ডেঙ্গির কোনও প্রতিষেধক নেই, নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, উপসর্গও নানা রকম নেই। তা হলে এর থেকে মুক্তির উপায় কি?
প্রতিষেধক না থাকলেও ম্যালেরিয়ার ওষুধ রয়েছে। তাতে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াও সেরে যায়। পতঙ্গবাহিত কালাজ্বরের জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট ওষুধ। কিন্তু এদের তুলনায় ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার বেশি হলেও এখনও এর জন্য ওষুধ বেরোয়নি। তাই ডেঙ্গির মরসুমে অনেক চিকিৎসকের রাতের ঘুম চলে যায়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে প্রচুর। কখন লিভারের উৎসেচক কমবে, প্যাংক্রিয়াস বিকল হয়ে পড়বে বা শ্বেতকণিকা কমতে শুরু করবে তা বোঝার উপায় নেই। আবার সেপসিস হয়ে রোগীর অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে কিছু করার থাকে না। তাই ডেঙ্গি শনাক্তকরণে দেরি করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
কী ভাবে চটজলদি ধরা যাবে ডেঙ্গির জীবাণু? ক’বছর ধরে ডেঙ্গির চিকিৎসায় যুক্ত চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে এনএস-ওয়ান (নন স্ট্রাকচারাল প্রোটিন) পরীক্ষার কোনও জুড়ি নেই। সংক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রান্তের রক্তে ওই প্রোটিন শনাক্ত করা যায়। দু’দিন পরে ওই প্রোটিনটি আর পাওয়া যায় না। পরীক্ষার ফল পজিটিভ হলে চিকিৎসা শুরু করা যায়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকাগুলিতে ডেঙ্গিতে মৃত্যু ঠেকাতে এটাই সব থেকে কার্যকর পদ্ধতি।
এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, যাঁদের এনএস-ওয়ান পরীক্ষায় প্রোটিনটি ধরা পড়ে, সাত দিন পরে তাঁদের শতকরা ৯৫ শতাংশের রক্তে আইজিএম পরীক্ষায় জীবাণু ধরা পড়ে। দ্বিতীয়ত, এলাইজা পদ্ধতিতে ডেঙ্গির জীবাণু চিহ্নিত করতে সংক্রমণের পরে সাত দিন অপেক্ষা করতে হয়। যে সব ডেঙ্গি-জীবাণু অতিসক্রিয় তারা চিকিৎসা শুরুর জন্য ওই সাত দিন সময়ও দেয় না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই রোগীর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকার (যেমন কলকাতা) বাসিন্দারা জ্বর হওয়ার দু’দিনের মধ্যেই ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির পরীক্ষা (এনএস-ওয়ান) করান। এক চিকিৎসক বলেন, কেউ কেউ রক্ত পরীক্ষা করাতে চান না, সে ক্ষেত্রে তাঁদের কড়া পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সাধারণত ডেঙ্গির জ্বর প্যারাসিটামলে কমে না। তাই তিন-চার দিনেও প্যারাসিটামলে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে।
অনেক সময়ে ডেঙ্গির জ্বর এমনিতেই কমে যায়। কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হয় জ্বর কমার পরে। এক চিকিৎসক বলেন, “বহু দিন ধরে ডেঙ্গি রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি জ্বর কমার পরেই তাঁদের রক্তে অণুচক্রিকা কমতে শুরু করে। অণুচক্রিকা যে কমছে তা বোঝার উপায় থাকে না। হেমারেজিক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে অবশ্য এই পর্যায়ে শরীরের নানা স্থান থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করে। বাকি ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গ দেখে বুঝতে হয়। মাথায়-গায়ে-হাত-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, গলা শুকিয়ে আসা, পেট খারাপ না সারা, পেটে জল জমে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, যদি এক দিনে অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যায়, মূত্রের রং হলুদ, পেটে জল জমা, শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত বেরোনোর সমস্যা হয় তা হলে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে চিকিৎসক রোগীকে দেখবেন তাঁর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।