বেওয়ারিশ দেহের দায় ঘাড় থেকে নামতে চিকিৎসাধীন রোগী মৃত্যুতেও ময়নাতদন্তের আবেদন জানাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!
রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং গ্রামীণ হাসপাতালে। এ দিন ভোরে ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মীরাণি সিংহের (৫০)। মৃতার সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায়নি। দিন তিনেক আগে শরীরে ঘা ও নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করেন পিংলার কয়েক জন স্থানীয় যুবক। কিন্তু এ দিন ভোরে ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যুর পরে সেই দেহ নিতে আসেনি কেউ। অগত্যা দেহ স্থানান্তরে ময়নাতদন্তকে হাতিয়ার করল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ! কেন? জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরার যুক্তি, রোগীর পরিজনেরা কেউ দেহটি নেয়নি। রোগীও ভর্তির সময়ে অচৈতন্য ছিলেন। তা ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বোঝা যায়নি। তাই ময়নাতদন্তের জন্য বলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে নারায়ণগড়ের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে থেকে অজ্ঞাত কারণে ওই মহিলা পিংলায় চলে আসেন। সেই সময়ই পিংলারই এক ব্যক্তিকে বিয়েও করেন। তার কয়েক বছরের মধ্যেই মহিলার দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে একা হয়ে যান তিনি। এর পর বয়সের ভারে দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন ওই মহিলা। সম্প্রতি তাঁর দেহে ঘা থেকে পচন ধরা শুরু হয়। তা দেখে দিন তিনেক আগেই পিংলার করকাইয়ের কিছু যুবক তাঁকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন কেউই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। রবিবার সকালে মৃত্যু হয় ওই তাঁর।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিসের রোগী লক্ষ্মীরানিদেবীর দেহে ঘা থেকে পচন ধরেছিল। চিকিৎসকদের কথায়, একেবারে শেষ পর্যায়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসায় আর তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এ দিকে, রবিবার মৃত্যুর ঘণ্টা দু’য়েক পরেও ওয়ার্ডের বিছানা থেকে দেহ সরিয়ে না নেওয়ায় ক্ষোভ জানান অন্য রোগীর পরিজনেরা। পরিস্থিতি সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ পুলিশের হেফাজতে নিতে বলে। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় মৃতের দেহ পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়নি।
এর পরেই ব্লক প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ময়নাতদন্তের আবেদন জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সবং থানা দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি মানছেন, “মৃতার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দেহ নিতে চাননি। তাই মৃতদেহটি কে নেবে, এই নিয়ে জটিলতায় বাধ্য হয়েই সকলের মত নিয়ে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।”