জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে ওষুধ কেনা নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগকে ঘিরে বিতর্কে জড়িয়েছেন হাসপাতালের সুপার নিজেই।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া প্রসূতি ও নবজাতকদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এই প্রকল্প থেকেই নিখরচায় সরবরাহ করা হয়। এই ওষুধ কেনার অর্থ সরবরাহ করে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন। অভিযোগ, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ লক্ষ টাকার ওষুধ কোনও টেন্ডার ছাড়াই কেনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই বেনিয়েমের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গত সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এক পদস্থ আধিকারিক এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে ওষুধ কেনা সংক্রান্ত বেনিয়মের বিষয়টি তাঁদের নজরে আনেন তিনি। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছেও সবিস্তারে জানিয়েছেন।
উত্তমবাবুর বক্তব্য, “প্রসূতি ও নবজাতকদের জন্য ওষুধ লাগলে প্রথমে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের স্টোর থেকেই চেয়ে পাঠাতে হবে। সেখানে না পাওয়া গেলে হাসপাতাল চত্বরে যে ফেয়ার প্রাইজ ওষুধের দোকান রয়েছে সেখান থেকে পাওয়া যায় কি না তা দেখতে হবে। সেখানেও না পাওয়া গেলে কোনও টেন্ডার ছাড়াই হাসপাতাল সুপার প্রতিদিন সবার্ধিক দশ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে পারেন। তার বেশি টাকার ওষুধ কিনতে হলে সুপারকে টেন্ডাররে মাধ্যমে কিনতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, জরুরি ভিত্তিতে যে সমস্ত ওষুধ পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কিনেছে সেগুলির বেশির ভাগই কেনা হয়েছে হাওড়া ও কলকাতার কয়েকটি ওষুধের দোকান থেকে।” তাঁর দাবি, চলতি অর্থবর্ষে জুন মাস পর্যন্ত জননী শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪২ লক্ষ টাকার ওষুধ কিনেছে। উত্তমবাবুর অভিযোগ, “সুপার নিজস্ব ক্ষমতাবলে প্রতিদিন দশ হাজার টাকার ওষুধ কিনতেই পারেন। কিন্তু সেটা হবে ‘লোকাল পার্চেজ’। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কলকাতা ও হাওড়ার একাধিক দোকান থেকে অনেক ওষুধ কেনা হয়েছে। এত দূরের দোকান থেকে পুরুলিয়ার হাসপাতালের জরুরি ওষুধ কেনা হচ্ছে। ফলে কিছু প্রশ্ন তো উঠছেই। কারও স্বার্থরক্ষার জন্য কি পুরুলিয়ার বদলে কলকাতা বা হাওড়া থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে? আর এই ওষুধগুলি তো ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকেও কেনা যেতে পারত। সেক্ষেত্রে অনেক কম টাকায় এই ওষুধ কেনা যেত। তা হয়নি।”
গত ৩০ অগস্ট জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে ওষুধ কেনা সংক্রান্ত এই বেনিয়মের বিষয়টি ওঠে। উত্তমবাবু বলেন, “ওই বৈঠকে বিষয়টি উঠেছিল। কিন্তু তা ধামাচাপা পড়ে যায়। আমি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কাছে গোটা বিষয়টি জানিয়ে তদন্ত দাবি করেছি। পাশাপাশি আমি রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও এই বেনিয়েমের বিষয়টি জানিয়ে তদন্ত দাবি করেছি। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে জঙ্গলমহলের জেলাগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করার জন্য এতটা আন্তরিক সেখানে এই বেনিয়মে কেউ জড়িত থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। স্বচ্ছতার স্বার্থেই অভিযোগের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।” অবশ্য এই অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “এ রকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যতে কীভাবে এই প্রকল্পে ওষুধ কিনতে হবে তা হাসপাতালের সুপারকে সেই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন অবশ্য দাবি করেন, “ওই অভিযোগ ঠিক নয়। সুপার প্রয়োজন মনে করলে ওষুধ কিনতেই পারেন। এ ক্ষেত্রেও সে ভাবেই কেনা হয়েছে।”