কিডনির জটিল সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের জন্য কেনা হয় ডায়ালিসিস মেশিন। কিন্তু প্রায় বছর দু’য়েক কেটে গেলেও প্রথমে উপযুক্ত টেকনিশিয়ানের অভাবে মেশিনগুলির ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ অতিক্রান্ত হয়ে যায়। পরে চলতি বছরের ১০ মার্চ পিপিপি মডেলে ডায়ালিসিস ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ফের সেই কাজও থমকে গিয়েছে টেন্ডার ডাকা নিয়ে বেশকিছু প্রশাসনিক গেরোয়। আর তার জেরে রোগী ও চিকিত্সকদের একাংশের ক্ষোভ, কিডনির ভাল চিকিত্সা পেতে গেলে ভরসা করতে হচ্ছে সেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপর।
দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক, পেশায় চিকিত্সক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০১৩ সালের প্রথম দিকে মহকুমা হাসপাতালে একাধিক মূল্যবান যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা করে দেন বলে জানা গিয়েছে। ওই সময় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে কেনা হয় ডায়ালিসিস মেশিন। বিধায়ক নিখিলবাবু জানান, কিডনির জটিল রোগে ভোগা দুঃস্থ মানুষজন যাতে বিনামূল্যে ডায়ালিসিসের সুযোগ পান সে জন্যই এমন উদ্যোগ। কিন্তু উপযুক্ত টেকনিশিয়ান না মেলায় ইউনিটটি চালু করা যায়নি। যন্ত্রগুলি পড়ে থাকতে থাকতে ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ও শেষ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় সরব হন হাসপাতালের চিকিত্সক ও রোগীদের একাংশ। হাসপাতাল সুপারকেও বেশ কয়েকবার সমস্যা সামাধানের আর্জি জানিয়ে আবেদন করা হয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরেও আনা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাতেও সুরাহা না হওয়ায় নিখিলবাবু ‘ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস’-এ সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়ে একাধিকবার ফ্যাক্স পাঠান। গত বছর রাজ্যের বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে কমিটির সামনেও ডায়ালিসিস ইউনিট চালুর দাবি জানান নিখিলবাবু ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তারপরেও কোনও ফল হয়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের অভিযোগ।
এর জেরে সমস্যায় পড়ছেন অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া রোগীরা। স্থানীয় কালীনগরের বাসিন্দা, পেশায় দর্জি ব্যবসায়ী আশিস নাগ জানান, তাঁর স্ত্রী বছর দু’য়েক ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা না মেলায় বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করাতে হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পিপিপি মডেলে ডায়ালিসিস ইউনিট চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঠিক হয়, ৫ শয্যার ডায়ালিসিস ইউনিটটি হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করে চালাবে বেসরকারি কোনও সংস্থা। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি আগ্রহী সংস্থাগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কীভাবে ইউনিটটি চালানো যাবে সে ব্যাপারে সংস্থাগুলিকে জানানো হয় ওই বৈঠকে। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাগুলির কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মেলেনি বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস তা স্বীকার করেননি। দেবব্রতবাবু বলেন, “আগের বার টেন্ডার নিয়ে বেশকিছু প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকায় তা বাতিল করতে হয়। নতুন করে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ১২ মার্চ টেন্ডার খোলা হবে। আশা করা যায় মার্চের মধ্যেই ইউনিটটি চালু করতে পারব আমরা।” বিধায়ক নিখিলবাবুরও আশা, “ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হলে দুঃস্থ রোগীরা উপকৃত হবেন। আশা করি তা দ্রুত চালু হয়ে যাবে।”