এক দিকে, হাসপাতালের বর্তমান পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো দিকে, পরিকাঠামোর অভাবে ভুগতে থাকা সেই একই হাসপাতালকে কখনও ‘জেলা হাসপাতাল’ কখনও ‘মাল্টিফাংশনাল সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল’, কখনওবা ‘মেডিক্যাল কলেজে’ উন্নীত করার কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ, যত দিন যাচ্ছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থকর্মী ও পরিকাঠামোর অভাবে ওই হাসপাতালটির মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ রকমই নানা সমস্যায় ভুগছিল রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল। এ বার সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেল আরও একটি জরুরি পরিষেবা ‘কোল্ড অপারেশন’। চিকিৎসকের অভাবেই ওই পরিষেবা বন্ধ করা হল বলে জানিয়ে শনিবারই জরুরি বিভাগে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে মাথায় হাত পড়েছে বহু রোগীর। ক্ষোভে ফেটে পড়েছে অনেকেই।
হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, হাসপাতালে দু’জন অ্যানাসথেটিস্ট চিকিৎসক ছিলেন। তার মধ্যে থেকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে চিকিৎসক পবিত্র বিশ্বাসকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সুবোধবাবুর দাবি, “হাসপাতালে মাত্র এক জন অস্থায়ী অ্যানাসথেটিস্টের পক্ষে জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, জরায়ুতে টিউমার, জরায়ুর অন্য কোনও অস্ত্রোপচার বা অন্য যাবতীয় কোল্ড অপারেশন করা সম্ভব নয়। এর জন্য সাময়িক ভাবে ওই অপারেশন বন্ধ রাখা হয়েছে।” নতুন কোনও নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোল্ড অপারেশন চালু হবে না বলেও তিনি সাফ করে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে সদর হাসপাতালে কোল্ড অপারেশন করানোর জন্য রোগীদেরকে নতুন করে আর দিন দেওয়া হচ্ছে না। পুরনো যে সমস্ত রোগীর দিন দেওয়া হয়েছিল, তাঁদেরও বুঝিয়ে বলা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধীন রাজ্যের ৬টি জেলা হাসপাতালে ‘ডিপ্লোমেট অফ ন্যাশন্যাল বোর্ড কোর্স (জেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স) চালু হয়েছে। ওই কোর্স চালু করতে গিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যভবন থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। সাময়িক ভাবে ওই পরিষেবা না মেলার কথা নোটিস দিয়ে জানিয়েও দেওয়া ফলে পরিষেবা নিতে এসে হয়রান হচ্ছেন রোগী থেকে রোগীর আত্মীয়পরিজন। একই চিত্র শুরু হয়েছে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালেও। অথচ আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর আগে এই হাসপাতালকে প্রথমে জেলা হাসপাতাল, পরে পৃথক ‘স্বাস্থ্য জেলা’ এবং তারও পরে মাল্টিফাংশনাল সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল ঘোষণা করা হয়। এমনকী, মাসখানেক আগে এখানে ওই হাসপাতালকে ঘিরে মেডিক্যাল হাসপাতাল গড়ার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অভিযোগ, একজন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিয়োগ (নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে চারজন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিয়োগ হওয়ার কথা) হওয়া ছাড়া হাসপাতালের পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়নি। এমনিতেই মহকুমা হাসপাতাল থেকে জেলা হাসপাতালে ‘উন্নীত’ হওয়ার পরে চার জন চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনকে স্বাস্থ্য ভবন সরকারি নির্দেশ মোতাবেক তুলে নিয়েছে। তাঁদের অন্যতম স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মানস রায়। সব মিলিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য পরিকাঠামোর অভাবে এই হাসপাতালে দিন দিন স্বাস্থ্য পরিষেবার মান কমছে বলেই অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকেই কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তোলা হয়েছে। সাময়িক ভাবে কিছু দিন সমস্যা হবে। জুলাই মাসেই রাজ্যে কিছু চিকিৎসক নিয়োগ হবে। সেই সময়ে আশা করছি, বীরভূম জেলায় ১৫০ জন চিকিৎসকের শূন্যপদ পূরণ করা হবে।” অন্য দিকে, তৃণমূল প্রভাবিত প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের বীরভূম জেলা সভাপতি দেবব্রত দাসের দাবি, “শীঘ্রই রামপুরহাটে এক জন অ্যানাসথেটিস্ট চিকিৎসক চিকিৎসক দেওয়া হবে।”