পথ দেখিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এ বার বড় হাসপাতালগুলির পালা।
আংশিক নয়, স্বাস্থ্য ভবনে ১০০ শতাংশ বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রক্রিয়া চালু করে কর্মীদের উপস্থিতির ক্ষেত্রে ‘রেকর্ড’ সাফল্য মিলছে বলে দাবি স্বাস্থ্যকর্তাদের। তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ বার তাঁরা কলকাতার বড় হাসপাতালগুলিতে সিনিয়র ডাক্তারদের জন্য ওই পদ্ধতি চালু করতে চান। বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স-এর ভিত্তিতেই মাসের শেষে স্থির হবে ছুটি এবং বেতনও। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, চালু হওয়ার পরে প্রথম দু’মাস নিয়মকানুন কিছুটা শিথিল থাকবে। তৃতীয় মাস থেকে সরকারি নিয়ম মেনেই ছুটি এবং প্রয়োজনে বেতন কাটার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর অন্যতম ধাপ হিসেবে বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স প্রথা চালু করেছিল রাজ্য সরকার। সময় মতো হাজিরা এবং নির্ধারিত সময়ের পুরোটাই যাতে কর্মীরা অফিসে হাজির থাকেন, তা নিশ্চিত করতে ওই পদ্ধতি চালু হয়। ২০১২-র এপ্রিলে স্বাস্থ্য দফতরে এর পাইলট প্রোজেক্ট শুরু হয়। প্রথমে আংশিক ভাবে স্বাস্থ্য ভবন এবং পরে বিভিন্ন হাসপাতালেও ধাপে ধাপে কয়েকটি বিভাগে এই পদ্ধতি চালু হয়ে যায়। ডাক্তারদের একাংশকেও তাতে সামিল করা হয়েছিল। বাছাই করা কয়েকটি হাসপাতালের গ্রুপ-এ কর্মীদেরও এর আওতায় আনা হয়। গোড়ায় কিছু প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তৈরি হলেও পরে কর্মীদের অধিকাংশই বিষয়টি মেনে নেন। কিন্তু সেটা নামমাত্র। তার ভিত্তিতে মাসান্তে তাঁদের হাজিরা এবং বেতনের বিষয়টি স্থির হয় না। ফলে যে কেউ অল্প সময় থেকেও মাসান্তে পুরো বেতন পেয়ে যান। স্রেফ কাগজে-কলমে একটা নিয়ম হয়েই থেকে গিয়েছে ওই পদ্ধতি।
বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স-এর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের তরফে যে কখনওই খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়নি তা কর্তৃপক্ষও স্বীকার করে নিয়েছেন। এই বিষয়টিতেই এ বার রাশ টানতে চায় স্বাস্থ্য দফতর।
কিন্তু এ বার কেন ডাক্তারদের হাজিরার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “দুপুরের পরে অধিকাংশ বিভাগের ডাক্তারদের হাসপাতালে পাওয়া যায় না বলে আমাদের কাছে খবর। এক একটি মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিভাগকে এক সঙ্গে এর আওতায় আনতে সময় লাগবে। তাই ডাক্তারদের হাজিরার ক্ষেত্রে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব।”
স্বাস্থ্য ভবনে এই প্রক্রিয়া চালু করে হাতেনাতে ফল মিলেছে। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “আগে দুপুর বারোটার আগে স্বাস্থ্য ভবনের অধিকাংশ ঘরই খালি থাকত। আবার বিকেল তিনটে বাজতে না বাজতেই বেশিরভাগ কর্মী বেরিয়ে যেতেন। এখন ছবিটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। সকাল দশটায় স্বাস্থ্য ভবনে ঢোকার ভিড়। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বেরনোর ভিড়। মাঝখানের সময়টায় সকলে কাজ করেন কি না সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না, কিন্তু হাজিরাটুকু অন্তত নিশ্চিত করা যাচ্ছে, সেটাই বা কম কী?”
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন, “স্বাস্থ্য ভবনে এখন সওয়া দশটার মধ্যে না পৌঁছলে ‘লেট মার্ক’ পড়ে। পর পর তিন দিন দেরি হলে ছুটিও কাটা যায়। সকলেই তাই হাজিরার বিষয়ে খুব সতর্ক।” স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স ব্যবস্থা যাতে স্রেফ একটি খেলনা হয়েই থেকে না যায়, তাই আমরা স্বাস্থ্য ভবনে ১০০ শতাংশ প্রয়োগ করেছি। এখন ওই পদ্ধতি অনুযায়ীই হাজিরার হিসেব রাখা হচ্ছে। এ বার কলকাতার বড় হাসপাতালগুলির সিনিয়র ডাক্তারদের জন্যও এই প্রক্রিয়া চালু হবে।”
কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির কর্তারা অবশ্য এই খবরে তেমন আশাবাদী হতে পারছেন না। এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “নিয়ম যেমন থাকে, তা ভাঙার ছলও থাকে। বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স চালু করে কতটা লাভ হবে জানি না। কারণ এখন আমরা দেখছি বহু ডাক্তার সকালে আসেন, ঘণ্টা তিনেক থেকে তার পরে বেরিয়ে যান, বিকেলে আবার এসে হাতের ছাপ দিয়ে নিয়মরক্ষা করেন। মাঝখানের সময়টা তাঁরা কোথায় থাকেন, তার হিসেব কে রাখে? ভবিষ্যতেও এটা বন্ধ করা যাবে কী ভাবে?”