়েছেন, কর্মস্থলে সত্‌ বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তাই এমন অভিযোগ হয়তো মেনে নিতে পারেননি।

নার্সিংহোমের এক কর্মী বলেন, “১২ অক্টোবরের পর থেকে রোজই নানা ধরনের হেনস্থার শিকার হতেন সমীরবাবু। শুক্রবারও তাঁকে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছিল।” নার্সিংহোম সূত্রের দাবি, এই গোটা ঘটনা নার্সিংহোমের অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানেন।

রাতে ওই শীর্ষ কর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছার কথা জানান। তবে কর্তৃপক্ষের হাতে সমীরবাবুর হেনস্থার কথা মেনে নিয়েছেন তিনি। ওই শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “সংস্থার অন্য এক কর্মী টাকা চুরি করেছে। এ কথা ওই কর্মী আমার কাছে স্বীকারও করেছেন। সমীরবাবুর সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই বলেও ওই কর্মী আমায় জানিয়েছিলেন।” কিন্তু এই কথা তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেননি কেন? তাঁর জবাব, “ঝামেলায় জড়াতে চাইনি। এমন হবে জানলে নিশ্চয়ই বলতাম।”

এ দিন ময়না-তদন্তের পরে সমীরবাবুর দেহ ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যান তাঁর সহকর্মীরা। তার পর স্থানীয় একটি ক্লাবেও তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই শীর্ষ কর্তার বক্তব্য জেনে শুভ্রাদেবীর আক্ষেপ, “অন্যের দায়, মারা গেলেন আমার স্বামী।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement