এম আর বাঙুর

জেরবার হাসপাতালই আগলে রেখেছে মনোরোগী প্রসূতিকে

প্রসূতি ওয়ার্ডে তাঁকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ অন্য প্রসূতিদের নিরাপত্তা তাতে বিঘ্নিত হচ্ছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে তাঁকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ সেখানে তাঁর চিৎকার ও অস্বাভাবিক আচার-আচরণে বিরক্ত অন্য রোগীরা তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় করে দিচ্ছেন। তা হলে তিনি যাবেন কোথায়? বছর ত্রিশের এক মানসিক রোগিণীকে নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন এম আর বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁর দেখভালের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরাই।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৬
Share:

প্রসূতি ওয়ার্ডে তাঁকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ অন্য প্রসূতিদের নিরাপত্তা তাতে বিঘ্নিত হচ্ছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে তাঁকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ সেখানে তাঁর চিৎকার ও অস্বাভাবিক আচার-আচরণে বিরক্ত অন্য রোগীরা তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় করে দিচ্ছেন। তা হলে তিনি যাবেন কোথায়? বছর ত্রিশের এক মানসিক রোগিণীকে নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন এম আর বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁর দেখভালের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরাই।

Advertisement

রাস্তা থেকে উদ্ধার করে কালীঘাট থানার পুলিশ তাঁকে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা বোঝেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে বোঝা যায়, প্রসবের আরও মাসখানেক বাকি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে কোনও মানসিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করাটা মানবিক কারণেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আটকাচ্ছে। কারণ মানসিক হাসপাতালে প্রসবের সময়ে চিকিৎসাগত সহায়তা সে ভাবে মিলবে না। এক অসহায় মহিলাকে ওই পরিস্থিতিতে ছেড়ে দিলে মা ও শিশুর মধ্যে যে কোনও কারওর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের অপেক্ষাকৃত খালি একটি ওয়ার্ডে পর্দা ঘিরে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে তাঁকে রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই অস্থির হয়ে উঠছেন ওই তরণী। যাকে সামনে পাচ্ছেন, আঁচড়ে-কামড়ে দিচ্ছেন। উঁচু জায়গায় উঠে লাফালাফি করছেন। নিজের পেটে ঘুষি মারছেন। এতে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এই কারণেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর উপরে নজরদারির দায়িত্ব দিয়েছেন সহকারী সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায় এবং কয়েক জন রোগী সহায়কের উপরে। ২৪ ঘণ্টা পালা করে তাঁরাই দেখভাল করছেন ওই তরুণীর। তাঁদের কথায়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতি এবং কর্মীদের দুর্ব্যবহারে অভিযোগ অহরহ সামনে আসে। কিন্তু হাসপাতালের মানবিক মুখও রয়েছে। সেটাই আমরা সামনে আনতে বদ্ধপরিকর।

Advertisement

ওই রোগিণী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অহরহ নানা জিনিস চেয়ে বায়নাও করছেন। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ জননী ও শিশু সুরক্ষা যোজনার তহবিল থেকে হলেও রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের নির্দেশে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সমিতির খাত থেকেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা আগে কখনও হইনি। তাই পুরনো কোনও উদাহরণ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সবটাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।”

ওই তরুণীর বাড়ি কোথায়, কী ভাবে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন, সে সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তবে যে চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, তরুণীর শরীরের বিভিন্ন গোপন অঙ্গে ক্ষত রয়েছে, যার বেশির ভাগই টাটকা ক্ষত। অর্থাৎ, নিয়মিত নানা শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে।

এক চিকিৎসক বলেন, “প্রসবের পরে মেয়েটির লাইগেশন করিয়ে দেওয়াটা জরুরি। কিন্তু লাইগেশনে মেয়ের সম্মতির প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মেয়েটির সিদ্ধান্ত যে হেতু গ্রাহ্য হবে না, তাই সাইকিয়াট্রিক বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বোর্ড বসানোর জন্য প্রসবের পরে কোনও মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। যে সন্তানের জন্ম হবে, কোনও সরকারি সংস্থার হাতে তাকে বড় করার দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।”

হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজ সামলে এই সব দায়িত্ব তাঁরা নেবেন কী ভাবে? সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের জবাব, “দায়িত্ব না নিয়ে উপায় নেই। আমরা তো ওঁকে ছেড়ে দিতে পারি না। মেয়েটি যখন-তখন খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের নার্সিং সুপার, সহকারী সুপার ওকে জোর করে খাওয়াচ্ছেন। এক জন প্রসূতির এই যত্নটা দরকার। কিন্তু এক মাস সময়টা বেশ দীর্ঘ। কী ভাবে তা কাটবে, আমরাও সন্দিহান।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement