পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নজরদারির অভাব, পর্যাপ্ত শয্যার অভাব এমন নানা ঘাটতির জেরেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ হচ্ছে নবজাতকরা। তাতে শিশুদের একাংশ সেপ্টিসেমিয়ার মতো সংক্রমণেও আক্রান্ত হচ্ছে। এ সব সমস্যার কথাই উঠে এসেছে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেবের ডাকা জরুরি বৈঠকে।
নার্স বাড়ানো, সব সময় সাফসুতো রাখা, ওষুধ এবং সরঞ্জাম যথাযথ ভাবে সরবরাহ করা, জরুরি ভিত্তিতে সি-প্যাপ, রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার-এর ব্যবস্থা করা, বিশেষ ‘ব্লাড কালচার’ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা-সহ এসএনসিইউ’র ক্ষেত্রে ১১ টি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বৈঠকে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
১৪-২১ এপ্রিল এই হাসপাতালের এসএনসিইউ-তে ১৩ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে পাঁচটি শিশু সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিল। সোমবার রাতে আরও একটি শিশু মারা যায়। তবে চিকিৎসকদের দাবি, জন্মের পর থেকেই তার শরীরে হৃদস্পন্দন-সহ অন্য সাড়া মিলছিল না। চিকিৎসকদের সন্দেহ ওই শিশু মৃত অবস্থাতেই জন্মেছে। বৈঠক সেরে গৌতমবাবু বলেন, “শিশু মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। তবে কী কারণে তারা মারা গিয়েছে ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা হচ্ছে। নবজাতকদের অনেকেরই ওজন অস্বাভাবিক কম ছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে ওই ধরনের নবজাতকদের বাঁচানোর জন্যই এসএনসিইউ পরিষেবা ব্যবস্থা গড়া। তাই সদ্যোজাতদের মৃত্যু যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টাই করা হচ্ছে।” তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টাই যাতে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা থাকেন তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার, শিশু বিভাগের প্রধান মৃদুলা চট্টোপাধ্যায়, এসএনসিইউ’র দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক শঙ্খশুভ্র নাগ। তাঁরা জানান, অস্বাভাবিক কম ওজনের নবজাতকদের ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করেনা। সে জন্য সিপ্যাপ যন্ত্রের সাহায্যে ওষুধ দিতে হয়। ওই যন্ত্র না থাকায় সমস্যা হচ্ছিল। ফটোথেরাপি যন্ত্রের সাহায্যে জণ্ডিসের মতো রোগের চিকিৎসা হয়। ওই যন্ত্র ৬ টি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ২০ শয্যার এসএনসিইউ’ হলেও সেখানে গড়ে ৩০ জনের চিকিৎসা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এসএনসিইউ’র জন্য ২ টি সি-প্যাপ, ১২টি ওয়ার্মার, ১০ টি ফটোথেরাপি ২টি সিরিঞ্জ পাম্প যন্ত্র নতুন আনা হয়েছে। ওয়ার্মার এক সপ্তাহ আগে আনা হলেও কোম্পানির লোক এসে সেগুলি ব্যবহারের ব্যবস্থা না করে দেওয়ায় তা চালু করা যায়নি। বাকি যন্ত্রাংশ ১৭ এপ্রিল এসে পৌঁছেছে। দ্রুত সেগুলি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবেন বলে জানান।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশই জানিয়েছেন, ‘লেবার ওয়ার্ড’ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া প্রসূতি বিভাগে জায়গার অভাবে একটি শয্যায় দুই থেকে তিনটি সদ্যোজাত ও তাদের মায়েরা একসঙ্গে থাকেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে সেখানেও। সে কারণেও সদ্যোজাতরা অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। এর পর তাদের এসএনসিইউ’তে রেখে চিকিৎসা করা হয়। সেখানেও জায়গার অভাবে এক শয্যায় একাধিক শিশুকে রাখতে হয়। ওই ইউনিটে মায়েরা সদোজাতদের কাছে গেলে তাঁদের বিশেষ পোশাক পরে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে শিশুদের ধরতে হয়। সে সব নিয়ম মানা হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। তাতে এসএনসিইউ-র মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তা থেকে আক্রান্ত হয় নবজাতকেরা। এ সমস্ত ক্ষেত্রে নজরদারির কড়া ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এ দিন থেকে এক জন নিরাপত্তা কর্মী এবং স্বাস্থ্য সহায়ক এসএনসিইউ’তে বহাল করা হয়। এসএনসিইউ’র ভিতরে কাজকর্মে নজরদারির জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কথাও জানানো হয়েছে।