এইচআইভি আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত যে ওষুধ খান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যান্টি রেট্রভাইরাল ট্রিটমেন্ট সেন্টারে তা মজুত না থাকায় অন্য ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল সম্প্রতি। আচমকা এ ভাবে ওষুধ বদলে দেওয়ায় বিভিন্ন জেলার অন্তত ২০ জন রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। যার জেরে, হাসপাতালে অনিয়মিত ওষুধ সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এইচআইভি আক্রান্তদের সংগঠনগুলির একাংশ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে বিভিন্ন জেলার এইচআইভি আক্রান্ত অন্তত ৬ হাজার রোগী চিকিত্সা পরিষেবা নেন। প্রতি মাসের ওষুধ তাদের সরবরাহ করা হয়। ইসলামপুরের বাসিন্দা, এক এইচআইভি আক্রান্তের অভিযোগ, তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এআরটি সেন্টার থেকে ওষুধ নেন। তাঁকে ‘টিএলএন’ (টেনোফোভির ডিসপ্রক্সিল, ল্যামিভুডিন এবং নেভিরাপিন) দেওয়া হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ওষুধ নিতে এলে চিকিত্সক তাকে ‘টিএলই’ (টেনোফোভির ডিসপ্রক্সিল, ল্যামিভুডিন এবং ইফাভিরেন জেড) ওষুধ দেন। নেভিরাপিনের বদলে ইফাভিরেন খাওয়াতেই তাঁর শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। মাথা ঘুরতে থাকে। বিষয়টি সংগঠনের সদস্যদের ফোনে জানালে তাঁরা তাঁকে ওষুধ খেতে নিষেধ করেন। সেই মতো এ দিন হাসপাতালে গিয়ে সমস্যার কথা জানালে তাঁকে ইফাভিরেনের জায়গায় আগের ওষুধ নেভারাপিন সরবরাহ করা হয়। একই অভিজ্ঞতা শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির এক মহিলারও। তিনি জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট ওষুধ বদলে তাঁকে অন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। ওই ওষুধ খেলে সমস্যা হতে পারে আঁচ করে, সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ওই মহিলা বদলে দেওয়া ওষুধ খাননি। আগের ওষুধ তাঁর কাছে ছিল। সেগুলিই খেয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, বদলে দেওয়া ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন একতিয়াশালে সংগঠনের এক মহিলাও। জলপাইগুড়ির সোসাইটি ফর পিপলস লিভিং উইথ এইচআইভি এডস-এর অন্যতম কর্মকর্তা মামনি রায় বলেন, “জলপাইগুড়িতে তাঁর সংগঠনের অন্তত ৭/৮ জন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা অন্য ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের ফোন করছেন।”
এআরটি সেন্টারের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক দেবাশিস চক্রবর্তী সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “দিন পনেরো একটি বিশেষ ওষুধ (নেভিরাপিন) ছিল না। তার পরিবর্তে দেখেশুনেই অন্য ওষুধ (ইফাভিরেন জেড) দেওয়া হচ্ছিল। তাতে রোগীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা নয়। তবে সমস্যা হেল নিশ্চই দেখা হবে।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “কী হয়েছে,বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”
এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ রোগীদের সংগঠনের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, রোগীদের কারও কিছু হলে, তার দায় কে নেবেন? সেন্টারের চিকিত্সা পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
এই খবর শুনে উদ্বিগ্ন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
চিকিত্সকদের একাংশ অবশ্য দাবি করেছেন, এইচআইভি আক্রান্তদের ওষুধ এ ভাবে বদলে দেওয়া যায় না। তাঁরা যে ওষুধ খান সেটাই নিয়মিত খাওয়ার কথা। না হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চিকিত্সক বিভূতি সাহার বক্তব্য, ওষুধ বদলালে বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ঘুম পাওয়া বা গা গোলানোর মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
বেঙ্গল নেটওয়ার্ক অব পিপলস লিভিং উইথ এইচআইভি এড্স-এর অন্যতম কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস বলেন, “এ ভাবে ওষুধ বদলে দিলে রোগীর হিতে বিপরীত হতে পারে। এইচআইভি আক্রান্তদের জীবন নিয়ে এ ভাবে খেলার অধিকার কারও নেই। সরকারি হাসপাতালে কেন ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা আগে থেকে করা হবে না? এতে কারও জীবন গেলে তার দায় কে নেবেন?” তাঁর অভিযোগ, দায় এড়াতে অনেক ক্ষেত্রে চিকিত্সক সঠিক ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। কিন্তু যেখান থেকে ওষুধ সরবরাহ করা হয় সেখানে মৌখিক ভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে মজুত না থাকা ওষুধের পরিবর্তে কোন ওষুধ দেওয়া হবে। অন্য সংগঠন সঙ্ঘবন্ধের অন্যতম কর্মকর্তা সচিন দাসের অভিযোগ, “হাসপাতালে চিকিত্সকরা নিয়মিত থাকেন না। চিকিত্সক না থাকলে অনেক সময়ে ডাক্তারির ছাত্রদের পাঠানো হয়। তাঁদের অনেকে ভুল ওষুধও লেখেন।”